পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, দ্বিতীয়াংশ).djvu/২৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

এই সব জাতির মধ্যে সেই সভ্যতা বিস্তার করা যুরোপের কর্তব্য। তাহার ও উদারনৈতিক সম্প্রদায়ের যে নৈতিক আদর্শ ছিল, তাই অতিলোলুপ সাম্রাজ্যনৈতিকদিগের আদর্শ অপেক্ষা যে উৎকৃষ্ট তাহাতে সন্দেহ নাই। র্তাহার যদি কিছু ভ্রম হইয়া থাকে—সে ভ্রমটিও সুন্দর ভ্রম। হয়ত এক দিন তাহার কথাই ঠিক্‌ হইবে। যদি কখন ভারত, নিজ গাত্র হইতে শত শত বৎসরের ধূলা ঝাড়িয়া ফেলিতে পারে, অতীতের গুরুভার শৃঙ্খলটাকে ভাঙ্গিয়া ফেলিতে পারে, সেই দিন, ভারতের দীর্ঘ অবতার-পর্য্যায়ের মধ্যে মেকলেরও একটা স্থান হইবে। এমন কি ভারতের রমণীরাও - অজ্ঞান-মুক্ত রমণীরাও, তাহার চরণে ভক্তিপুষ্পাঞ্জলি প্রদান করিবে। মেকলের বিশ্বাস ছিল, ভারত শীঘ্রই ও সহজেই যুরোপীয় সভাত আত্মসাৎ করিতে পরিবে --ইহাই তাহাব ভুল। এবং তাহার পরে, পরবর্তী রাজপূরুষেরাও তাঙ্গর উদগাটিত পথ অনুসরণ করিতে লাগিল –ইহাই তাহার তেভাগ্য। তাহার ধ্রুব বিশ্বাস ছিল, আপন হইতেই জ্ঞানের জয় হইবে, এবং জ্ঞানের দীপ্ত আলোকচ্ছটায় কুসংস্কারের অন্ধকারকে তিরোহিত করিয়া, আমাদের সভ্যতা বিনাযুদ্ধেই আত্মপ্রতিষ্ঠা করিতে সমর্থ হইবে। তাহার পরবর্তী কর্তৃপক্ষগণ কোন দ্বিরুক্তি না করিয়া-এই মতের অনুসরণ করিতে লাগিল। মেকলেকর্তৃক শিক্ষা-সংস্কার প্রবর্তিত হইবার পর, যে শিক্ষা হিন্দুর রক্ত ংসের সাহত মিশিবার নহে, যে শিক্ষা অকাল-কুষ্মাণ্ডের হ্যায় কাল-বিরুদ্ধ, সেই বিদেশী শিক্ষা এই ৭৫ বৎসরকাল অত্ৰত্য কালেজ সমূহে প্রদত্ত হইতেছে। এই শিক্ষার মধ্যে হিন্দুর জন্ত কিছুই নাই, আধুনিক লোকদিগের জন্তও কিছুই নাই। এ কথার সত্যতা যদি পরীক্ষা করিতে চাও ত জাপানের ইতিহাস একবার আলোচনা করিয়া দেখ। যাহা সকলেরই পক্ষে প্রয়োজনীয় জাপানীরা দ্যায্যক্লপে সেই প্রাথমিক শিক্ষাকেই পরিপুষ্ট করিয়া তুলিয়াছে। তা ছাড়া, উহার আরও কিছু বেশী করিয়াছে। উহারা আমাদের নিকট হইতে বিজ্ঞান লইয়া, আপনাদের কাজে খাটাইতেছে। অবহু বিজ্ঞান বিষয়ে আমরাই উহাদের শিক্ষক এবং সকল আসিয়িক জাতির ষ্ঠায় জাপানেরও ইহাতে লাভ হইবারই कधः ।

  • 9రి

রক্ষণশীল ইংরাজের, আর এক বিষয়ের জন্ত মেকলের । প্রতি দোষারোপ করে। র্তাহারা বলেন, তিনি প্রকারাস্তরে বিদ্রোহীর দল গড়িয়া তুলিয়াছেন। ইংলণ্ড ও য়ুরোপের ইতিহাস,—প্রভুশক্তির বিরুদ্ধে, স্বেচ্ছাচারী রাজার বিরুদ্ধে, দীর্ঘকালব্যাপী যুঝাযুঝির ইতিহাস ভিন্ন আর কিছুই নহে। হিন্দুর পক্ষে, ইতিহাস জিনিসটা অতীব কৌতূহলজনক, ও বহু-ফলপ্রস্থ। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রগণ, স্বাধীনতার সম্বন্ধে বর্ক ও ফক্সের জ্বালাময়ী বক্তৃতা মুখস্থ করিতেছে —মনে করিয়া দেখ ইহার ফল কি হইতে পারে! অতঃপর মহামহিম ভারত-সম্রাটের লৌহময় শাসন-শৃঙ্খল যদি উহার ভাঙ্গিয় ফেলে,তখন ইংরাজের ইঠাৎ একদিন ঘুম ভাঙ্গিবে— মহা বিপদ উপস্থিত হইবে ! পাছে কেহ মেকলের বিরুদ্ধে এইরূপ দোষারোপ করে, এই জন্য তিনি পূৰ্ব্ব হইতেই ইহার উত্তর দিয়া রাখিয়াছেন। তিনি বুঝিয়াছিলেন, শীঘ্রই হউক, বিলম্বেষ্ট হষ্টক, য়ুরোপীয় ভাবে দীক্ষিত ভারত এক সময়ে নিশ্চয়ই স্বতন্ত্রশাসনের দাবী করিবে ; তিনি এই কথাটি বুঝিয়াছিলেন এবং মানিয়াও লইয়াছিলেন । র্তাহার পরবত্তী ইংরাজদিগের সম্বন্ধে আমি এ কথা বলিতে পারি না। তাহাদের কাৰ্য্যপ্রণালী নিতান্তই অসঙ্গত। শুধু অসঙ্গত নহে-- উহা ভয়াবহ। একবার ভাবিয়া দেখদিকি,—তাঙ্গার ব্রাহ্মণ যুবকদিগকে লক্, বেনথাম মিল পড়াইতে লাগিলেন ; তাহার স্বাধীনতা সম্বন্ধে শিক্ষণ দিয়া উহাদিগকে বলিলেন -- তোমরা কিন্তু স্বাধীন হইতে পাষ্টবে না। এই সব অদূরদর্শী লোকেরাই মনে করে,—বীজ বোন হইবে, অথচ উহা হইতে গাছ গজাইয়া উঠিবে না। ইহার অদ্ভুত ফল ফলিয়াছে। একদিকে, ভারতের প্রভূর নিজ গৃহে স্বৈরতন্ত্রের শিক্ষা পাইতেছেন, এবং এই শিক্ষার ফলে উদারনীতি হইতে পরিভ্রষ্ট হইয়া স্বদেশে ফিরিয়া যাইতেছেন; পক্ষান্তরে নব্যভারত দৃঢ়ভাবে উদারনৈতিক হইয়া উঠিতেছে; নিজ প্রভুদের নিকট হইতেই নব্যভারত ঢাল-খাড়া লাভ করিয়াছে, এবং সেই ঢাল-খাড়া লষ্টয়া এক সময়ে উহাদেরই দাতের গোড়া ভাঙ্গিবে—স্বাধীনতা লাভ করিবে ! ' শ্ৰীজ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর।

  • o