পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, দ্বিতীয়াংশ).djvu/২৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১০ম সংখ্যা । ] নিটিকে আমি ব্ৰহ্ম সঙ্গীত ভিন্ন,—ভগবানের মিলনের জন্য ভক্তের ব্যাকুলত ভিন্ন—আর কিছু মনে করিতে পারি না ; মনে করিতে কেমন’ক্লেশ অনুভব করি। এই দুইটি গান নমুনা মাত্র, আরো কত গান এমনি ভাবে রচিত যে তাহা প্রিয় ও দেবতাকে তুল্যভাবে নিবেদন করিতে পার যায়। রবীন্দ্রনাথ তাই এক স্থানে লিথিয়াছেন— ——“প্রেম গীতি হীর গাথা হয় নর নারী মিলন মেলায়, কেহ দেয় তীরে, কেহ বধূর গলায় ! প্রিয়জনে - প্রিয়জনে যাহা দিতে পাই তাই দিষ্ট দেবতারে ; আর পাব কোথা ? দেবতারে প্রিয় করি, প্রিয়েরে দেবত ।" ওমারের ধৰ্ম্মমতও এমনি জটিল, র্তাহার প্রেম এমনি নির্বিচার-—তাহ প্রিয়ের মধ্যে দেবতাকে এবং দেবতার মধ্যে প্রিযকে প্রত্যক্ষ করিয়া আমাদের মত স্বল্পপ্রাণ ধূলিলুষ্ঠিত জীবদিগকে ভ্ৰমে ফেলিয়াছে। এই উচ্চ প্রেমের সহিত স্বাধীন চিন্তা সংযুক্ত হইয় তাহাকে সমাজের কুসংস্কার ও উপধৰ্ম্মের অহা বিরোধী করিয়াছিল, কাজেই তিনি সমসাময়িকদিগের নিকুট অধাৰ্ম্মিক রূপে প্রতিভাত হইয়াছিলেন। তাহার প্রাণ যে সকল সমাজের গণ্ডি ছাড়াইয়া বিশ্বে ব্যাপ্ত হইয়া পড়িয়াছিল তাহার পরিচয় তাহার শ্লোকে পাওয়া যায়— গোলাপ যদি না ফুটে স্বরগে আমার আয়োজন করি দিব কাটার বাহার। জপমালা পুজাসন মিলে গে। যদি না, খৃষ্টানের গির্জা ঘণ্টা করিব না ঘৃণা । মন্দির মসজিদ, তুল্য উপাসনা স্থান গির্জ ঘণ্টা করে থাকে উীহারি সন্ধান । কাব ও মন্দির, ক্রুশ জপমাল আর ভিন্ন ভাষে বিশ্বব্যাপী উপাসনা তার। একটি কিংবদন্তি আছে, এবং তাহা শাহরজোরি, বোগদাদর মহম্মদ এবং পরবর্তী অন্যান্ত বিশিষ্ট লেখক কর্তৃক সমর্থিতও হইয়াছে যে তিনি মৃত্যুর সময়ে বলিয়াছিলেন, তিনি যে সত্যপথ-ভ্ৰষ্ট হইয়া দূরে ঘুরিতেছিলেন, তাহাতে আবার ফিরিয়া আসিয়াছেন। মৃত্যুশয্যাতে ওমার একখানি দার্শনিক গ্রন্থ পড়িতে পড়িতে হঠাৎ দাড়াইয়া উঠিয়া সমবেত বন্ধুবৰ্গকে র্তাহার শেষ আত্মপ্রকাশ শুনিতে আহবান করিয়াছিলেন । যখন সকলে সমবেত হইলেন, তখন তিনি নির্দিষ্ট প্রণালীতে উপাসনা শেষ করিয়া বলিয়াছিলেন, হে পরমেশ্বর, ওমার খায়ামের ধৰ্ম্মমত। AASAASAASAASAASAASAASAASAASAASAASAASAASAASAASAASAAAS čas আমার যথা-শক্তি, যথা-জ্ঞান আমি তোমাকে'জানিয়াছি, অতএব আমার সকল ক্রটি ক্ষমা কর । তোমার সত্তা উপলব্ধিই তোমার নিকটে আমার প্রধান সুপারিশ। তার পরে তিনি নিম্নলিখিত শ্লোকটি উচ্চারণ করিয়া অমরধামে যাত্রা করিলেন-— শ্রান্ত করিয়াছে মোরে আমারি নীচতা, অন্তরের দুঃখ ও আত্মার এককত । হে ঈশ্বর, শূঙ্গ হ’তে সত্তা লও টানি, তোমার সত্তায় লহ মোরে শূন্ত মানি। _. ওমার পুনর্জন্ম বিশ্বাস করিতেন। একটি কিংবদন্তি আছে যে একদা তিনি একটি ভগ্ন পাঠশালায় কয়েকজন ছাত্র পরিবুত হইয়া দাড়াইয়াছিলেন। তিনি দেখিলেন একটি গর্দভ ইটের ভার বহন করিয়া সেই পাঠশালায় প্রবেশ করিতেছে। ইহাতে কবি ওমার নিম্নলিখিত শ্লোক উচ্চারণ করেন--- হে বিজ্ঞ গৰ্দভ, তুমি গিয়েছিলে সোজা, ফিরিয়া এসেছ কুক্ত পিঠে বহি বোঝা । নাম তব লুপ্ত এবে যত নাম মাঝে নখ সব জড়ো হ’য়ে খুর সে হয়েছে। দীর্ঘ তব দাড়ি ছিল, পিঠে সরে আজ সরু হ’য়ে হ’য়ে গেছে মনোহর ল্যাজ । ইহ শুনিয়া ছাত্রবৃন্দ সোৎসুক দৃষ্টিতে চাহিলে ওমার বলিলেন যে এই গদ্দভ পূৰ্ব্ব কোন জন্মে এই পাঠশালার গুঞ্চমহাশয় ছিলেন। তিনি গর্দুভ আকারেও তাহাকে চিনিতে পারিয়াছেন। ইহা কবিবরের পরিহাস কি দৃঢ়বিশ্বাস তাহা নির্ণয় করা সুকঠিন নহে, কারণ কবি অন্যত্র বলিয়াছেন— যেই স্বর কর পান, যেই ওষ্ঠে খাও চুম্ব শেষ হয় সৰ্ব্বশেষে তিনি সে শাশ্বত ওঁ । আজো তুই, কালে ছিলি, থাকিবি এমনিতর আগামী কালেও তুই, তবে কেন ভয় কর ? এই যে শিবির এতে দিমেকের তরে যমালয়যাত্রী রাজা বিশ্রাম করিয়া চলে যায়, অর্ণধার ফরাশ থাকে পড়ে নুতন অতিথি তরে আবার সাজিয়া। মিথ্যায় মৃত্তিক হতে গড়ি এই দেই ভগ্ন করি ফেলিবে না নিশ্চয় জানিয়ে ।