পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, প্রথমাংশ).djvu/২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

& 8' চীন সাম্রাজ্য সংক্রান্ত ঘটনা সকল বিশেষভাবে আলোচনা করিয়া দেখিলে তাহার শাসনক্ষমতা ও দুরদর্শিতার বিশেষ পরিচয় পাওয়া যায়। যখন রাজ্যমধ্যে বিদ্রোহস্ৰোত প্রবলবেগে বহিতে লাগিল, তখন তিনি চীন-তরণীর কর্ণধার হইয়া দুষ্ট বিরুদ্ধ পক্ষের মধ্য দিয়া তাহা চালাইতে লাগিলেন। যেমন একদিকে জলমগ্ন পাহাড় এবং অপরদিকে ভয়ানক জলাবৰ্ত্ত থাকিলে এই দুইয়ের মধ্য দিয়া তরণী চালাইতে হইলে প্রতি মুহূৰ্ত্তেই বিপদের আশঙ্কা করিতে হয়, সেই সময়ে এই মহারাণীর পক্ষে চীন-রাজ্য-তরণী চালানও তাদৃশ ভয়াবহ কাৰ্য্য হইয়াছিল। যদিও তিনি সময় সময় তাহার তরণীকে পাহাড়সংঘর্যে লইয়া গিয়াছিলেন, সে কেবল জলাবর্ত পরিহার করিবার জন্ত । তথাপি তাহার রাজনৈতিক গতি “মিতভাবে” (moderate) ছিল। চীন সাম্রাজ্য বহু শতাব্দী হইতে বিদেশী রাজগণের সঙ্গে কোন সংস্রব রাখেন নাই। রাজ্যের প্রধান প্রধান রাজনৈতিকগণ বিদেশিগণের সঙ্গে কি প্রণালীতে ব্যবহার করিতে হয়, বর্তমান কালে অপর রাজ্য সকলের সঙ্গে ব্যবহার করিতে হইলে কি প্রকার রাজনৈতিক কৌশল অবলম্বন করিতে হয়, তাহাতে সম্পূর্ণ অনভিজ্ঞ থাকায়, সময় সময় ভয়ানক ভ্রম করিয়াছিলেন । বিদেশিগণের সঙ্গে রাজনীতিক্ষেত্রে অনেক সময়ে আহম্মকীর পরিচয় দিলেও কেবল কপটতাচরণ দ্বারা (duplicity) চীন এ যাবৎ আত্মরক্ষা করিতে সমর্থ হইয়াছেন। মহারাণী নিশ্চয়ই মনে করিয়াছিলেন যে এই উপায় ভিন্ন ইউরোপীয়গণের হস্ত হইতে রক্ষার অন্য উপায় নাই । ১৮৮৯ খৃঃ অষ্টবিংশ বর্ষ রাজ্যশাসন করার পর সম্রাজ্ঞী রাজ্যশাসনও বর্তমান সম্রাট কোয়াংশর হস্তে অর্পণ করেন। এই সময় এই বৃহৎ সাম্রাজ্য শান্তি ও সুখভোগ করিতেছিল। বিদেশিগণের জন্ত বাণিজ্যবন্দর মুক্ত হইল এবং রাজ্যে কাষ্টম হাউস বা বাণিজ্য শুল্ক-আদায়-বিভাগ স্থাপিত হইল। সম্রাট কোয়াংশুর রাজত্বের প্রথম ভাগে রাজ্যে বিশেষ কোন ঘটনা ঘটে নাই । তিনি মন্ত্রিগণের পরামর্শানুযায়ী এবং বৃদ্ধারাণীর “সাম্য” নীতি অবলম্বন করিয়া রাজ্যশাসন করিতে লাগিলেন। এ যাবৎ বোধ হইয়াছিল যে র্তাহার প্রবাসী । [ ৭ম ভাগ । নিজের বিশেষ কোন একটা মত নাই এবং রাজ্যের উন্নতিকল্পে তাহার কোন চেষ্টা নাই। ১৮৯৪ খৃঃ কোরিয়ার উপর প্রভুত্ব লষ্টয়া জাপানের সঙ্গে মতান্তর উপস্থিত হয়, তাহাতেও তিনি বিশেষ কোন খেয়াল করেন নাই। কিন্তু জাপানের সঙ্গে যুদ্ধে পরাজিত হইয় তাহার চৈতন্ত উদয় কারণ এ যাবৎ চীনারা জাপানীদিগকে কোন একটা বিশেষ জাতির মধ্যেই গণ্য করিত না । চীনারা মনে করিত যে জাপানীগণ চীন হইতে সাহিত্য, শিল্প ও হল্ম্য নিৰ্ম্মাণ প্রণালী ধার করিয়া লইয়াছে এবং তাহারা কেবল একটা অনুকরণশীল জাতি ভিন্ন আর কিছুই নহে। জাপানের জরে চীন আপন দুৰ্গতি বুঝিতে পারিল এবং সেই হইতে নিজের জাগ্রত হইতে চেষ্টা করিতে লাগিল । সম্রাট কোয়াংশি জাপানের বিজয়ে নিজেদের দুর্গতির বিষয় চিন্তা করিয়া ঘৃণায় অধীর হইলেন। তিনি মনে করিলেন যে জাপানীরা যে চীনাকে যুদ্ধে পরাভূত করিয়াছে, তাহ কেবল বিদেশী সভ্যতা ও যুদ্ধবিদ্যা অনুকরণ করিয়া। তিনি সেই জন্ত যত শীঘ্র সম্ভব আপন সাম্রাজ্যের সংস্কারকার্য্যে ব্রতী হইলেন। তিনি মনে করিলেন যে এই বৃহৎ সাম্রাজ্যকে তিনি উন্নতির পথে ধাবিত করিত্বে পারিবেন। এই আশায় রাজ্যের সমস্ত বিভাগের আমূল সংস্কারকার্য্য করিতে আরম্ভ করিলেন। তিনি বৃদ্ধারাণীর কর্তৃত্ব না মানিয়া কতকগুলি পারিষদ পরিবেষ্টিত হইয়া নানাপ্রকার নূতন বিষয় প্রচলনের মন্ত্রণা করিতে লাগিলেন। নানাপ্রকার সংস্কারকার্য্য এত দ্রুতগতিতে আরম্ভ করিলেন যে, মনে করিলেন যে অতি সত্বরই এই রক্ষণশীল জাতি উন্নতির পথে ধাবিত হইবে। রক্ষণশীল দলের কতকগুলি লোক উন্নতিশীলগণের দ্যায় আরো কতকগুলি নূতন বিষয়ের সংস্কারের প্রস্তাব করিলেন। डिंद्र ভিন্ন মতের ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তিগণ ভিন্ন ভিন্ন ধরণের সংস্কার কার্য্যের প্রস্তাব করিলেন। ইহাদের কোন কোন ব্যক্তি সম্রাজ্ঞীর “সাম্য” নীতির পথ পরিত্যাগ করিবার জন্ত সম্রাটকে পরামর্শ দিলেন। মূল কথা যাহার ষাহা ইচ্ছা সেই সেই প্রস্তাব উত্থাপন করিয়া এক গোলযোগ উপস্থিত করিল। ক্রমে রাজ্যে প্রধান দুই দলের সৃষ্টি হইয়া উন্নতিশীল দল বুদ্ধারাণীর “সাম্য” নীতি পরিত্যাগ করিবার পরামর্শ দিয়া সম্রাটকে বুঝাইতে চেষ্টা করিল যে “ঐ নীতি অত্যন্ত রক্ষণশীল উহাদ্বারা কোন হইল ।