পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, প্রথমাংশ).djvu/১০৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

. ২য় সংখ্যা । ] কোন বিষয় তারিখসহ উল্লেগ করিতে হইলে এই পলায়নের দিন হইতে গণিয়া উল্লেখ করা হইয়া থাকে।

  • | ক্রমশঃ

受 রামধনের কীর্তি । রামধন মণ্ডল বরিশালের কোন ক্ষুদ্র পল্লীগ্রামে জন্মগ্রহণ করে। দারিদ্র্য ও অভাবের সঙ্গে যুদ্ধ করিতে করিতে সে অজ্ঞাতনামা স্কুল হইতে এণ্টান্স পাশ করিয়া দশটাকা জলপানী পাইল ; এবং কলেজে পড়িতে বরিশালে গেল । তাঙ্গর পিতা তাহাকে কিছু সাহায্য করিতে পারিত না । অগত্য তাহকে ছেলে পড়াষ্টয়া আরো তিনটি টাকা উপাৰ্জ্জন করিতে হক্টত । সুতরাং জলপানীর টাকাটা দানাপানিতেই ব্যয় করিতে হইত ; জলপানী ব্যাপারটার জল্পনা দরিদ্রের মনে স্তান পাইত না । ত্রিসংসারে তাহার বুদ্ধপিতা ভিন্ন আর কেহ ছিল না । মৃত্যু যখন সেই একমাত্র আশ্রয়ও কড়িয়া লইবার উপক্রম করিতেছিল, তখন বালক রামধন বা কাতর হইয়াছিল। পুত্রকে রুদন্মুখ দেখিয়া বৃদ্ধ বলিল, “বাবা রামধন, ঠিক আমার এই বিছানার নীচে তিনটা বোগ্‌নেভির পাঁচহাজার টাকা আছে, তারাই তোমার সহায় ও আশ্রয় হবে, ভয় কি বাবা । তুমি যদি বুঝে সুঝে চলতে পার, তোমার ভাবনা কি ?” রামধন মনে করিল, ইহা বিকারের প্রলাপ । সারাজীবন , যে অন্নকষ্ট ও বস্ত্রকষ্ট পাষ্টয়া জীর্ণ পর্ণকুটীরে লালিত হইয়াছে, সে একেবারে পাচহাজার টাকা প্রাপ্তির কথা প্রলাপ ও স্বপ্ন বলিয়া মনে করিবেই ত । তথাপি পিতার মৃত্যুর পর কৌতূহলবশে ঘরের মেঝে খুড়িয়া দেখিল, তিনটি পিত্তলের হাড়ির মুখে লোহার তাওয়া ঢাকা রহিয়াছে। ঢাকা সরাইতেই বরদ সহস্ৰলোচন ইন্দ্রের মত মুদ্রাগুলির সহিত রামধনের শুভদৃষ্টি হইল। প্রথমপ্রণয়প্রসঙ্গভীতা নবোঢ়ার মত রামধনের অন্তরটা দুরু দুরু করিয়া উঠিল । রামধন স্থির করিল, এই টাকা লইয়া সে কলিকাতায় গিয়া ভাল করিয়া লেখা পড়া করিবে। 受 রামধনের কীৰ্ত্তি । న) : যথা চিন্তা, তথা কাজ। বরিশালের কলেজ হইতে ট্রান্সফার লষ্টয়া একেবারে কলিকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজে গিয়া ভৰ্ত্তি হইল এবং হিন্দু হোষ্টেলের ত্রিতলে একা একটি ঘর লইয়া বাস স্থাপন করিল। রামধন অতি অল্পকালের মধ্যে মহাধনবান বলিয়া খ্যাত হষ্টয়া উঠিল। কলেজের ব্যায়ামবিভাগে চাদ দিয়া নিয়মিত ব্যায়াম করিত এবং ব্যায়ামাস্তে পেস্তা কিশমিশ, বাদাম আখরোট, চালগুজা সরভাজা পেট ভরিয়া খাইত এবং সঙ্গীদিগকে খাওয়াইত। কারণ ব্যায়ামান্তে পুষ্টিকর খাদ্যাহার শাস্ত্রের ব্যবস্থা ! অহোরাত্ৰে পাচবার চা খাওয়ার জন্ত হোষ্টেলময় ধষ্ঠ ধন্ত পড়িয়া গেল। মেীতাতের সময় প্রসাদপ্রার্থী অনেক বন্ধু যুটিত । বনমালী জলখাবার যোগাইয়া উঠিতে পারিত না; ব্রজঠাকুর চপ কটলেট ভাজিতে ভাজিতে পরিশ্রাস্ত হষ্টয়া উঠিত ; রজনী বেচারার সোডা লেমনেড যোগাইতে দশবার তেতলা উঠানামা করিতে পায়ে বাত ধরিয়া গেল । ভজহরির কুল্লিবরফ এবং বাথগেটের পাইন-এপল্‌ পানীয় না হইলে রামধনের সান্ধ্য মজলিস ভাল জমিত না । প্রত্যহ চার পয়সার মাখনের পাতামোড়া ঠোঙা বুলাইয়া ভোজনাগারে যাইত এবং আপনার পাশ্ব ও সন্মুখবর্তী বন্ধুবান্ধবদের মধ্যে কিয়দংশ বিতরণ করিয়া দিত। এইরূপে রামধনের প্রসার ও খ্যাতি খুব জমিয়া উঠিল। রামধনের বিশেষত্ব সকল দিকে। হেয়ারকাটার চুল ছাটিত ; লেড ল কোম্পানি শার্ট যোগাইত ; নৃত্য ধোপা তিন দিন অন্তর কাপড় কাচিত; এবং দন্তমঞ্জন হইতে সাবান এসেন্স পর্য্যস্ত রামধনের চেরিরশমের প্রতি পক্ষপাতিত্ব দেখা যাইত । রামধন যখন সন্ধ্যার পর বেড়াইয়া ফিরিত তখন বামহস্তের দিব্য ইস্ত্রিকরা চকচকে শার্টের কফের উপর বেলফুলের কুগুলিত মালা মৃদু স্নিগ্ধ গন্ধ বিতরণ করিত। শনি রবিবারে থিয়েটার কামাই যাইত না ; এবং বিলাসিনীদিগকে পুষ্পার্থ্য দিতে সে মুক্তহস্ত ছিল। ম্যাকবেথ অভিনয় দেখিতে কাহাকেও পুষ্পার্ঘ্যদিবার অবসর না পাইয়া (লেডি ম্যাকবেথকে উপহার দিতে তাহার বোধ হয় সাহসে কুলায় মাই) বিকৃতদর্শন ডাইনী পিশাচীদের শ্ৰীশ্ৰীচরণ কমলেষু পুষ্পাঞ্জলি