পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, প্রথমাংশ).djvu/৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२b “স্থিত। নাড়ীমুখে যন্ত বিছাজ্যোতিরিবেক্ষতে। দিনৈকং জীবিতং তস্ত, দ্বিতীয়ে মরণং ধ্রুবম্ ॥ কল্য ইহার মৃত্যু নিশ্চিত ; অতএব ঔষধ প্রয়োগ বিফল ।” বৈদ্যরাজ চক্রদত্ত নিস্ক্রয়নিষ্কচতুষ্টয় গ্রহণ করিয়া প্রস্থান করিলে, অর্থনাশশোককাতর হতাশাজীবিত মণিভদ্র একেবারে শুইয়া পড়িল । মাধবিক মুখে কাপড় দিয়া ফুপিয়া ফুলিয়া লুষ্ঠিত হইতে লাগিল ;–সে লুণ্ঠন ক্ৰন্দনজষ্ঠ বা হান্তহেতুক তাঙ্গ সে এবং অন্তৰ্য্যামী ভিন্ন সঠিক কেহ জানে না । কথঞ্চিং সংবৃতশোকা মাধবিক স্বামীর শেষ আহারের জন্ত নানাবিধ পিষ্টক পায়স প্রস্তুত করিয়া স্বামীকে খাইতে দিল, পুনরায় অনর্থক অর্থ নাশ দেখিয়া মণিভদ্র খেদে, ক্ষোভে খাদ্য স্পর্শ করিল না । দুশ্চিন্তাব্লিষ্ট মণিভদ্র শয্যায় পড়িয়া সমস্ত রাত্রি শুধু পার্শ্বপরিবর্তন করিতে লাগিল, ভোরের দিকে একটু তন্দ্রাবেশ হইতেই স্বপ্ন দেখিল—যেন সে নরকের ভয়াকুল প্রকোষ্ঠে বসিয়া পরপীড়নসঞ্চিত দীপ্তানলসংপ্ৰেক্ষ্য মুদ্রা গণিতেছে,—সেই মুদ্রাগুলি স্বর্ণকাস্তি অগ্নিথও ; হাতে লইতেই জালায় অস্থির হইয়া ফেলিয়া দিতেছে ; আর অমনি এক বিকটদংষ্ট্র যমদূত বহ্নিশিখার কশা লইয়া তাহাকে তাড়না করিতেছে ; এবং সে যন্ত্রণায় চীৎকার করিয়া উঠিতেছে। বাস্তবিক চাৎকারে তাহার তন্দ্র টুটিয়া গেল। পাশ্বশয়ানা পত্নী আস্তে বাস্তে উঠিয়া কারণ জিজ্ঞাসা করিল। মণিভদ্র বলিল, “কিছু নহে স্বপ্ন ’। মাধবিকা কপালে করাঘাত করিয়া কহিল, ‘হায় হায়, স্বপ্ন নহে গো স্বপ্ন নহে ; এ যে দেখিতেছি ঘোর বিকার—সান্নিপাতিই । মণিভদ্র তাড়াতাড়ি উঠিয়া আপনার ੋ। দেখিল, কিছু ঠিক করিতে পারিল না। ভোরের শীতল বাতাসে তাহার কিন্তু বেশ স্বস্থ বোধ হইতেছিল। সমস্ত দিন এইরূপ সন্দেহে, ভয়ে কাটিয়া গেল। যখন বেলা পড়িয়া আসিতে লাগিল তখন জ্যোতিষীর ও বৈদ্যরাজের ভবিন্যবাণী তাহাকে নিতান্ত ব্যাকুল করিয়া তুলিল। সে তাড়াতাড়ি আপনার বাণিজ্য স্থানে চলিয়া গেল । সে মনে করিল মুদ্রার মনোহররূপে সকল যন্ত্রণ মিমাজ্জত করিয়া দিবে ; কিন্তু সমস্ত দিনের অনাহারে প্রবাসী । [ ৭ম ভাগ । উদ্বেগে উৎকণ্ঠাকুল চিত্তে অবসন্ন হইয়া পড়িতেছিল। অতি কষ্টে আপনাকে টানিতে টানিতে কৰ্ম্মস্থলে সন্ধ্যার সময় উপনীত হইল। সন্ধ্যা হইল তবু মরিল না দেখিয়া সে উৎফুল্ল হইতেছিল, কিন্তু হায়, বিধিবিড়ম্বন৷! সে আপন বিপণিতে উপস্থিত হইবা মাত্র দ্বারবান দ্বার ছাড়িয়া, ভূত্য গৃহমার্জন অসমাপ্ত রাখিয়া, লেখক কৰ্ম্মচারী তাহাদের লেখ্য-লেখনী ফেলিয়া, মহা চীৎকার করিতে করিতে অতি ভীতভাবে উৰ্দ্ধশ্বাসে পলায়ন করিল। সে যত তাহাদিগকে ফিরাইবার জন্য ডাকে, তাহারা তত ভীত হইয়া দৌড়ায়। অবশেষে তাহারা অদৃপ্ত হইয়া গেল। তখন বিস্ময় ও বিরক্তিতে মুহমান মণিভদ্র লৌহ মঞ্জুষাগুলির তালককুঞ্চিক ভাল করিয়া পরীক্ষা করিয়া সকল গবাক্ষদ্বার রুদ্ধ করিয়া উদঘাটিনী কুঞ্চিক সকল কটিবন্ধে সমৃদ্ধ করিয়া অনিশ্চিত ব্যাকুলচিত্তে আপন গৃহাভিমুখে যাত্রা করিল। পথে দেখিল বৈদ্য চক্রদত্ত এবং জ্যোতিষী কঙ্কটভট্ট কথোপকথন করিতেছে। কোপপ্রজ্বলিত মণিভদ্র তাহীদের সহিত আলাপ করিতে ইচ্ছা না করিয়া যেমন পাশ কাটাইয়া যাইবে, অমনি শুনিল, বৈদ্য চক্রদত্ত বলিতেছে— “অহে লিপির-ললাটন্তপ-নিষ্ঠুরাক্ষর'—এমন সহসা মণিভদ্র মৃত্যুকবলিত হইল ? কাল আমি যখন আহূত হইয়াছিলাম, তখন একেবারে শেষাবস্থা ; ধন্বন্তরির অসাধ্য রোগ ! আহা, লোকটি অর্থকামুকতার জন্তই মারা গেল ; পুৰ্ব্বাহ্লে চেষ্টা করিলে কি হইত বলা যায় না।” মণিভদ্র ইহা শুনিয়া প্রথমত স্তম্ভিত হইল। কিন্তু পরে মনে করিল, এই প্রসঙ্গপাত্র সমাননাম আর কেহ । কিন্তু আবার গুনিল যে, জ্যোতিষী কঙ্কটভট্ট বলিতেছে—“কবি বলিয়াছেন, ‘লিপির-ন দৈবী সুপঠ। ভুবীতি’। কিন্তু দেবগুরুপ্রসাদে বৈধসীলিপি পাঠ করিবার ক্ষমতা আমার আছে। অর্থকামুকতা ত্যাগ করিয়া যদি বিরুদ্ধ গ্রহচতুষ্টয়ের শাস্তি করিত, তবে বেচারা হয় ত’ বাচিতে পারিত” । এখন মণিভট্রের আর সন্দেহ রহিল না যে প্রসঙ্গীপাএ সে স্বয়ং। সে তবু বিমূঢ়ভাবে তাহাদের নিকটে তত্ত্বজিজ্ঞাসু হইয়া উপস্থিত হইতেই, তাহারা সঙ্কটাও রামস্তোত্র আবৃত্তি করিতে করিতে পলায়ন করিল।