পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, দ্বিতীয়াংশ).djvu/১৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Q>8 সতীশকে গঙ্গে লইয়া আবার বিনয় বাসায় প্রবেশ করিল। সতীশ পকেট হইতে রুমালের পুটুলি বাহির করিয়া কহিল—“এর মধ্যে কি আছে বলুন দেখি !” বিনয় “মড়ার মাথা” “কুকুরের বাচ্ছা” প্রভৃতি নানা অসম্ভব জিনিষের নাম করিয়া সতীশের নিকট তর্জন লাভ করিল। তখন সতীশ তাঙ্গর রুমাল খুলিয়া গোটাপাচেক কালো কালো ফল বাহির করিয়া জিজ্ঞাসা করিল—“এ কি বলুন দেখি ?” বিনয় যাহা মুখে আসিল তাহাই বলিল । অবশেষে পরাভব স্বীকার করিলে সতীশ কহিল রেঙ্গুনে তাহার এক মামা আছেন তিনি সেখানকার এই ফল তাহার মার কাছে পাঠাইয়া দিয়াছেন—ম তাহারই পাচটা বিনয় বাবুকে উপহার পাঠাইয়াছেন । ব্ৰহ্মদেশের ম্যাঙ্গোষ্টন ফল তখনকার দিনে কলিকাতায় সুলভ ছিল না—তাই বিনয় ফলগুলি নাড়িয়া চাড়িয়া টিপিয়া টুপিয়া কহিল—“সতীশ বাবু, ফলগুলো খাব কি করে ?” সতীশ বিনয়ের এই অজ্ঞতায় হাসিয়া কহিল—“দেখবেন, কামড়ে খাবেন না ষেন—ছুরি দিয়ে কেটে খেতে হয়।” সতীশ নিজেই এই ফল কামড় দিয়া খাইবার নিষ্ফল চেষ্টা করিয়া আজ কিছুক্ষণ পূৰ্ব্বে আত্মীয়স্বজনদের কাছে হাস্যাম্পদ হইয়াছে—সেই জন্য বিনয়ের অনভিজ্ঞতায় বিজ্ঞজনোচিত হাস্য করিয়া তাহার মনের বেদন দূর হইল । তাহার পরে দুই অসমবয়সী বন্ধুর মধ্যে কিছুক্ষণ কৌতুকালাপ হইলে পর সতীশ কহিল—“বিনয় বাবু, মা বলেছেন আপনার যদি সময় থাকে ত একবার আমাদের বাড়ী আসতে হবে-আজ লীলার জন্মদিন ।” বিনয় বলিল—“আজ, ভাই, আমার সময় হবে না, আজ আমি আর এক জায়গায় যাচ্চি।” সতীশ । কোথায় যাচ্চেন ? বিনয় । আমার বন্ধুর বাড়িতে। সতীশ । আপনার সেই বন্ধু ? বিনয় । ই । “বন্ধুর বাড়ি যেতে পারেন অথচ আমাদের বাড়ি যাবেন না” ইহার যৌক্তিকতা সতীশ বুঝিতে পারিল না—বিশেষত বিনয়ের এই বন্ধুকে সতীশের ভাল লাগে নাই –সে যেন প্রবাসী। { ৭ম ভাগ ইস্কুলের হেডমাষ্টারের চেয়ে কড়া লোক, তাহাকে আর্থিন শুনাইয়া কেহ যশ লাভ করিবেসে এমন ব্যক্তিই নয় ;–এমন লোকের কাছে যাইবার জন্য বিনয় যে কিছুমাত্র প্রয়োজন অনুভব করিবে তাহা সতীশের কাছে ভালই লাগিল না। সে কহিল—“ন, বিনয় বাবু, আপনি আমাদের বাড়ি আম্বন।” আহবান সত্ত্বেও পরেশ বাবুর বাড়িতে না গিয়া গোরার কাছে যাইব বিনয় এটা মনে মনে খুব আস্ফালন করিয়া বলিয়াছিল । আহত বন্ধুত্বের অভিমানকে আজ সে ক্ষুঃ হইতে দিবে না, গোরার প্রতি বন্ধুত্বের গৌরবকেই সে সকলের উদ্ধে রাখিবে ইহাই সে স্থির করিয়াছিল। কিন্তু হার মানিতে তাহার বেশিক্ষণ লাগিল না। দ্বিধা করিতে করিতে মনের মধ্যে আপত্তি করিতে করিতে অবশেষে বালকের হাত ধরিয়া সেই আটাত্তর নম্বরেরই পথে সে চলিল । ধৰ্ম্ম৷ হইতে আগত দুর্লভ ফলের এক অংশ বিনয়কে মনে করিয়া পাঠানোতে যে আত্মীয়তা প্রকাশ পাইয়াছে তাহাকে খাতির না করা বিনয়ের পক্ষে অসম্ভব । বিনয় পরেশ বাবুর বাড়ির কাছাকাছি আসিয়া দেখিল পানু বাবু এবং আর কয়েকজন অপরিচিত ব্যক্তি পরেশবাবুর বাড়ি হইতে বাহির হইয়া আর্সিতেছে। লীলার জন্মদিনের মধ্যাহ্বভোজনে তাহারা নিমন্ত্রিত ছিল। পানুবাবু যেন বিনয়কে দেখিতে পান নাই এমনি ভাবে চলিয়া গেলেন । বাড়িতে প্রবেশ করিয়াই বিনয় খুব একটা হাসির ধ্বনি এবং দৌড়াদৌড়ির শব্দ শুনিতে পাইল । সুধীর লাবণ্যর চাবি চুরি করিয়াছে ; শুধু তাই নয়, দেরাজের মধ্যে লাবণ্যর থাত আছে এবং সেই খাতার মধ্যে কবিযশঃপ্রার্থনীর উপহাস্যতার উপকরণ আছে তাহাই এই দম্য লোকসমাজে উদঘাটন করিবে বলিয়া শাসাইতেছে ইহাই লইয়া উভয়পক্ষে যখন দ্বন্দ্ব চলিতেছে এমন সময়ে রঙ্গভূমিতে বিনয় প্রবেশ করিল। . তাহাকে দেখিয়া লাবণ্যর দল মুহুর্তের মধ্যে অন্তৰ্দ্ধান করিল। সতীশ তাহদের কৌতুকের ভাগ লইবার জন্য তাহাদের পশ্চাতে ছুটিল। কিছুক্ষণ পরে সুচরিতা ঘরে প্রবেশ করিয়া কহিল, “ম আপনাকে একটু বসতে বললেন, এখনি তিনি আসচেন। বাবা অনাথ বাবুদের বাড়ি গেছেন, র্তারও আসতে দেরি হবে না।” '