পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, দ্বিতীয়াংশ).djvu/১৯০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

4xు তিকে অগ্ৰছ করিনি তেমনি শ্রদ্ধাও করিনি—অর্থাৎ তাকে লক্ষ্যই করা যায় নি—সেই জন্যেই তার শক্তি জাগেনি। এক সময়ে রোগীর দিকে না তাকিয়ে তাকে বিনা চিকিৎসায় বিনা পথ্যে ফেলে রাখা হয়েছিল—এখন তাকে ডাক্তার থানায় আনা হয়েছে বটে কিন্তু ডাক্তার তাকে এতই অশ্রদ্ধা করে যে একে একে তায় অঙ্গ প্রত্যঙ্গ কেটে ফেলা ছাড়া আর কোনো দীর্ঘ শুশ্রীষাসাধ্য চিকিৎসা সম্বন্ধে সে ধৈর্য্য ধরে বিচার করে না। এই সময়ে আমার বন্ধু ডাক্তারটি বলচেন আমার এই পরমাত্মীয়টিকে যে চিকিৎসার চোটে আগাগোড়া নিঃশেষ করে ফেলবে এ আমি সহ করতে পারবো না। এখন আমি এর ছেদন কাৰ্য্য একেবারেই বন্ধ করে দেব এবং অনুকুল পথ্য দ্বার আগে এর নিজের ভিতরকার জীবনীশক্তিকে জাগিয়ে তুলব তার পরে ছেদন করলেও রোগী সইতে পারবে ছেদন না করলেও হয় ত রোগী সেরে উঠবে। গোর বলেন, গভীর শ্রদ্ধাই আমাদের দেশের বর্তমান অবস্থায় সকলের চেয়ে বড় পথ্য—এই শ্রদ্ধার অভাবেই আমরা দেশকে সমগ্রভাবে জানতে পারচিনে- জানতে পারুচিনে বলেই তার সম্বন্ধে যা ব্যবস্থা করচি তা কুব্যবস্থা হয়ে উঠচে । দেশকে ভাল না বাসলে তাকে ভাল করে জানবার ধৈর্য্য থাকে না, তাকে না জানলে তার ভাল করতে চাইলেও তার ভাল করা যায় না । স্বচরিত একটু একটু করিয়া পোচ দিয়া দিয়া গোরার সম্বন্ধে আলোচনাকে নিবিতে দিল না । বিনয়ও গোরার পক্ষে তাহার যাহা কিছু বলিবার তাহা খুব ভাল করিয়াই বলিতে লাগিল। এমন যুক্তি এমন দৃষ্টান্ত দিয়া এমন গুছাইয়া আর কথনো যেন সে বলে নাই ; গোরাও তাহার নিজের মত এমন পরিষ্কার করিয়া এমন উজ্জল করিয়া বলিতে পারিত কিনা সন্দেহ। বিনয়ের বুদ্ধি ও প্রকাশক্ষমতার এই অপুৰ্ব্ব উত্তেজনায় তাহার মনে একটা আনন্দ জন্মিতে লাগিল এবং সেই আনন্দে তাহার মুখ উদ্দীপ্ত হইয়া উঠিল। বিনয় কহিল—“দেখুন শাস্ত্রে বলে আত্মানং বিদ্ধি—আপনাকে জান। নইলে মুক্তি কিছুতেই নেই। আমি আপনাকে বলচি আমার বন্ধু গোরা ভারতবর্ষের সেই আত্মবোধের প্রকাশরুপে আবিভূত হয়েছে। তাকে আমি সামান্ত লোক বলে মনে করতে পারিনে। আমাদের সকলের মন যখন প্রবাসী । তুচ্ছ আকর্ষণে [ ৭ম ভাগ । নূতনের প্রলোভনে বাইরের দিকে ছড়িয়ে, পড়েছে তখন ঐ একটি মাত্র লোক এই সমস্ত বিক্ষিত্নতা মাঝখানে অটলভাবে দাড়িয়ে সিংহগর্জনে সেই পুরাতন মন্ত্র বলচে-—আত্মানং বিদ্ধি।” এই আলোচনা আরো অনেকক্ষণ চলিতে পারিত – স্বচরিতাও ব্যগ্র হইয়া শুনিতেছিল—কিন্তু হঠাৎ পাশের একটা ঘর হইতে সতীশ চীৎকার করিয়া আবৃত্তি আরম্ভ করিল— “বোলে না কাতর স্বরে না করি বিচার জীবন স্বপনসম মায়ার সংসার ।” বেচারা সতীশ বাড়ির অতিথি অভ্যাগতদের সামনে বিদ্য ফলাইবার কোনো অবকাশ পায় না। লীলা পৰ্য্যন্ত ইংরেজি কবিতা আওড়াইয়া সভা গরম করিয়া তোলে কিন্তু সতীশকে বরদাসুন্দরী ডাকেন না। অথচ লীলার সঙ্গে সকল বিষয়েই সতীশের খুব একটা প্রতিযোগিতা আছে। কোনো মতে লীলার দর্প চূর্ণ করা সতীশের জীবনের প্রধান মুখ। বিনয়ের সম্মুখে কাল লীলার পরীক্ষা হইয়া গেছে। তখন অনাহুত সতীশ তাহাকে ছাড়াইয়া উঠিবার কোনো চেষ্টা করিতে পারে নাই। চেষ্টা করিলেও বরদাসুন্দরী তখনি তাহাকে দাবাইয়া দিতেন ;—তাই আজ পাশের ঘরে যেন আপন মনে উচ্চস্বরে কাব্যচর্চার প্রবৃত্ত হইল । শুনিয়া সুচরিতা হাস্ত সম্বরণ করিতে পারিল না। এমন সময় লীলা তাহার মুক্ত বেণী দোলাইয়া ঘরে ঢুকিয়া সুচরিতার গলা জড়াইয়া ধরিয়া তাহার কানে কানে কি একটা বলিল। অমনি সতীশ ছুটয় তাহার পিছনে আসিয়া কহিল—“আচ্ছা লীলা, বল দেখি মনোযোগ’ মানে কি ?” লীলা কহিল—“বলব না।” সতীশ। ঈস্ ! বলব না ! জান না তাই বল না ! বিনয় সতীশকে কাছে টানিয়া লইয়া হাসিয়া কহিল— “তুমি বল দেখি মনোযোগ:মানে কি ?” সতীশ সগৰ্ব্বে মাথা তুলিয়া কহিল—“মনোযোগ মানে মনোনিবেশ ।” স্বচরিতা জিজ্ঞাসা করিল, “মনোনিবেশ বলতে কি বোঝায় ?” আত্মীয় ন হইলে আত্মীয়কে এমন ‘বিপদে কে ফেলিতে