পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, প্রথমাংশ).djvu/৩০২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫ম সংখ্যা । ] | "সত্য। হাইকোর্টে মোশন হইবে, তাহার খরচও বহন করিতে আমার স্ত্রী প্রস্তুত হইয়াছেন।” সাহেব নিজ স্থৈৰ্য্য আর রক্ষা করিতে পারিলেন না। আবার তাহার মুখ রক্তবর্ণ হষ্টয়া উঠিল। বলিলেন— “এটা কি গভর্ণমেণ্টের বিরুদ্ধাচরণ নয় ?” নগেন্দ্র বাবু অত্যন্ত গম্ভীর হষ্টয়া বলিলেন—“সম্ভবতঃ, কিন্তু ঈশ্বরকে ধন্যবাদ, আমার স্ত্রী গভর্ণমেণ্টের চাকর নহেন ।” ক্রোধের সহিত বিস্ময় ভাবও সাহেবেয় মনে আধিপত্য করিতে লাগিল। তিনি এত দিন চাকরি করিতেছেন, এ প্রকার তেজের কথা ত বাঙ্গালীর মুখে অদ্যাবধি শুনেন নাই। সাহেব বুঝিলেন, আজ নগেন্দ্র বাবু তাহাকে অপমান করিবার জন্ত বদ্ধপরিকর হইয়াছেন। আচ্ছ, তাহার অমোঘ ঔষধও সাহেবের কাছে আছে । তাহা প্রয়োগ করিলে চাকরিগতপ্রাণ বাঙ্গালী এখনি নতজানু হইয়া সাহেবের ক্ষমা ভিক্ষা করিবে । এই ভাবিয়া তিনি বলিলেন—“সে কথা যাউক । আজ যে জন্য আপনাকে ডাকিয়াছি তাহা ༈ཨེ । সম্প্রতি আপনার কাজকৰ্ম্মে অত্যন্ত শিথিলতা দেখা যাইতেছে। আপনি যদি এখনি সাবধান না হন, তবে আপনার বেতন বৃদ্ধির অনুরোধ পত্র আমাকে ত প্রত্যাহার করিতে হইবেই, হয় ত বা আপনাকে ডিগ্রেড, করিতেও বাধ্য হইতে পারি।” এই কথা বলিয়া সাহেব নগেন্দ্র বাবুর মুখের পানে সাগ্রহে দৃষ্টিপাত করিলেন—ঔষধ ধরিল কি না। বাবুর মুখ নিশ্চয়ই ভয়ে বিবর্ণ হইয়া যাইবে এবং তিনি ক্ষমা প্রাপ্তির अछ श्रांकूण झहेब्रां ऊँटैिवनी কিন্তু তাহ হইল না । নগেন্দ্র বাবুর মুখে, অল্পে অল্পে, একটু ঘৃণামিশ্রিত হাস্তরেখা ফুটিয়া উঠিল। তিনি বলিলেন, —“তাহা স্বচ্ছদে আপনি করিতে পারেন । কারণ উহাতে আমার কোনই ক্ষতি হইবে না।” সাহেব অধিকতর আশ্চৰ্য্য হইয়া বলিলেন—“তাহার अर्षकि ?” « » “আমি স্থির করিয়াছি, কৰ্ম্ম হইতে অবসর গ্রহণ করিব। জভই আফিসে আমার গ পত্র আপনার হস্তগত হইবে। আমাকে মাসান্তে যাহাতে বিদায় দিতে পারেন, খালাস । ২৫৭ বিলম্ব না হয়, অনুগ্রহপূর্বক সে চেষ্টা করিলে অত্যন্ত বাধিত হইব ।” শুনিয়া, সাহেব যেন আকাশ হইতে পড়িলেন। বাঙ্গালী ! বাঙ্গালী হইয়া, এত বড় চাকরিট, এক কথায় ছাড়িতে উদ্যত হইয়াছে ? নগেন্দ্র বাবু পকেট হইতে ঘড়ি খুলিয়া দেখিলেন। দেখিয়া, দণ্ডায়মান হইয়া বলিলেন--“আমি আর আপনার সময় নষ্ট করিব না । গুডমৰ্ণিং।” সাহেব অন্তমনস্ক হইয়া, দাড়াইয়া উঠিয়া, বলিলেন— “গুডমৰ্ণিং ।” 繁 彎 嘯 একমাস কাটিল । আজ নগেন্দ্র বাবুর চাকরির শেষ দিন । বৈকাল বেলা দেখা গেল, তাহার এজলাসের বাহিরে বহুসংখ্যক ইস্কুলের বালক সমবেত হইয়াছে। অনেকের হাতে বন্দে মাতরম্ ধ্বজ । তিনি বাহির হইবা মাত্র বালকেরা তাহাকে পুষ্পমালো বিভূষিত করিল। একথান ফিটন গাড়ী আনিয়াছিল। তাহাতে নগেন্দ্র বাবুকে আরোহণ করিতে অনুরোধ করিল। কিন্তু নগেন্দ্র বাবু সন্মত হইলেন না। বালকের জিদ করিতে লাগিল। বলিল ঘোড়া খুলিয়া আজ র্তাহাকে তাহারা টানিয়া লইয়া যাইবে। পথ দিয়া একজন গ্ৰাম্য ও একজন নাগরিক নিরক্ষর লোক যাইতেছিল। ব্যাপার থানা বুঝিতে না পারিয়া গ্রাম্য ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করিল—“একি, বাহে ? বাবুর সাদি নাকি?” নাগরিক ব্যক্তি উত্তর কঞ্জিল—“আমার পছন্দ হয়, বাবুর জ্যাল হয়েছিল, আজ খালাস হইছে।” এ দিকে, বালকের নগেন্দ্র বাবুকে টানিবার জন্ত বিস্তর পীড়াপীড়ি করিল, কিন্তু নগেন্দ্রবাবু কিছুতেই রাজি হইলেন না ; অন্যদিনের মতই পদব্রজে গৃহে প্রত্যাবর্তন করিলেন । দুইমাস ব্যাপী বিচ্ছেদের পরে আজ স্বামী স্ত্রীর মধ্যে পুনৰ্ম্মিলন সংঘটিত হইল। শ্ৰীপ্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়।