পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, প্রথমাংশ).djvu/১৮০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩য় সংখ্যা । ] খুব নিকট হইতে প্রথম দেখিল, তখন তাহারা কিরূপে হতবুদ্ধি হইয় পড়িয়াছিল তাহ বেশ কল্পনা করা যায়। প্রত্যক্ষবাদী কাজ-সৰ্ব্বস্ব সওদাগর, অগ্রপশ্চাৎদশী শ্রমশিল্পের উদ্যোগী—যাহার সকল জিনিসেরই শুধু বাজারদর নিদ্ধারণেই সুপটু, সেই সব জেণ্ট লমেন” যাহারা আধ্যাত্মিক অনুশীলনের কোন ধার ধীরে না, যাহারা শুধু বাহলাগিত্যেই বিমুগ্ধ, যাহার কায়দা-হ্রস্তভাবে আহার করে, ফিট্‌ফট্‌ ধরণে পরিচ্ছদ পরে, খুব খুটিনাটির সঙ্গিত ক্ষেীর কার্য্য সম্পাদন করে, দেহচর্য্যাই যাহাদের একমাত্র ধৰ্ম্ম, যে জাতি উদ্যম অধ্যবসায় ও কার্য্যতৎপরতায় উন্মত্তপ্রায়, তাহাদিগকে দেখিয়া প্রাচীনতন্ত্রের হিন্দুদের সমস্ত ধারণা যে বিপৰ্য্যস্ত হইয়াছিল তাহা বেশ বুঝা যায় । এই হিন্দুরা সকলেই নৃনাধিক পরিমাণে সন্ন্যাসী। ইহাদের নিকট বর্তমান জীবনের প্রায় কোন মূল্যই নাই। জীবনের দুঃখ কষ্ট প্রশমন করা অপেক্ষা, কিরূপে জীবন হইতে একেবারেই নিস্কৃতি লাভ করা যায়, সেই বিষয়েই তাহাদের অধিক চিন্তা * - 4 g o so a o a এইরূপ অবস্থায়, তাহদের জীবনের যে কোন কেজো উদেখ থাকিবে, তাছাদের কাজের কোন বিনিময়মূল্য থাকিবে তাহা সম্ভবপর নহে। কলিকাতা সংস্কৃত কালেজের প্রধানাধ্যক্ষকে আমি জিজ্ঞাসা করিয়াছিলাম : - “কালেজ ছাড়িয়া আপনার ছাত্রেরা কি কাজ করে ? তাহাদের অধ্যয়নের উদ্দেশু কি ?” মনে হইল, আমার এই প্রশ্নে তিনি অত্যন্ত বিস্মিত হইলেন। তিনি উত্তর করিলেন :-অধিকাংশ ছাত্র জ্ঞানার্জনের জন্তই অধ্যয়ন করে ; পদমৰ্য্যাদা লাভের জন্য প্রায় কেহই অধ্যয়ন করে না। যেমন এখন, তেমনি পরেও, ভিক্ষার উপরেই উহাদের নির্ভর। অবশু ইহা জীবনের একটা উচ্চ আদর্শ মাত্র । সকলেই এই আদর্শ অনুসারে কাজ করে না। কুসীদজীবী ও বেণিয়ার কথা স্বতন্ত্র।...কিন্তু উচ্চশ্রেণীর লোকদের ইহাই আদর্শ। ইহাই সন্ন্যাসধৰ্ম্মের আদর্শ, মঠের আদর্শ, ধ্যানধারণার আদর্শ। বড় বড় ধৰ্ম্মসংস্কারক মাত্রই ক্রমান্বয়ে তাহাদের শিস্যদিগকে এইরূপ উপদেশ দিয়া আসিয়াছেন। এইরূপ মনের প্রকৃতি হইলে, যাহাকে আমরা উন্নতি বলি, তাহ একেবারেই অসম্ভব হইয়া পড়ে। এ কথাটা >Q ○ যেন মনে থাকে, হিন্দুর নিকট বর্তমান জীবন জীবনসোপানের একটি ধাপমাত্র-পরে আরো অনেক জীবন আছে । সংসারচক্রের ভ্রমণপথে যখন অনেকগুলি জীবন একে একে পার হইতে হইবে, তখন সঙ্গে বোজুকা বুজকি যত কম থাকে ততই ভাল। যদি হিন্দু এ সংসারের অনিত্যতা অনুভব না করিত তাহা হইলে গৃহের বন্দোবস্ত ও সমাজের বন্দোবস্তের প্রতি আরো অধিক মনোযোগা হইত ; দুঃখ কষ্ট প্রশমনে স্বকীয় অবস্থার উন্নতিসাধনে আরো যত্নশীল হইত সন্দেহ নাই। কিন্তু যে হেতু ইহসংসার একটি পান্থশালা মাত্র-যেখানে এই ক্ষণস্থায়ী জীবন স্বল্প কালের জন্ত আতিথ্য প্রাপ্ত হয়,-অতএব এখানকার জিনিষ পত্র যেখানে যেমনটি আছে ঠিক সেই ভাবেই সেইখানে রাখিয়া দেওয়াই ভাল—নাড়াচাড়া করিবার কোন আবশুকত নাই। আমাদের আবার তেমনি ঐহিক উন্নতির উপর অগাধ বিশ্বাস ; এখানে পাকা আডড গাড়িয়া, কিরূপে মুখস্বচ্ছন্দে জীবন যাপন করিতে পারি আমাদের শুধু সেই চিন্তা ;-পরিত্রিক স্বৰ্গসুখের প্রতি আমরা উদাসীন। যে সকল ধৰ্ম্মসম্প্রদায়, দার্শনিক সম্প্রদায়, ইহজীবনের অসারত ও অনিত্যতা সম্বন্ধে উপদেশ দেন, র্তাহার স্বভাবতই রক্ষণশীল। গৃঢ়ভাবেই হউক, প্রকাশুভাবেই হউক, —তাহারা পরিবর্তন ও উন্নতির বিরোধী। ইংরাজি সভ্যতা ও হিন্দু সভ্যতা—এই দুই সভ্যতার আদর্শের মধ্যে আকাশ-পাতাল প্রভেদ । দেশজয়সূত্রে একদিন হঠাৎ এই দুই সভ্যতার মুখামুখী সাক্ষাৎ হইল। একটি হাড়ে হাড়ে রক্ষণশীল, অপরটি ভৌতিক উন্নতির একান্ত পক্ষপাতী ; একটি নিশ্চেষ্ট সহনশীল, প্রবল প্রাকৃতিক শক্তির নিকট নতশির ;–অপর সচেষ্ট উদ্যমশীল, প্রাকৃতিক শক্তির উপর আধিপত্য করিতে—প্রাকৃতিক শক্তিকে আপনার কাজে খাটাইতে সমর্থ। প্রথমটি নিঃস্বার্থ,—আত্মমুখকে অবজ্ঞা করে, ধন ঐশ্বৰ্য্যকে তুচ্ছ করে ; দ্বিতীয়টি প্রত্যক্ষবাদী, মুখমোহে মুগ্ধ, রজতকাঞ্চনের একান্ত অমুরাগী। হিন্দুসমাজে, ব্যক্তির নড়িবার স্থান নাই, ব্যক্তি যেন একটা জঁাতার মধ্যে নিষ্পেষিত। পক্ষাস্তরে, ইংরাজ সমাজ, ব্যক্তিকে মুক্তিদান করে, ব্যক্তির নিঃশ্বাসপ্রশ্বাসের জন্ত একটু খোলা বাতাস রাখিয়া দেয়, ব্যক্তির জন্য একটু স্থান