পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, প্রথমাংশ).djvu/২৯৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫ম সংখ্যা । ] -- همه به همراه همسایهها معمه میده টানিয়া সহরময় ঘুরিয়া বেড়াইল এবং সমস্বরে গাহিতে লাগিল— ওদের স্বাধন যতই শক্ত হবে, মোদের স্বাধন ততই টুটবে। ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ । সেদিন ডেপুটি বাবু ক্ষুণ্ণ মনে গৃহে প্রত্যাবর্তন করিলেন। চোর যেন চুরি করিয়া ফিরিল। খুনী যেন খুন করিয়া জাসিয়াছে। ডেপুটি বাবুর চক্ষু অবনত, মুখ কালিমাময়। .গৃহে আসিয়া দেখিলেন, চারুশীলা মুখখানি বিমর্ষ করিয়া, চুপ করিয়া, বারান্দার কোণে বসিয়া আছেন। ডেপুটি বাবু বুঝিলেন এ বিমৰ্ষতার কারণ কি। বস্ত্র পরিবর্তন করিয়া, স্ত্রীর নিকট অগ্রসর হইয়া, জিজ্ঞাসা করিলেন—“কি গো, অমন করে বসে কেন ?” চারুশীলা নিরুত্তর । “কি হয়েছে ?” “মাথাটা ধরেছে।” “মাথা ধরেছে ? কখন ধরল ? এস দেখি, রুমালে একটু ওডিকলোন ভিজিয়ে মাথায় বেঁধে\দিষ্ট এথনি সেরে যাবে।” চারুশীলা স্বামীর দিকে না চাহিয়া বলিলেন,—“থাক, দরকার নেই।” ভাব গতিক দেখিয়া, নগেন্দ্র বাবু সরিয়া গেলেন। দাসী তাহার চা ও জলখাবার অনিয়া দিল । অন্যদিন গৃহিণী এ সময় উপস্থিত থাকিতেন, আজ তিনি অনুপস্থিত । নগেন্দ্র বাবু জল খাবার খাইতে গেলেন, কিন্তু তাহ গল। দিয়া যেন নামিতে চাহে না । বুকের ভিতরটা কে যেন পাথর বোঝাই করিয়া দিয়াছে । জল খাবার ফেলিয়া রাখিয়া, কেবল চ টুকু নিঃশেষে পান করিলেন। তাহার. পর অনেকক্ষণ ধরিয়া ধূমপান করিলেন। শেষে, উঠিয়া, অপরাধীর মত, আবার স্ত্রীর নিকট গেলেন। তিনি তখনও সেইরূপ ভাবেই বসিয়া আছেন। ধীরে ধীৰুে বলিলেন—“মাথাটা একটু সারল ?” চারুশীলা সম্বেতে জানাইলেন, সারে নাই। মগেন বাবু তাহার হাতটি ধরিয়া বলিলেন—“এস এস উঠে এল। প্লাজ একটা ভাল খবর আছে, বলৰ মনে খালাস । ২৫৩ করে কত আমোদ করে এলাম, আর তুমি রাগ করে বসে রইলে ।” স্বামীর আগ্রহাতিশয্যে চারুশীলা উঠিয়া আসিলেন । নগেন বাবু বলিলেন—“আজ সাহেব আমার ৫•N বেতন বৃদ্ধির জন্তে কমিশনর সাহেবকে অনুরোধপত্র লিখেছেন।” এ কথা শুনিয়া, চারুশীলার চক্ষুযুগল দিয়া প্রবলবেগে অশ্র বহিল । - নগেন বাবু বলিলেন—“ওকি, চোখের জল ফেল কেন ?” বলিয়া একহাতে স্ত্রীর হাতটি ধরিয়া, অন্ত হাতে চোখের জল মুছাইতে চেষ্টা করিলেন। চারুশীলা হাত ছাড়াইয়া লইয়া বলিলেন—“ওগো আজ আমায় মাফ কর । আজ আমার কাছে এস না, কোনো ও কথা বলে না।" বলিয়া তিনি চলিয়া গেলেন । নগেন্দ্র বাবু বাহিরে বারান্দায় আসিয়া বসিলেন। আর একবার তামাকের হুকুম করিলেন । ধূমপান করিতে করিতে র্তাহার মানসিক অশান্তি আরও বন্ধিত হইয়া উঠিল । মনে হইল, যে দিন কৰ্ম্মে প্রবেশ করিয়াছিলেন, সে দিন কি ছিলেন, আর আজ কি হইয়াছেন। আজ চারুশীলা তাহাকে কাছে আসিতে কথা কহিতে বারণ করিয়াছে। . আজ তিনি পতিত, কলঙ্কিত। পবিত্র বিচারাসনে বসিয়া, জানিয়া শুনিয়া, আজ তিনি অবিচার করিয়া আসিয়াছেন। আজই কি প্রথম ?—কিসের জন্ত ? কেবল দগ্ধোদরের জন্ত । বহুবর্ষব্যাপী শিক্ষা সাধনার ফল, ধৰ্ম্মবুদ্ধি,বিবেক, কর্তব্যনিষ্ঠ,—শুধু দগ্ধোদরের জন্ত ভাসাইয়া দিয়াছেন। ছি! ছি! পূৰ্ব্বকালে অৰ্দ্ধশিক্ষিত, অশিক্ষিত ডেপুটির ঘুষ লইত। তাহাদের মার্জন ছিল। মুশিক্ষাভিমানী নগেন্দ্র বাবু গবর্ণমেণ্টের নিকট হইতে পদবৃদ্ধিস্বরূপ ঘুৰ লইয়া বিচারাসন কলঙ্কিত করিয়াছেন। তাহার কি মার্জনা আছে ? to * ডেপুটি বাবু এই সকল কথা মনে মনে চিন্তা করিয়া, অনুতাপে দগ্ধ হইতে লাগিলেন। শেষে অস্থির হইয়া, উঠিয়া পড়িলেন। চাদর লইয়া বেড়াইতে বাহির হইলেন। অন্ধকার অন্ধকার পথ খুজিয়া সেই পথগুলিতে অনেকক্ষণ বেড়াইলেন । সারারাত্রি ভাল নিদ্রা হইল না।