পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, প্রথমাংশ).djvu/১৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩য় সংখ্যা । ] প্রজাশক্তির অভিব্যক্তি । “পৰ্ব্বত হইতে নদী ধায় যবে সিন্ধুপানে কে রোধিৰে গতি তার" —মধুসুদন। “Onward, brave men, onward go Place is none for rest below."—J. S. Blackie. একদা এক সন্ন্যাসী গ্রাম হইতে গ্রামান্তরে ভিক্ষার জন্ত যাইতেছিল। বৈশাখ মাসের দুপুরবেলা, দীর্ঘ পথ, বিস্তৃত প্রাস্তর। বেচারী আর পারে না, শ্রান্তক্লাস্ত হইয়া পথপাশ্বস্থিত এক বটবৃক্ষমূলে বসিয়াছে আর ইষ্টদেবের কাছে কষ্টাপনোদনের জন্য পুনঃ পুনঃ প্রার্থনা করিয়া বলিতেছে, “ঘোড়া চড়িয়ে দে রাম!” এমন সময় পুলিশের এক কর্তা জবরদস্তালব্ধ গ্রামবাসীর এক পূর্ণগর্ভ ঘোটকীতে আরোহণ করিয়া সেষ্ট স্থানে আসিয়া উপস্থিত। ঘোটকী সেই স্থানে আসিয়াই একটী বৎস প্রসব করিল। এখন উপায় কি ? এই নবপ্রস্তুত বৎসকে কে গ্রামে পৌছাইয়া দেয় ? উপায় জটিতে দেরী হইল না। নিকটে স্থূলকায় সন্ন্যাসীকে দেখিতে পাইয়া তাহারই স্কন্ধে বৎসট চাপাইয়া দিয়া গ্রামের দিকে ছুটলেন। সন্ন্যাসীবেচারা নাচার! তাই অশ্বশাবকটি ঘাড়ে লইয়া মনের খেদে “উন্ট বুঝলিরে রাম !” বলিতে বলিতে গ্রামের দিকে চলিল ! এই বৈশাখ মাসের দিনে, কমিল্লার ঘটনারূপ দুস্তর প্রান্তর অতিক্রমপ্রয়াসী- আমাদের ইংরাজরাজকে যদি তাহার মনের ভাব জিজ্ঞাসা করা যায়, তবে তিনি নিশ্চয়ই বলিবেন, “উণ্ট বুঝলিরে রাম”! আজ যদি তাহাকে কেহ এই আশ্বাস দিতে পারে যে, বঙ্গবিভাগ তুলিয়া লইলে বিভাগের পূৰ্ব্বে দেশের লোকের মনের ভাব সরকারের প্রতি যাহা ছিল তাহাই পুনরায় ফিরিয়া আসিবে, তাহা হইলে ইংরাজরাজ নাকে কাণে খন্ত শদিয়া (অবশু নিজের কাছে, নইলে prestige থাকে না । ) আজই ভাঙ্গাবঙ্গ জোড়া দিয়া দিবেন, ইহাতে সন্দেহ মাত্র নাই। বাঙ্গালী জাতিকে দ্বিখণ্ডিত করিয়া তাহার রাজনৈতিক জীবনকে বিনাশ করাই "বিভাগের একমাত্র উদ্দেশু। সে উদেণ্ড সফল হওয়া বে থাকুক, এই কিঞ্চিদধিক একবৎসরের মধ্যে বাদালীর জাতীয় জীবন যে শক্তি ও গতি লাভ করিয়াছে তাহার - প্রজাশক্তির অভিব্যক্তি । >ミQ 警 বেগ সামলাইতে যাইয়া ইংরাজরাজ আজ আত্মহারা হইয়া পড়িয়াছেন। আজ বঙ্গভাগ করিয়া ত্রিটিশ-সিংহ (!) এই ভারতভূমে যেরূপ বিব্রত হইয়া পড়িয়াছেন, দশটা বঙ্গ একত্র শাসন করিতে যাইয়া তিনি কখনও এরূপ হইতেন না। কাপড়ে আগুণ লাগিলে মূর্থ লোকে যেমন তাত নিবাইতে যাইয়া আরও বাড়াইয়া তোলে, বাঙ্গালীর প্রজাশক্তির সঙ্গে ব্যবহারে ইংরাজ আজ সেই মূৰ্খতারই পরিচয় দিতেছেন। ইছ অপেক্ষা “উন্ট বুঝলিরে রাম” আর কি হইতে পারে ? সন্ন্যাসীর “উন্ট বুঝলিরে রাম” অপেক্ষ যে ইংরাজরাজের আক্ষেপ অনেক গভীর অর্থব্যঞ্জক তাহা বুঝিতে অধিক সময় লাগিবে না। সাধের ফুলারকে বিদায় দিবার সময় বড়লাট মিণ্টে সাহেব এইরূপ অর্থযুক্ত একটা দীর্ঘনিশ্বাস ছাড়িয়াছিলেন। কিন্তু আর উপায় নাই ! “পবন বপন করিলে মহাপবন কৰ্ত্তন করিতে হয়”। বীজ বপন করিয়াছ, তাহ অঙ্কুরিত হইয়াছে, না বুঝিয়া বুদ্ধিভ্রংশবশতঃ তুমি নিজেই সে বৃক্ষে জল সেচন করিতেছ ; সুতরাং ফল তোমাকে ভক্ষণ করিতে হইবেই, আক্ষেপ করিয়া লাভ কি ? দেবতারা যাহাকে শাস্তি দিবেন, আগে তাহার বুদ্ধিনাশ করেন । ইংরাজের বুদ্ধিনাশ ঘটিয়াছে, এখন “বুদ্ধিনাশাৎ প্রণগুতি"র পালা আরম্ভ হইয়াছে। এত দিন বাঙ্গালীর জাতীয়জীবন উদ্ভিদধৰ্ম্মী ছিল, vegetate করিতেছিল । উদ্ভিদের জীবনেরও একটা পরিণতি আছে, কিন্তু উদ্ভিদ তাহ জানে না । তাহার ভিতরে কোন বোধ নাই। বাহিরের শক্তি তাহাকে যাহা গড়িয়া তুলে সে তাহাই হয় । সে নিজের অজ্ঞাতসারে আপনার ভাগ্য গ্রহণ করে। এত দিন আমরা ইংলণ্ডের নেজুড়ের সঙ্গে বাধা ছিলাম, ইংলণ্ড যা করেন তাই, ইংলও ভাগ্যবিধাতা । ইংলণ্ড বিধান করিতেছেন কি বিনাশ করিতেছেন সে খবরও লই নাই, উদ্ভিদের সে খবর লইবার অধিকার নাই। ইহার সঙ্গে ক্ষণিক সুখদুঃখের জ্ঞানযুক্ত হইলেই আমরা উদ্ভিদরাজ্য ছাড়িয়া প্রাণীরাজ্যে প্রবেশ করি । ৭ই আগষ্ট আমাদের বহিষ্কার (Boycott) ঘোষণার দিন, আমাদের জাতীয়জীবনের প্রাণীরাজ্যে প্রবেশের দিন। প্রাণীজগতের ক্রিয়াকলাপের সঙ্গে আমা.