পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, দ্বিতীয়াংশ).djvu/৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

१३ ग१था ! ] সঙ্কোচ, সমস্ত পূৰ্ব্ব সংস্কার সবলে পরিত্যাi - গ করিয়া দেশের সাধারণের সঙ্গে সমH ক্ষেত্রে নামিয়া দাড়াইয়া মনের সঙ্গে বলিতে চায়, “আমি তোমাদের, তোমরা আমার।” v ভোরে, উঠিয়া-বিনয় দেখিল রাত্রির মধ্যেই আকাশ পরিষ্কার হইয়া গেছে। সকাল বেলাকার আলোটি দুধের ছেলের হাসির মত নিৰ্ম্মল হইয়া ফুটিয়াছে। দুই একটা শাদা মেঘ নিতান্তই বিনা প্রয়োজনে আকাশে ভাসিয়া বেড়াইতেছে। বিনয় জাগিয়া উঠিয়া খোলা জানাল দিয়া আকাশে চাহিবামাত্রই আর একটি নিৰ্ম্মল প্রভাতের স্মৃতি তাহার মনে জাগিয়া উঠিল । তাছার নীচের ঘরের বিছানায় পরেশ গুইয়া আছেন ; সুচরিতা শিয়রের কাছে বসিয়া ; তাহার উদ্বেগনত মুখে কপালের দুই ধারে চুলগুলি ঝুঁকিয় পড়িয়াছে, তাহার চোখের বড় বড় পল্লব বৃদ্ধের অচেতন মুখের উপর স্নিগ্ধ ছায়া বর্ষণ করিতেছে, এক হাতে সে মাঝে মাঝে রুমাল ভিজাইয়া আস্তে আস্তে বৃদ্ধের কপালে বুলাইয়া দিতেছে। আর এক হাতে পাখা করিতেছে, এই মেহের দৃপ্ত এই সেবার দৃপ্ত এমন সুস্পষ্ট করিয়া তাহার মনে জাগিল, বিশেষতঃ সেই সেবাকুশল হাত দুই খানির মাধুর্য এমনি তাহার চিত্তকে আবিষ্ট করিয়া তুলিল যে, নিজের সম্বন্ধে সে নিজেই বিস্মিত হইল। ঘুমের মধ্যেও কি এই স্মৃতির ধারা ভিতরে ভিতরে বহিতেছিল ? তাই চেতনার প্রথম অভু্যদয়েই সেই স্মৃতি তাহার মনের মধ্যে এক মুহুর্তে প্রকাশ পাইল । সেই সঙ্গে তাহার সমস্ত অন্তঃকরণের মধ্যে এমন একটা উৎসাহের সঞ্চার হইল যে, তাহাকে আর বিছানায় পড়িয়া থাকিতে দিল না। সে তখনি উঠিয়া মুখ ধুইয়া কাপড় ছাড়িয়া প্রস্তুত হইল। যেন আজ কি একটা হইবে, যেন আজ তাহার একটা বিশেষ দিন, এই ভাবে তাহার মনের ভিতরটা চঞ্চল হইয়া উঠিল। অথচ হাতে কোনো কাজ নাই, ঘরে কোনো লোক নাই। বিনয় আপনার . উত্তমের কোনো বিষয় না পাইয়া একেবারে মাস্তায় বাহির হইয়া পড়িল। গোরার বাড়ীর পথে কিছু দূৰ গিয়া কোনাে মতেই সেখানে যাইতে ইচ্ছা হইল গোরা। না। গোরার কাছে গেলে, প্রতিদিন যে সকল কথার আলোচনা হইয়া থাকে, 8 সে সকল কথায় বিনয়ের কোনো রুচি রহিল না । . . . . ভারতবর্ষের সনাতন ধৰ্ম্ম, সমাজ, ইংরেজের রাষ্ট্রনীতি প্রভৃতি ছাড়া মানুষের আর মে কোনাে বিধরে কোনাে ভাবনা বা বেদন থাকিতে পারে গোরার তাহাতে খেয়ালই ছিল না, সে যেন আর সমস্তকেই অবজ্ঞা করিত, সেই জন্ত গোরার সঙ্গ বিনয়ের পক্ষে আজ কেমন যেন কর্কশ বোধ হইল। সে তখনি ফিরিয়া বাসায় আসিল । চাদর খুলিয়া রাখিয়া দোতলায় রাস্তার ধারের বারান্দায় আলিয়া দাড়াইতেই দেখিল পরেশ । এক হাতে লাঠি ও অন্ত হাতে সতীশের হাত ধরিয়া রাস্ত দিয়া ধীরে ধীরে চলিয়াছেন। সতীশ বিনয়কে বারান্দায় দেখিতে পাইয়াই হাত তালি দিয়া “বিনয় বাবু বলিয়া চীৎকার করিয়া উঠিল। পরেশও মুখ তুলিয়া চাহিয়া বিনয়কে দেখিতে পাইলেন। বিনয় তাড়াতাড়ি নীচে যেমন নামিয়া আসিল, সতীশকে লইয়া পরেশও তাহার বাসার মধ্যে প্রবেশ করিলেন। সতীশ বিনয়ের হাত ধরিয়া কহিল,—“বিনয় বাবু আপনি যে সে দিন বল্লেন আমাদের বাড়ীতে যাবেন, কই, গেলেন না ত ?” বিনয় সস্নেহে সতীশের পিঠে হাত দিয়া হাসিতে লাগিল। পরেশ সাবধানে তাহার লাঠিগাছটি টেবিলের গায়ে ঠেস দিয়া দাড় করাষ্টয়া চৌকিতে বসিলেন ও কহিলেন,—“সে দিন আপনি না থাকলে আমাদের ভারি মুস্কিল হত। বড় উপকার করেচেন।” বিনয় বাস্ত হইয়া কহিল,—“কি বলেন । কিইবা করেচি ?” সতীশ হঠাৎ তাহাকে জিজ্ঞাসা করিল, “আচ্ছ, বিনয় বাবু, আপনার কুকুর নেই ?” 娜 বিনয় হাসিয়া কহিল, “কুকুর ? না, কুকুর নেই।” । সতীশ জিজ্ঞাসা করিল,—“কেন, কুকুর রাখেন নি কেন ?” - বিনয় কহিল,—“কুকুরের কথাটা কথনে মনে হয় নি।” । পরেশ কহিলেন,—“গুনলুম সে দিন সতীশ আপনার । এখানে এসেছিল, খুব বোধ হয় বিরক্ত করে গেছে। .