পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, প্রথমাংশ).djvu/৩৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫ম সংখ্যা। ] . . . তাড়াতাড়ি তুলিয় রইল। তাহার মনের মধ্যে বাউলের স্বরে ঐ গানটা বাজিতে লাগিল— খাচার ভিতর অচিন পার্থী কমূনে আসে যায় । বেলা বাড়িয়া চলিল, বর্ষার রৌদ্র প্রখর হইয়া উঠিল, গাড়ির স্রোত আপিসের দিকে বেগে ছুটতে লাগিল, বিনয় তাছার দিনের কোনো কাজেই মন দিতে পারিল না। এমন অপূৰ্ব্ব আনন্দের সঙ্গে এমন নিবিড় বেদন তাহার বয়সে কখনো সে ভোগ করে নাই। তাহার এই ক্ষুদ্র বাসা এবং চারিদিকের কুৎসিৎ কলিকাতা মায়াপুরীর মত হইয়া উঠিল,৮–৪ষ রাজ্যে অসম্ভব সম্ভব হয়, অসাধ্য সিদ্ধ হয়, এবং অপরূপ রূপ লইয়া দেখা দেয় বিনয় যেন সেই নিয়মছাড়া রাজ্যে ফিরিতেছে। এই বর্ষা প্রভাতের রৌদ্রের দীপ্ত আভা তাহার মস্তিষ্কের মধ্যে প্রবেশ করিল, তাহার রক্তের মধ্যে প্রবাহিত হইল—তাহার অন্তঃকরণের সম্মুখে একটা জ্যোতিৰ্ম্ময় যবনিকার মত পড়িয়া প্রতিদিনের জীবনের সমস্ত তুচ্ছতাকে একেবারে আড়াল করিয়া দিল। বিনয়ের ইচ্ছা করিতে লাগিল নিজের পরিপূর্ণতাকে আশ্চৰ্য্যরূপে প্রকাশ করিয়া দেয়, কিন্তু তাহার কোনো উপায় না পাইয়া তাহার চিত্ত পীড়িত হইতে লাগিল । অত্যন্ত সমান্ত লোকের মতই সে আপনার পরিচয় দিয়াছে—তাহার বাসাটা অত্যন্ত তুচ্ছ, জিনিষপত্র নিতান্ত এলোমেলো, বিছানাট পরিষ্কার নয়, কোনো কোনো দিন তাহার ঘরে সে ফুলের তোড়া সাজাইয়া রাখে কিন্তু এম্নি দুর্ভাগ্য সেদিন তাহার ঘরে একটা ফুলের পাপড়িও ছিল না ; সকলেই বলে বিনয় সভাস্থলে মুখে মুখে যেরূপ সুন্দর বক্তৃতা করিতে পারে কালে সে একজন মস্ত বক্তা হইয়া উঠিবে কিন্তু সেদিন সে এমন একটা কথাও বলে নাই যাহাতে তাহার বুদ্ধির কিছুমাত্র প্রমাণ হয়। তাহার কেবলি মনে হইতে লাগিল, যদি এমন হইতে পারিত যে সেই বড় গাড়িটা যখন তাহদের গাড়ির উপর আসিয়া পড়িবার উপক্রম করিতেছে আমি বিদ্যুদ্বেগে রাস্তার মাঝখানে আসিয়া অতি অনায়াসে সেই উদাম জুড়ি ঘোড়ার লাগাম ধরিয়া থামাইয়া দিতাম! নিজের সেই কাল্পনিক বিক্রমের ছবি যখন তাহার মনের মধ্যে জাগ্রত হইয়া উঠিল তখন একবার আয়নায় নিজের চেহারা না গোর । মুথের দিকে চাহিল। \;് മ ۰.۰.۰۰۰ - ۰ مه ۰ - ۰ ماه مه ۶-----۰۰۰،۰۰۰. দেখিয়া থাকিতে পারিল না—দেখিয়া মাথা নীড়িল—তাহার দেহরচনা সম্বন্ধে বিশ্বকৰ্ম্মার অবহেলায় মনে মনে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হইয় বারান্দায় আসিয়া দাড়াইল । এমন সময় দেখিল একটি সাত আট বছরের ছেলে রাস্তায় দাড়াইয় তাহার বাড়ির নম্বর দেখিতেছে। বিনয় উপর হইতে বলিল,-“এই যে, এই বাড়িই বটে।” ছেলেটি যে তাহারই বাড়ির নম্বর খুজিতেছিল সে সম্বন্ধে তাহার মনে সন্দেহ মাত্র হয় নাই । ত\ভূত" " উপর চটজুতা চট্‌ চট্‌ করিতে করিতে নীচে নামিয়া গেল— অত্যন্ত আগ্রহের সঙ্গে ছেলেটিকে ঘরের মধ্যে লষ্টয় তাহার সে কহিল—“দিদি আমাকে পাঠিয়ে দিয়েছে।” এই বলিয়া বিনয়ভূষণের হাতে এক পত্র দিল । বিনয় চিঠিখানি লষ্টয় প্রথমে লেফাফার উপরটাতে দেখিল, পরিষ্কার মেয়েলি ছাদের ইংরেজি অক্ষরে তাহার নাম লেখা। ভিতরে চিঠিপত্র কিছুই নাই কেবল কয়েকটি টাকা আছে। ছেলেটি চলিয়া যাইবার উপক্রম করিতেই বিনয় তাহাকে কোনোমতেই ছাড়িয়া দিল না । তাহার গলা ধরিয়া তাহাকে দোতালার ঘরে লইয়া গেল । ছেলেটির রং তাহার দিদির চেয়ে কালে কিন্তু মুখের ছাদে কতকটা সাদৃশু আছে। তাহাকে দেখিয়া বিনয়ের মনে ভারি একটা স্নেহ এবং আনন্দ জন্মিল । ছেলেটিও বেশ সপ্রতিভ। সে ঘরে ঢুকিয়া দেয়ালে একটা ছবি দেখিয়াই জিজ্ঞাসা করিল—“এ কার ছবি ?” বিনয় কহিল—“এ আমার একজন বন্ধুর ছবি ?” ছেলেটি জিজ্ঞাসা করিল—“বন্ধুর ছবি ? আপনার বন্ধু কে ?” - বিনয় হাসিয়া কহিল,-“তুমি তাকে চিনবে না। আমার বন্ধু গৌরমোহন, তাকে গোরা ৰলি । আমরা ছেলেবেলা থেকে একসঙ্গে পড়েচি।” “এখনো পড়েন ?” “না এখন আর পড়িনি।” “আপনার স-ব পড়া হয়ে গেছে ?” - বিনয় এই ছোট ছেলের কাছেও গৰ্ব্ব করিবার প্রলো