পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, প্রথমাংশ).djvu/২৮৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૨8ર আরম্ভ করিয়াছি, আমরা এ করিব, সে করিব, আমরা ম্যাঞ্চেষ্টরের রুটি বন্ধ করিব, লিভারপুলের দুই চক্ষু জলে • ভাসাইয়া দিব। অথচ মনে মনে আমাদের ভরসাস্থল কি ? ইংরেজেরই আইন, ইংরেজেরই সহিষ্ণুতা। আইন বিচলিত হইলেই আমরা বলি এ যে মগের মুলুক হইল—মরলির মুখে লিবারেল নীতির উল্টা কথা শুনিলেই আমরা বলি এ কি পূবের স্বৰ্য পশ্চিমে উঠিল! আমার নিবেদন এই এমন অবস্থায় অভিমানকে নিজের মধ্যে দমন করিতে হইবে । সেই সংযত অভিমান মনের তলদেশ হইতে আমাদের শক্তির শিকড়ের মধ্যে তেজ সঞ্চার করিবে । এতদিন যে সমস্ত কাজ আমাদের চেষ্টাকে টানিতে পারিত না, সেই সমস্ত কাজে আজ মন দিবার মত ধৈর্য্য আমাদের জন্মিবে। কাজের কি অস্ত আছে! আমরা কিছুই কি করিয়াছি ! একবার সত্য করিয়া ভাবিয়া দেখ দেশ আমাদের হইতে কত দূরে, কত সুদূরে! আমাদের “ঘর হইতে আঙিন বিদেশ।” সমস্ত ভারতবর্ষের কথা ভাবিলেত মাথা ঘুরিয়া যায়—শুদ্ধ মাত্র বাংলাদেশের সঙ্গেও আমাদের সম্পর্ক কত ক্ষীণ ! এই বাংলাদেশও জ্ঞানে প্রেমে কৰ্ম্মে আমাদের প্রত্যেকের হইতে কতই দূরে! ইহার জন্ত আমরা কতটুকুই বা দিতেছি, - কতটুকুইব করিতেছি এবং ইহাকে জানিবার জন্তই বা আমাদের চেষ্টা কত সামান্ত ! নিজের মন এবং ব্যবহার সত্যরূপে আলোচনা করিয়া সত্য করিয়া বল দেশের প্রতি আমাদের ঔদাসীন্য কি সুগভীর। ইহার কোন দুঃখে কোন অভাবে কোন সৌন্দর্ঘ্যে কোন সম্পদে আমাদের চিত্তকে এমন করিয়া আকর্ষণ করিয়াছে যে নানাদিক হইতে আমাদের নানা লোক তাহার প্রতি আপন সময় ও সামর্থ্যের বহুল অংশ ব্যয় করিতে প্রবৃত্ত হইয়াছে । আমরা শিক্ষিত কয়েকজন এবং আমাদের দেশের বহুকোটি লোকের মাঝখানে একটা মহাসমুদ্রের ব্যবধান। ত্রেতাযুগের সেতুবন্ধনে কাঠবিড়ালী যতটুকু কাজ করিয়াছিল আমাদের মাঝখানের এই সমুদ্রে সেতু বাধিতে আমরা ততটুকুও করি নাই। সকল বিষয়ে সকল কাজই বাকি পড়িয়া আছে। অথচ এমন সময়ে আমাদের মনে কুর্দান্ত অভিমান জাগিয়া উঠিয়াছে। ইংরেজকে ডাকিয়া বুক ফুলাইয়া প্রবাসী । ৭ম ভাগ । বলিতে ইচ্ছা করিতেছে, আমরা সম্পূর্ণ সক্ষম, সমর্থ, প্রস্তুত । আমরা কোনোমতেই তোমাদের অবজ্ঞার পাত্র নই। তোমরা যদি আমাদিগকে অবজ্ঞা কর আমরাও তোমাদিগকে অবজ্ঞা করিতে পারি। এই কটা কথা খুব জোরে বলিবার সুখই যদি আমাদের দেশের পক্ষে যথেষ্ট হয় তবে এই পালাই চলুক। কিন্তু এখনি আমরা সমস্তই পারি এই ভুলটা প্রচার করিয়া ও বিশ্বাস করিয়া ভবিষ্যতে আমরা যাহা পারিব তাম্বর গোড়া যদি মারিয়া দিই তবে আমাদের অদ্যকার সমস্ত অক্ষালন একদিন তিতুমীরের লড়াইয়ের সঙ্গে এক ইতিহাসে ভুক্ত হইবে। • বড়াই করিয়া নিজের ও অষ্ঠের কাছে দুৰ্ব্বলতা ঢাকিতে গিয়া সেই দুৰ্ব্বলতাকে প্রতিপদে স প্রমাণ করিতে থাকিলে এমন একদিন আসিবে যে দিন আমরা নিজেকে অদ্যায়রাপে অবিশ্বাস করিব—নিজের মধ্যে যে সম্ভাব্যতা আছে তাহাকে অস্বীকার করিব-স্বজাতিকে গালি পাড়িয়া নিষ্কৰ্ম্মতাকে আড়ম্বর পূর্বক আশ্রয় করিব—অকালে উৎপীড়ন সহ করিয়া আরামের মধ্যে হাল ছাড়িয়া দিতে চেষ্টা করিব। অতএব পুরুষোচিত ধৈৰ্য্যের সহিত অভিমানের প্রমত্ততাকে একেবারে দূর করিয়া কাজে প্রবৃত্ত হইবে । দেশ আজ আমাদিগকে এই কথা বলিতেছে যে, আমরা কতখানি রাগ করিয়াছি আমরা কত বড় ভয়ঙ্কর সে অালোচনায় কাহারো কোনো লাভ নাই ; কৰ্জন আমাদিগকে কেমনু করিয়া মারিয়াছেন এবং মরলি আমাদের কান্নার উপর কত বড় অন্তায় ধমকটা দিলেন সে কথা লইয়া অনবরত একসভা. হইতে আর এক সভায় এক কৗগস-বইতে আর এককাগজে মুষলধারে অশ্রুবর্ষণ করিয়া কোনো ফল নাই। এখন স্পষ্ট করিয়া বল কি কাজ করিতে হইবে ? আচ্ছা মানিলাম স্বরাজই আমাদের শেষ লক্ষ্য, কিন্তু কোথাও ত তাহার একটা সুরু অাছে, সেটা একসময়ে ত ধরাইয়া দিতে হইবে। স্বরাজ ত আকাশকুসুম নয়, একটা কাৰ্য্যপরম্পরার মধ্য দিয়া ত তাহাকে লাভ করিতে হইবে—নুতন বা পুরাতন বা যে দলই হউন, তাহদের সেই কাজের তালিকা কোথায়, র্তাহীদের প্ল্যান কি, তাহদের আয়োজন কি ? কৰ্ম্মশূন্ত । উত্তেজনায় এবং অক্ষম আস্ফালনে একদিন একান্ত ক্লাস্তি ও