পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, দ্বিতীয়াংশ).djvu/২৫৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(*१२ জীব আছেন যাহাদিগকে রক্ষক নামে অভিহিত করা হয় ; তাহারাত আগে বক্শিশু পিছে বাহু এই নীতির উপাসক। দস্তুরমত বক্শিশূ পাইলে তাহারা নয়কে ছয় ও ছয়কে নয় করিতে পারেন, দোষীকে তাহারা দ্যায্য দণ্ড হইতে দূরে রাখিতে পারেন আর নিদোষাকে ফঁাসাকাঠে ঝুলাইবার আয়োজন করিতে পারেন। এ বক্শিশকে সাধারণ অজ্ঞ লোকে “যুষ” নাম দিয়া বদনাম করে ; কিন্তু রক্ষক মহাশয়েরা ইঙ্গকে “নজরানা" এইমধুর নামটা দিয়া গৌরবান্বিত করেন । এখানে একটা কথা মনে পড়িল । বক্শিশূ কথাটা লইয়া নশ্বর-আজ আছে কাল নাই—মানুষকে কেন দোষ দিই। দেবতারা কি বড় ফেলা যান ? তাহীদের বেলাই কি লীলাখেলা আর পাপ কেবল মানুষের বেলা ? ওমুক দেবতা ওমুক পুষ্পট না পাইলে তুষ্ট হন না, ওমুক দেবতার মূৰ্ত্তি , সমীপে দু একটী রজত বা অন্ততঃ পক্ষে তাম্রখণ্ড না রাখিলে তিনি সন্তুষ্ট হন না, এসব কি ? ইহাও কি বক্শিশু নয় ! আর শুধু কলির দেবতারাই যে বকৃশিশ প্রিয় তাহ ৪ নয়। এ বক্শিশ প্রথাটা বহু প্রাচীনকাল হইতে পুরুষানুক্রমে চলিয়া আসিতেছে। দ্বাপরযুগেও বকৃশিশের কথা শুনিতে পাওয়া যায়। যেমন তেমন দেবতা নয় স্বয়ং ত্রিপুরারি মহেশ্বর একবার বক্শিশ লাভ করিয়া কৰ্ত্তব্য কাৰ্য্য ভুলিয়া গিয়াছিলেন। কথিত আছে কুরুপাণ্ডলের যুদ্ধের সময় মহাদেব পাণ্ডবের পঞ্চশিশুপুত্রের রক্ষণভার লইয়াছিলেন । ধখন তিনি এই পঞ্চ-শিশুর গৃহদ্বার রক্ষা করিতেছিলেন তখন অশ্বথামা তাহাদিগকে হত্যা করিবার জন্ত তথায় উপস্থিত হয়। ভোলানাথের এমনই কর্তব্য জ্ঞান যে অশ্বথামার নিকট হইতে গোটাকতক বিল্বপত্র বক্শিশ পাইয় তাহাকে স্বার ছাড়িয়া দিয়া সরিয়া পড়িলেন । তাই বলিতেছিলাম যে যখন বড় বড় দেবতারাও বকৃশিশ না পাইলে তুষ্ট হন না তখন মামুষ ত কোন ছার ! আবার ভেবেছিলাম যে এই কালা আদমির দেশটারই বুঝি বকৃশিশুরুপ কুপ্রথা সকল একচেটিয়া। কিন্তু যেরূপ শুনা যায় তাহাতে ইউরোপ ও আমেরিকায় ইহা আরও অধিক প্রবল বলিয়া প্রতীয়মান হয়। সেখানে বক্শিশের মূল্য ক্রমশ: বাড়িয়াই চলিয়াছে। যেখানে পুৰ্ব্বে এক প্রবাসী । { ৭ম ভাগ। শিলিং দিলে চলিত সেখানে এখন এক পাউণ্ড না দিলে মান, থাকে না এবং অসুবিধা ভোগ করিতে হয়। আবার বক্শিশু প্রার্থীদের সংখ্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি প্রাপ্ত হইতেছে। ইউরোপ ও আমেরিকায় লোক দেশপৰ্য্যটন কালে পান্থনিবাসে বা ভোজনাগারে আশ্রয়গ্রহণ করে। সকল ভোজনাগারের চাকরবর্ণকরকে ভালরূপ বক্শিশু দিতে হয়। বক্শিশ থাষ্টয়া এষ্ট সকল চাকরবীকরের উদর ক্রমশঃ বাড়িয়া চলিয়াছে। যিনি বড় লোক তিনি খুব বেশ বকৃশিশু দিয়৷ গেলেন। র্তাহার পরে যদি অপেক্ষাকৃত অল্পসঙ্গতিপন্ন কোন লোক আসেন, তাহার নিকটও হোটেলের চাকরেরা সমান বকৃশিশু প্রত্যাশা করে। কাজেই ইউরোপ ও আমেরিকায় ভ্রমণ ক্রমশঃ অধিক ব্যয় সাপেক্ষ হইয়া উঠিয়াছে। সেখানে রেলের কুলিদিগকেও ভালরূপ বকৃশিশৃ দিতে হয়। কথিত আছে একবার একজন দৃঢ়মতি ইংরাজ পুরুষ প্যারিসের একটা বড় হোটেল হইতে বিদায়গ্ৰহণকালে ভূতাদিগকে এক পয়সা ও না দিয়া গম্ভীর ভাবে স্ফীতবক্ষে তাহাদের মধ্য দিয়া বাহির হইয়া গেলেন। হলগৃহের রক্ষক তাহার এরূপ অদ্ভুত ব্যবহারের অর্থ বুঝিতে না পারিয়া ক্ষণকাণ স্তম্ভিত হইয়া দাড়াইয়া রহিল। ইংরাজ ভদ্রলোকটা দৃষ্টির বর্হিভূত হইয় গেলে পর রক্ষকের চমক ভাঙ্গিল । তখন সে এবং তাহার সহকারী অন্যান্ত ভৃত্যগণ তাহাদের প্রাপ্য বক্শিশ হইতে বঞ্চিত হওয়ায় আপনদিগকে বিশেষ অপমানিত বোধ করিল। তাহার এ অপমানের শোধ এইরূপে লইল, ইংরাজ পুরুষটী যাইবার সময় তাহার জিনিসপত্রগুলি ষ্টেশনে পাঠাষ্টয়া দিতে বলিয়া গিয়াছিলেন ; হল রক্ষক সেগুলিকে ঠিক ষ্টেশনে না পাঠাষ্টয়া অন্ত ষ্টেশনে পাঠাষ্ট্রয় দিল । অনেক সময় হোটেলের ভূত্যেরা তাহীদের দ্যায্য প্রাপ্য বকৃশিশ না পাইলে অন্য উপায়েও স্বীয় বিরক্তি জ্ঞাপন করে। তাহারা লগেজের গায় সাধারণ লোকের অবোধ্য খড়ির তাক কাটিয়া দেয় ; কখন কখন লগেজের লেবেল (label) গুলি যেরূপভাবে লাগান উচিত সেরূপ ভাবে না লাগাইয়া যেমন তেমন করিয়া লাগাষ্টয়া দেয় ; কখন বা লগেজের গায় গালিস্বচক কথা সকল লিখিয়া দেয়। ইহার ফল এই হয় যে রেলওয়ে ষ্টেশনে পন্থছিলে কুলির লগেজের গায়