ونان . সঙ্গে খুটিয়া খুটিয়া মিঃ ক}ি আমরা লজ্জাও পাইব না, গৌরবও-বোধ করিব না। ੋਂ জন্মিয়াছি সে দেশের আচার, বিশ্বাস, শাস্ত্র ও সমাজের জন্ত পরের ও নিজের কাছে কিছুমাত্র সঙ্কুচিত ইয়া থাকিব না। দেশের যাহা কিছু আছে তাহার সমস্তই সবলে ও সগৰ্ব্বে মাথায় করিয়া লইয়া দেশকে ও নিজেকে অপমান হইতে রক্ষা করিব । এই বলিয়া গোরা গঙ্গাস্নান ও সন্ধ্যাহিক করিতে লাগিল, টিকি রাখিল, খাওয়া ছোওয়া সম্বন্ধে বিচার করিয়া চলিল । এখুন হইতে প্রত্যহ সকাল বেলায় সে বাপ মায়ের পায়ের ধূলা লয়, যে মহিমকে সে কথায় কথায় ইংরেজি ভাষায় “ক্যাড" ও "ম" বলিয়া অভিহিত করিতে ছাড়িত না, তাহাকে দেখিলে উঠিয়া দাড়ায়, প্রণাম করে ; মহিম এই হঠাৎ ভক্তি লইয়া তাহাকে যাঙ্গ মুথে আসে তাছাই বলে, কিন্তু গোরা তাহার কোনো জবাব করে না । - গোরা তাহার উপদেশে ও আচরণে দেশের একদল লোককে যেন জাগাইয়৷ দিল। তাহারা যেন একটা টানাটানির হাত হইতে বাচিয়া গেল ; হাফ ছাড়িয়া বলিয়া উঠিল, আমরা ভাল কি মন্দ, সভ্য কি অসভ্য তাহ লইয়া জবাবদিহি কারো কাছে করিতে চাই না--কেবল আমরা ষোলো আন অনুভব করিতে চাই যে আমরা আমরাই ! কিন্তু কৃষ্ণদয়াল গোরার এই নূতন পরিবর্তনে যে খুসি হইলেন তাহ মনে হইল না। এমন কি, তিনি একদিন গোরাকে ডাকিয়া বলিলেন--"দেখ বাবা, হিন্দুশাস্ত্র বড় গভীর জিনিষ। ঋষিরা যে ধৰ্ম্ম স্থাপন করে গেছেন তা তলিয়ে বোঝা যে-সে লোকের কৰ্ম্ম নয়। আমার বিবেচনায় না বুঝে এ নিয়ে নাড়াচাড়া না করাই ভাল। তুমি ছেলেমানুষ বরাবর ইংরেজি পড়ে মানুষ হয়েচ, তুমি যে ব্রাহ্মসমাজের দিকে ঝুঁকেছিলে সেটা তোমার ঠিক অধিকারের মতই কাজ করেছিলে । সেই জন্তেই আমি তাতে কিছুই রাগ করিনি বরঞ্চ খুসিই ছিলুম। কিন্তু এখন তুমি যে পথে চলেচ এটা ঠিক ভাল ঠেকচে না। এ তোমার পথই নয়।” গোরা কহিল, “বলেনকি বাবা ? আমি যে হিন্দু। হিন্দুধৰ্ম্মেৱ গৃঢ় মৰ্ম্ম আজ না বুঝিŽ কাল বুঝব—-কোনো কালে যদি না বুঝি তবু এই পর্থে চলতেই হবে। হিন্দুসমাজের সঙ্গে পূৰ্ব্বজন্মের সম্বন্ধ কাটাতে পারিনি বলেই ত এ জন্মে প্রবাসী । १भ छैt१ ।। ব্রাহ্মণের ঘরে জন্মেছি, এমনি কল্পই জন্মে জন্মে এই হিন্দুধৰ্ম্মের ও হিন্দুসমাজের ভিতর দিয়েই অবশেষে এর চরমে উত্তীর্ণ হব । যদি কখনো ভুলে অন্য পথের দিকে একটু হেলি আবার দ্বিগুণ জোরে ফিরতেই হবে।” - কৃষ্ণদয়াল কেবলি মার্থ নাড়িতে নড়িতে কহিলেন— “কিন্তু, বাবা, হিন্দু বল্পেই হিন্দু হওয়া যায় না। মুসলমান হওয়া সোজা, খ্ৰীষ্টান যে-সে হতে পারে--কিন্তু হিন্দু ! বাসরে ! ও বড় শক্ত কথা । 球 গোরা। সে ত ঠিক। কিন্তু আমি যখন হিন্দু চয়ে জন্মেছি, তখন ত সিংহদ্বার পার হয়ে এসেছি। এখন ঠিকমত সাধন করে গেলেই অল্পে অল্পে এগতে পারব ! কৃষ্ণদয়াল। বাবা, তর্কে তোমাকে ঠিকটি বোঝাতে পারব না। তবে তুমি যা বলচ সেও সত্য। যার যেটা কৰ্ম্মফল, নিদিষ্ট ধৰ্ম্ম, তাকে একদিন ঘুরেফিরে সেই ধৰ্ম্মের পথেই আসতে হবে—কেউ আট্কাতে পারবে না। ভগবানের ইচ্ছে! আমরা কি করতে পারি। আমরা ত উপলক্ষ্য ! কৰ্ম্মফল এবং ভগবানের ইচ্ছ, সোহহংবাদ এবং ভক্তিতত্ত্ব সমস্তই কৃষ্ণদয়াল সম্পূর্ণ সমান ভাবে গ্রহণ করেন-- পরস্পরের মধ্যে যে কোনো প্রকার সমন্বয়ের প্রয়োজন আছে তাহ অনুভবমাত্র করেন না । আজ আহ্লিক ও স্নানাহার সারিয়া কৃষ্ণদয়াল অনেকদিন পরে আনন্দময়ীর ঘরের মেজের উপর নিজের কম্বলের আসনটি পাতিয়া সাবধানে চারিদিকের সমস্ত সংস্রব হইতে যেন বিবিত্ত হইয়া খাড়া হইয়া বসিলেন । আনন্দময়ী কহিলেন—“ওগে, তুমি ত তপস্ত করচ, ঘরের কথা কিছু ভাব না, কিন্তু আমি যে গোরার জন্তে সৰ্ব্বদাই ভয়ে ভরে গেলুম।” কৃষ্ণদয়াল । কেন, ভয় কিসের ? আনন্দময়ী। তা আমি ঠিক বলতে পারিনে। কিন্তু আমার যেন মনে হচ্চে গোরা আজকাল এই যে হিছয়ানী । আরম্ভ করেছে এ ওকে কখনই সইবে না, এ ভাবে চলতে । গেলে শেষকালে একটা কি বিপদ ঘটৰে । আমি ত তোমাকে তখনি বলেছিলুম ওর পৈতে দিয়ে না। তখন
পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, দ্বিতীয়াংশ).djvu/৬
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।