পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, প্রথমাংশ).djvu/২১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪র্থ সংখ্যা । ] কাল গুনিয়াছে বেণুর বাপের বিয়ে তাই শুনিয়া অবধি বাছার মনে শাস্তি নাই ! আহ, বেণুকে কত ভালই বালে ! মা জিজ্ঞাসা করিলেন—আজ তবে তোমার আর মফস্বলে যাওয়া হইবে না । হরলাল কহিল—ন —বলিয়াই তাড়াতাড়ি বাহির হইয়া পড়িল । অধর বাবুর বাড়ি পৌছিবার পূর্বেই দূর হইতে শোনা । গেল রসনচৌকি আলেয়া রাগিণীতে করুণস্বরে আলাপ জুড়িয়া দিয়াছে। কিন্তু হরলাল দরজায় ঢুকিয়াই দেখিল, বিবাহবাড়ির উৎসবের সঙ্গে একটা যেন অশাস্তির লক্ষণ মিশিয়াছে । দরোয়ানের পাহার কড়াক্কড়, বাড়ি হইতে চাকরবাকর কেহ বাহির হইতে পারিতেছে না—সকলেরই মুখে ভয় ও চিন্তার ভাব। হরলাল খবর পাইল কাল রাত্রে বাড়িতে অনেক টাকার গহনা চুরি হইয়া গেছে। দুই তিন জন চাকরকে বিশেষভাবে সন্দেহ করিয়া পুলিসের হাতে সমর্পণ করিবার উদ্যোগ হইতেছে । হরলাল দোতলায় বারান্দায় গিয় দেখিল—আধর বাৰু আগুন হইয়া বসিয়া আছেন—-ও রতিকান্ত তামাক খাইতেছে। হরলাল কহিল—আপনার সঙ্গে গোপনে আমার একটু কথা আছে । অধর বাবু চটিয়া উঠিয়া কহিলেন, তোমার সঙ্গে গোপনে আলাপ করিবার এখন আমার সময় নয়---যাহ কথা থাকে এইখানেই বলিয়া ফেল ! তিনি ভাবিলেন, হরলাল বুঝি এই সময়ে তাহার কাছে সাহায্য বা ধার চাহিতে আসিয়াছে রতিকান্ত কহিল—আমার সামনে বাবুকে কিছু জানাইতে যদি লজ্জা করেন, আমি না হয় উঠি । অধর বিরক্ত হইয়া কছিলেন—আঃ বোস না! হরলাল কহিল—কাল রাত্রে বেণু আমার বাড়িতে এই ব্যাগ রাখিয়া গেছে । অধর। ব্যাগে কি আছে ? হরলাল বাগ খুলিয়া অধরবাবুর হাতে দিল। অধর। মাইরে ছাত্রে মিলিয়া বেশ কাররার খুলিয়াছ ক ? জঙ্গিক্ষে এ চোরাই মাল বিক্রি করিলে ধরা পড়িবে— মাষ্টার মশায় । >今ぬ তাই আনিয়া দিয়াছ—মনে করিতেছ সাধুতার জন্ত বক্শিষ পাইবে ? তখন হরলাল অধরের পত্ৰখান তাহার হাতে দিল । পড়িয়া তিনি আগুন হইয়া উঠিলেন। বলিলেন, আমি পুলিসে খবর দিব । আমার ছেলে এখনো সাবালক হয় নাই—তুমি তাহাকে চুরি করিয়া বিলাতে পাঠাইয়াছ! হয়ত পাচশো টাকা ধার দিয়া তিন হাজার টাকা লিখাইয়া লইয়াছ ! এ ধার আমি শুধিব না ! হরলাল কহিল—আমি ধার দিই নাই । অধর কহিলেন—তবে সে টাকা পাইল কোথা হইতে ! তোমার বাক্স ভাঙিয়া চুরি করিয়াছে ? হরলাল সে প্রশ্নের কোনও উত্তর দিল না। রতিকান্ত টিপিয় টিপিয়া কহিল-ওঁকে জিজ্ঞাসা করুন না তিন হাজার টাকা কেন, পাচশো টাকাও উনি কি কখনো চক্ষে দেখিয়াছেন ? যাহা হউক গহনা চুরির মীমাংসা হওয়ার পরেই বেণুর বিলাত পালানো লইয়া বাড়িতে একটা হুলস্থল পড়িয়া গেল। হরলাল সমস্ত অপরাধের ভার মাথায় করিয়া লইয়া বাড়ি হইতে বাহির হইয়া আসিল । রাস্তায় যখন বাহির হইল তখন তাহার মন যেন অসাড় হইয়া গেছে। ভয় করিবার এবং ভাবনা করিবারও শক্তি তখন ছিল না। এই ব্যাপারের পরিণাম যে কি হইতে পারে মন তাহ চিন্তা করিতেও চাহিল না । গলিতে প্রবেশ করিয়া দেখিল তাহার বাড়ির সমুখে একটা গাড়ি দাড়াইয়া আছে। চমকিয় উঠিল। হঠাৎ আশা হইল বেণু ফিরিয়া আসিয়াছে। নিশ্চয়ই বেণু! তাহার ৰিপদ যে সম্পূর্ণ নিরুপায়রূপে চূড়ান্ত হইয়া উঠিবে এ কথা সে কোন মতেই বিশ্বাস করিতে পারিল না। তাড়াতাড়ি গাড়ির কাছে আসিয়া দেখিল—গাড়ির ভিতরে তাহদের আপিসের একজন সাহেব বসিয়া আছে। সাহেব হরলালকে দেখিয়াই গাড়ি হইতে নামিয় তাহার হাত ধরিয়া বাড়িতে প্রবেশ করিল। জিজ্ঞাসা করিল আজ মফস্বলে গেলে না কেন ? * আপিসের দরোয়ান সন্দেহ করিয়া বড় সাহেবকে গিয়া জানাইয়াছে—তিনি ইহাকে পাঠাইয়াছেন । ,