পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, দ্বিতীয়াংশ).djvu/২৮৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শিক্ষা, দ্বিতীয় শ্রেণীর শিক্ষা, মাধ্যমিক শিক্ষা, উচ্চতর প্রাথমিক শিক্ষা, নিম্নতর প্রাথমিক শিক্ষা—সকল প্রকার শিক্ষাই এই প্রণালীর অন্তভূক্ত –কিছুরই অভাব নাই। প্রত্যেক প্রাদেশিক নগরে এক একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হইবেঃ—উচ্চশ্রেণীর বিদ্যালয়, কালেজ, মধ্যমশ্রেণীর বিদ্যালয় —ইহাদের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হইবে , এ পর্য্যন্ত, সমস্তই মেকলেরই প্রণালী—তবে একটু বৰ্দ্ধিত আকারে গঠিত এই মাত্র। নূতনত্ব এইখানে : -প্রাথমিক পাঠশালা-সকল স্থাপিত হইবে। তখন হইতেই শিক্ষার প্রকৃতি পরিবর্তিত হইল। চাষাদিগকে ইংরাজি-শিক্ষা দেওয়া বিড়ম্বন, এই কারণেই প্রাথমিক পাঠশালায়, স্থানীয় দেশ-ভাষায়, একটু লিখিতে পড়িতে শেখান হইবে—একটু অঙ্ক ও ভূগোল শিক্ষা দেওয়া হইবে। এ বেশ কথা ! কিন্তু এইরূপ আরম্ভ করিয়া তাহার পর ইহার কার্য্য-পরিসর একটু বাড়াইয়া মাধ্যমিক পাঠশালা সকল কি স্থাপন করা যাইতে পারিত না –যেখানে ইংরাজি শিক্ষা প্রত্যেকের ইচ্ছাধীন হইবে ? কিন্তু আমার মনে হয়, আশু-উন্নতির আকাজক্ষায় কর্তৃপক্ষের বিকৃত দৃষ্টি এই শিক্ষাসমস্যাটাকে উল্টাভাবে দেখিতে লাগিল । তাহারা জাপানীদের দ্যায়,গৃহের বনিয়াদও দেয়াল না বানাইয়া আগেই গৃহের ছাদ প্রস্তুত করিলেন। কলিকাতার একজন মুসলমান জজ আমাকে এইরূপ বলিয়া ছিলেন – “ইংরাজেরা ভারতবর্ষের কিছুই বুঝে নাই; তাহারা ভারতের জন্ত এমন কতকগুলি অনুষ্ঠান প্রবৰ্ত্তিত করিয়াছেন, ভারতকে এমন একটি ভাষা দিয়াছেন, যাহা ভারতের পক্ষে আদৌ উপযোগী নহে। হিন্দী ভাষাকে কেন তাহারা ভারতের সাধারণ ভাষা করিয়া রাখিলেন না ? তোমরা ফরাসী, তোমরা আলজিরিয়াকে ইংরাজের অপেক্ষ ভাল বুঝিয়াছ।” এইরূপ প্রশংসালাভে আমরা এতই অনভ্যস্ত যে, আমি শুনিয়া আশ্চৰ্য্য হইলাম। একথা ঠিক্‌, ইংরাজসরকার বনিয়াদ না করিয়াই, একটা প্রকাও গম্বুজ তুলিয়াছিলেন। এখন দেখ, সত্য প্রকাশ হইয়া পড়িয়াছে ! কাহাকে বিদেশী ভাষায় ললিত-চার সৌর্থীন ধরণের শিক্ষা দিলেই কি যথেষ্ট হয় ?--কখনই না। নিতান্ত প্রয়োজনীয় জ্ঞান, কেজে ধরণের জ্ঞান, অধিক সংখ্যক লোকের হাতের কাছে পৌছাইয়া দেওয়া নিতান্তই আবশ্যক। २ (Sol, তাহাদের এই সুন্দর কার্য্যতালিকার শেষ ফল কি হইল ?—গর্ভপাত ! অবশ্য কতকটা প্রশংসনীয় চেষ্টাও হইয়াছিল। কিন্তু যেরূপ লোকসংখ্যা তাহাতে উহা কাৰ্য্যে পরিণত হওয়া দুরূহ। তবু ত অনেক স্থানে নুতন করিয়া কিছুই স্থাপন করিতে হয় নাই। কোন কোন প্রদেশের বড় বড় গ্রামে দেশীয় পাঠশালা পূৰ্ব্ব হইতেই ছিল। যেমন মনে কর বাংলা ও মাদ্রাজে। এই সব স্থানে নুতন কোন পাঠশালা খুলিবার প্রয়োজন হয় নাই, বর্তমান পাঠশালাগুলিকে অর্থ সাহায্যের দ্বারা স্থায়ী করিয়াই সরকারের কার্য্য সিদ্ধ হইল। বোম্বাই, উত্তর-পশ্চিম ও পঞ্জাব প্রদেশে প্রাথমিক পাঠশালা সকল পুৰ্ব্ব হইতেই স্থাপিত ছিল, এবং স্থানীয় মু্যনিসিপ্যালিটি হইতে উহার ব্যয় নিৰ্ব্বাহ হইত। প্রত্যেক গ্রামে পাঠশালা স্থাপন করা দুঃসাধ্য তাই ভারতের প্রত্যেক প্রদেশে মণ্ডল-বিভাগের (circle) পদ্ধতি অনুস্থত হইল। প্রত্যেক বিভাগের প্রধান স্থানে একএকটি আদর্শ পাঠশালা স্থাপিত হইল—এবং সেই সকল পাঠশালাই সরকার হইতে অর্থ সাহায্য প্রাপ্ত হইল। সেই পাঠশালার অধ্যক্ষ, সেই এলাকার গ্রামে গ্রামে ভ্রমণ করিয়া তত্রত্য পাঠশালাগুলি পারদর্শন করিতেন। অবশেষে, গত ত্রিশ বৎসর মধ্যে, এই প্রাথমিক পাঠশালার সহিত আর কতকগুলি মাধ্যমিক পাঠশালাও সংযোজিত হইল—এই মাধ্যমিক পাঠশালায় স্থানীয় দেশ ভাষাতেই শিক্ষা দেওয়া হয়—কিন্তু ইহার পাঠ্যতালিকা আরও একটু বিস্তৃত ; বীজগণিত, ভৌতিক বিজ্ঞান, ওঅল্পস্বল্প রসায়ণ এই তালিকার অন্তভুক্ত। এই ত গেল শিক্ষার বন্দোবস্ত, কিন্তু এই বন্দোবস্তের ফল কি হইল ?—ভারতের অধিকাংশ লোকেই অনহ্মর হইয়া রহিল। এ একটা ভারী আশ্চৰ্য্য ব্যাপার, ভারতে এমন অনেক লোক আছে যাহারা বিদেশী ভাষায় লিখিতে পারে কিন্তু নিজের ভাষা পড়িতে পারে না। এখানে প্রাথমিক পাঠশালা অপেক্ষা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসংখ্যা অধিক । ১৯০১ খৃষ্টাব্দের আদম-সুমারীর বিবরণ এখন আমার হাতে নাই। কিন্তু ১৮৯১-র আদম-সুমারীর বিবরণ অনুসারে,-যে সকল - হিন্দু পড়িতে পারে তাহার আয়ুপাতিক সংখ্যা—শত করা, ৬। কি জন্য এই ভয়ঙ্কর নুন্নতা ? একটা কারণ, দেশীয় লোকের ততটা আগ্রহ নাই—আবার এই আগ্রহ না