পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, দ্বিতীয়াংশ).djvu/১০৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৮ম সংখ্যা । ] এত উৎকৃষ্ট ছিল যে সেরূপ হীরা অনেক ধনশালী মহাজনের “গৃহে থাকে না। . r রাত্রি হইলে সিপাহীরা আসিয়া দেখিল শীকার তাছাদের হস্তচ্যুত হইয়াছে। দেখিয়া উন্মত্ত সিপাহীর বাবুর উপর একেবারে খড়গহস্ত হইয়া উঠিল । তিনি শিষ্ট বচনে কিঞ্চিৎ ভৎসনার সহিত তাছাদের এরূপ বুঝাইলেন যে তাহারা আর দ্বিরুক্তি না করিয়া নত মস্তকে চলিয়া গেল। পরদিন তিনি ঐ সমস্তু দ্রব্য কাপ্তেন সেবিয়ার সাহেবকে দিলেন। উদারচেতা সেবিয়ার কিছুই লইলেন না, বলিলেন “এ সকল দ্রব্য জগদীশ্বর তোমায় সদগুণের পুরস্কার স্বরূপ দিয়াছেন, তুমিই ইহা গ্রহণের উপযুক্ত।” রাসবেহারী বাবু বলিলেন “আপনি এসকল লইয়া চলুন, সমস্তই আপনার, আমাকে যাহা ইচ্ছা করিয়া দিবেন, তাহাই গ্রহণ করিব।” সেবিয়ার সাহেব বলিলেন, “কোন চিন্তা নাই ; আর এক দিন পরে অর্থাৎ ৮ই জুনে ট্রেজরি খুলিবে । খাজনায় জমা করিয়া দিলে আর কোন ভয় থাকিবে না। এখন তুমি নিজের কাছে রাথ।” ৭ই জুনের দিন কোন মতে কাটিল । গভীর রাত্রে যুদ্ধের সঙ্কেত-স্বচক ভেরী ধ্বনি হইল। আর সমস্ত সিপাহীগণ আপন আপন স্থান হষ্টতে আসিয়া একস্থানে সমবেত হইল। ঐ দিবস এক ব্যক্তি একখানা চিঠি লইয়া একজন সিপাহীকে দিয়া গিয়াছিল । পরে জানা গিয়াছিল দিল্লীর বিদ্রোহী সিপাহীগণ এখানকার সিপাহীদের নিজদলে যোগ দিতে লিথিয়াছিল । সেই পত্রানুযায়ী তাহার ভিতরে ভিতরে আপনাদের ইচ্ছামত সমস্ত বন্দোবস্ত ঠিক করিয়া গভীর নিশীথে “চলরে দিল্লী চলরে দিল্লী” বলিয়া উন্মত্ত হইয়া উঠিল। তুমুল কোলাহলে সাহেবেরা জাগরিত হইয়া চমকিত হইলেন। অধ্যক্ষ র্যাণ্ডেল বলিলেন, “কাহার আজ্ঞায় যুদ্ধসজ্জায় সজ্জিত হইয়া ইহারা দিল্লী চলিল ইহাদের ভেরী বাজাইতেই বা কে বলিল ?” রাসবেহারী বাবুও সেখানে উপস্থিত হইয়াছিলেন। তিনি বলিলেন, “দেখিতেছেন না, ইহার ক্ষেপিয়াছে। এখন আর ইহাদের কিছু বলিবেন না । আপনার শীঘ্র এখান হইতে দিল্লী প্রস্থান করুন। আমি পশ্চাৎ যাইতেছি।” কর্ণেল বলিলেন, “যদি একশত সৈন্ত আমার পক্ষে হয় আমি উহাদের নয়শতকে পরাস্ত করিতে পারি।” রাসবেহারী বাকু তাহাকে সে সঙ্কল্প হইতে নিরস্ত হইতে সিপাহীবিদ্রোহের সময় প্রবাসী বাঙ্গালী । '886. বলিলেন। কারণ তখন আর সে চেষ্টা বৃথা। রাসবেহারী বাবু পুনঃ পুনঃ বলাতে কর্ণেল র্যানডেল কাপ্তেন সেবিয়ার ও আরও ৫৭ জন ইংরাজ কৰ্ম্মচারী সেই রাত্রে দিল্লী প্রস্থান করিলেন । বিদ্রোহী সিপাহীর দল সকলে একত্র হইলে প্রথমে সাহেবদের অনুসন্ধান করিল। . তাহদের নষ্ট পাইয়া বাবুর খোজ করিল। বাবু তখন একটু দূরে দাড়াইয়া উহাদের কার্যকলাপ দেখিতেছিলেন। সাহেবেরা কিয়দর গেলে তিনি যাইবেন । কারণ সকলে একসঙ্গে গেলে যদি উহারা দেখিতে পায় সকলকেই মারিবে । বরং তাহীদের সহিত কথোপকথনে খানিক সময় কাটাইলে ততক্ষণে সাহেবের দৃষ্টিপথাতীত হইয়া যাইতে পারিবেন, এই ভাবিয় দাড়াইয়া তিনি নিজ কৰ্ত্তব্য চিন্তা করিতেছিলেন । সিপাহীরা তাহাকে দেখিয় বলিল, “তুমি আমাদের দলের নেতা হইয়৷ দিল্লী চল । আমরা দিল্লী জয় করিয়া তোমাকে যথেষ্ট পুরস্কৃত করিব ও চিরদিন তোমার ভূত্য হইয়া রহিব।” তিনি ইহাদের অনেক বুঝাইলেন, কিন্তু নিরস্ত করা অসম্ভব দেখিয়া নিজের প্রাণ বাচাইবার জন্ত কৌশল করিয়া কহিলেন, “আমি দ্রব্যাদি লইয়া আসি।” এই বলিয় তাহাদের নিষেধ ন মানিয়া চলিয়া গেলেন । সিপাহীরা তাহাকে ফিরিয়া আসিতে অনুরোধ করিতে লাগিল । শেষে রাগিয়া ৪৫ জনে একেবারে তাহার. উপর গুলি বর্ষণ করিল । তিনি গুলি আসিতেছে দেখিয়া উপস্থিত বুদ্ধিপ্রভাবে তৎক্ষণাৎ সেই স্থানে শয়ন করিলেন। গুলি কয়টা চলিয়া গেলে উঠিয়া তিরস্কার করিতে করিতে ফিরিয়া আসিয়া বলিলেন, “তোরা হিন্দু হইয়া হিন্দুকে মারিস, প্রভুর বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরিস ; তোরা কি মনে করিয়াছিস ইংরাজকে মারিয়া রাজ্য লইবি ? তোদের কখন ভাল হইবে না।” তখন তাহারা বলিল, “আপনাকে মারা আমাদের অন্যায় হইয়াছে এবং আমাদের সে উদ্যেশ্যও ছিল না । এখন আমাদের সহিত চলুন, আমরা আপনার জিনিষপত্র আনাইতেছি।” এই বলিয়া মুহূৰ্ত্ত মধ্যে তাহারা তাহার দ্রব্যাদি আনাইয়া ঘোর, রোলে সকলে দিল্লী যাত্রা করিল। অগত্য রাসবেহারী বাবুও র্তাহীদের সঙ্গে চলিলেন । তিন দিনে তাহারা দিল্লী পৌঁছিল। দিল্লীর বাহিরে হিন্দু রায়ের কুঠী নামক স্থানে তাৰু স্থাপন করিয়া গোরা ও শিখ সৈন্ত লইয়া ইংরাজ