পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, প্রথমাংশ).djvu/১৭৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩য় সংখ্যা । ] তীর্ণ যুবক ডিপ্লোমাম্প্রাপ্ত হইয়া আরও দুই এক বৎসর কোনও কারখানায় কৰ্ম্ম করে এবং এইরূপে যথাসম্ভব শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা লাভ করিয়া কৰ্ম্মক্ষেত্রে প্রবিষ্ট হয় । এইরূপ আরও অনেক দৃষ্টান্ত দেওয়া যাইতে পারে। রাসায়নিক দ্রব্য, কাচ, লোহা, ইস্পাত প্রভৃতি অনেক কারবারে আগে ইংলণ্ডের অবিসংবাদী প্রাধান্তছিল। এখন জৰ্ম্মনী ইংলণ্ডকে পশ্চাতে ফেলিয়া দ্রুতগতিতে অগ্রসর হইতেছে। আলকাতর হইতে বিভিন্ন প্রকারের রং (aniline colours) ইংলণ্ডেই আবিষ্কৃত হয় এবং ইংলগুেই উহার কারবার আরম্ভ হয়। এখন উহা সম্পূর্ণরূপে জৰ্ম্মনীতে স্থানান্তরিত হষ্টয়াছে । ইংরাজব্যবসায়ীরাই এখন ঐ সকল রং সৰ্ব্বাপেক্ষা অধিক আমদানি করে। ইহার কারণ কি ? কারণ জৰ্ম্মনীতে বিশ্ববিদ্যালয় ও শিল্পবিদ্যালয় সমূহে ঐ বিষয়ের বহুল চর্চা হইতেছে, এবং বিখ্যাত বৈজ্ঞানিকগণের সাহায্যে দিন দিন ঐ ব্যবসায়ের অসামান্ত শ্ৰীবৃদ্ধি হইতেছে। কেবল স্কুলকলেজ দ্বারা শিল্পোন্নতি সাধিত হইতেছে, তাহা নহে। জৰ্ম্মনীতে এক প্রকারের বিজ্ঞানালয় আছে, উহার নাম Central-Stille । ইংলঙুে উহার অনুরূপ কিছুই নাই। মনে করুন কোনও ব্যবসায়ে উন্নত বিজ্ঞানজ্ঞান আবশ্বক, অথচ একজন ব্যবসায়ীর পক্ষে উপযুক্ত বিজ্ঞানশালা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভবপর নহে। তখন কয়েকজন ব্যবসায়ী মিলিত হইয়া একটা আদর্শ বিজ্ঞানশালা প্রতিষ্ঠা করে। উহাতে খ্যাতনামা বৈজ্ঞানিকদিগকে নিযুক্ত করা হয় এবং ব্যবসায় সংক্রান্ত যাবতীয় জটিল প্রশ্ন তাহাদিগের নিকট * প্রেরিত হয়। এই বিজ্ঞানাগারে বৈজ্ঞানিকদিগের সমবেত তত্ত্বানুসন্ধানের ফল ঐ ব্যবসায়ীরা সকলে মিলিয়া ভোগ করে। ইংলণ্ডে এইরূপ ব্যবস্থা এখনও অজ্ঞাত, সুতরাং ইংলণ্ড যে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জৰ্ম্মনীর নিকট পরাস্ত হইবে, তাহা আর বিচিত্র কি ? পুণ্যশ্লোক তাতার বিজ্ঞানশালা এতদিনে প্রতিষ্ঠিত হইতে চলিয়াছে। আশা করি, উহা দ্বারা ভারতীয় শিল্প বাণিজ্যের যথেষ্ট উপকার হইবে। ১৮৬৬ সনে সুবিখ্যাত লেখক ম্যাথু আর্নল্ড বলিয়াsoon :-"The methods of teaching in Germany were more" gradual, more natural, and more rational than the English " ভারতীয় মোসলমান । Ꮌ 8Ꮌ [ জৰ্ম্মনশিক্ষা পদ্ধতি ইংলণ্ডীয় পদ্ধতি অপেক্ষ অধিকতর ক্রমোন্নতিশীল, অধিকতর স্বাভাবিক ও অধিকতর যুক্তিযুক্ত। ] বাণিজ্যক্ষেত্রে প্রতিযোগিতায় তাহার এই উক্তি প্রমাণিত হইতেছে। আজ কাল ভারতে যাহারা জাতীয়শিক্ষা সম্বন্ধে আলোচনা করিতেছেন, তাহাদিগকে জৰ্ম্মনশিক্ষা প্রণালী অভিনিবেশ পূৰ্ব্বক অধ্যয়ন করিতে হইবে। বঙ্গের নানা স্থানে জাতীয় বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হইতেছে । জৰ্ম্মনীর অনুকরণে এই সকল বিদ্যালয়ে বে-খরচা প্রাথমিক শিক্ষা ও তৎপাশ্বে উৎকৃষ্টতর বৈজ্ঞানিকশিক্ষা প্রবর্তিত হইলে এ দেশে কয়েক বৎসরে যুগান্তর উপস্থিত হইবে। যে যে বিষয়ের শিক্ষা সম্বন্ধে সরকার বাহাদুর অমনোযোগী, তত্ত্বৎশিক্ষাই আমাদিগের প্রতিষ্ঠিত করা উচিত, নতুবা একই ক্ষেত্রে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করিতে যাইয়া বহু শক্তি ও সময় ক্ষয় হইবে । দেশের বর্তমান অবস্থায় অযথা শক্তিক্ষয় বাঞ্ছনীয় নহে। শ্রীরজনীকান্ত গুহ। ভারতীয় মোসলমান । * প্রথম যুগে ভারতবর্ষের সহিত মোসলমানের তিন প্রকার সংশ্রখ ছিল, বাণিজ্য, ধৰ্ম্মপ্রচার ও রাজ্যাধিকার । এই তিন উদ্দেশ্বেই প্রথম যুগে মোসলমানগণ ভারতবর্ষে আগমন করিতেন। অনেকের বিশ্বাস যে, তাহার কেবল রাজ্য লোভেই ভারতবর্ষে প্রবেশ করিতেন । এই বিশ্বাস যে ভ্ৰমাত্মক, তাহ সহজেই প্রতিপন্ন করা যাইতে পারে। ইসলাম ধৰ্ম্ম প্রতিষ্ঠিত হইবার বহু পূৰ্ব্ব হইতেই ভারতবর্ষের সহিত আরব জাতির বাণিজ্য সম্বন্ধ বিদ্যমান ছিল। লোহিত সাগরের তীরবাসী আরবগণের সহিত মিশরবাসীদের ঘনিষ্ঠ যোগ ছিল; এবং এই ঘনিষ্ঠতার ফলে আরবগণ ষান্মাসিক বায়ুপ্রবাহ সম্বন্ধে অভিজ্ঞতা লাভ করিয়া ভারত সমুদ্রে নৌ পরিচালনে পটু হইয় উঠেন। তার পর মিশরের অধঃপতন ঘটিলে প্রাচ্য দেশ সকলের সমস্ত বাণিজ্য ও ব্যবসায় আরষগণের হস্তগত হয়। র্তাহারা মশলা, মণিমাণিক্য এবং গজদত্ত্বের অন্বেষণ করিতেন বলিয়া ভারতবর্ষ ও সিংহল দ্বীপের নাম তাহীদের নিকট ইন্দ্রজালপুর্ণ ছিল। আদম ও হব স্বৰ্গচ্যুত হইয় যে তুঙ্গ শৈলে পতিত হইয়াছিলেন, তাহা সিংহলে অবস্থিত বলিয়া জনশ্রুতি থাকতে এই দ্বীপের সহিত পবিত্র স্মৃতি জড়িত ছিল। পরবত্তী কালের আরধগণ সিংহল দ্বীপকে আদি মানবজাতির বাসভূমি বিশ্বাসে তীর্থরূপে পরিণত করেন। যে সকল মোসলমান (মোপাল) দক্ষিণ ভারতের মালাবার উপকূলে উপনিবেশ স্থাপন করেন, তাহার প্রথমে ধৰ্ম্মপ্রচার, কি বাণিজ্য উপলক্ষে ভারতবর্ষে আগমন করিয়াছিলেন, তাহ নিঃসন্দেহে নির্দেশ করিবার

  • লণ্ডন Society of Arts নামক সমিতির অধিবেশনে মিঃ ইউসফ আলী এম, এ, এলএল, এম, (ক্যান্টাব) যে প্রবন্ধ পাঠ করেন, তদবলম্বনে লিখিত। এই অধিবেশনে মাত্রাজের ভূতপূৰ্ব্ব গবর্ণর লড় এম্পখিল সভাপতির আসন গ্রহণ করিয়াছিলেন।