৫ম সংখ্যা । ] , ছিল, এবং সেই জন্যই নরনারী সাধারণের জন্য সমানভাবে খাটিয়া গিয়াছেন। নারী চরিত্রে তাহার অবিচলিত শ্রদ্ধা ছিল। শিক্ষা পাইলে রমণীও যে পুরুষদিগের ছায় জ্ঞানে ধৰ্ম্মে উন্নত হইতে পারেন ইহা তাহার আস্তরিক বিশ্বাস ছিল এবং সেই বিশ্বাস বলেই তিনি তাহাদের জন্ত পূর্ণপ্রাণে খাটিয়া গিয়াছেন। ‘বামাবোধিনী সেই বিশ্বাস ও আত্মোৎসর্গের অন্ততম ফল। পয়তাল্লিশ বৎসর এই কাৰ্য্যে তিনি তিল তিল, করিয়া নীরবে আত্মবলিদান করিয়াছেন, ইহাতে সহানুভূতি করিবার বা সংবাদ লইবার বেশী কেহ ছিল না। মানব সমাজে র্যাহারা অবস্থাপন্ন, তাহীদের জ্ঞান ধৰ্ম্মনীতি লাভের জন্ত ত থাটিয়াছেনষ্ট, যাহার দীন দরিদ্র এবং অঙ্গহীন তাহীদের জন্যও তাহার প্রাণ র্কাদিয়াছে। তাহার মূকবধির বিদ্যালয় তাহার উদার ও প্রশস্ত হৃদয়ের পরিচয় দান করিতেছে। যখন তিনি সিটি কলেজের একটী ক্ষুদ্র কক্ষে ইহার প্রথম স্বত্রপাত করেন তখন তিনি আশাও করিতে পারেন নাই যে পরিণামে তিনি ইহাকে এমন গৌরবের জিনিষ করিয়া তুলিতে পরিবেন। তিনি ব্ৰহ্ম নামে বীজ বপন করিলেন এবং ব্ৰহ্ম কৃপার উপর নির্ভর করিয়া একান্ত চিত্তে সরল প্রাণে থাটিয়া যাইতে লাগিলেন। না অর্থ, না ছাত্র, না শিক্ষক, মৃদ্ধ অাশা ও বিশ্বাস বলে নিষ্ঠার সহিত কাজ করিতে লাগিলেন । বৎসরের পর বৎসর লোকের দ্বারে দ্বারে ঘুরিয়া ছাত্র সংগ্ৰহ করিতে লাগিলেন। এ দেশে উপযুক্ত শিক্ষক পাওয়া যায় না, আর কেহ হইলে এই একটা মাত্র ঘটনাতেই তাহার সমস্ত উছম ও উৎসাহ জল করিয়া ফেলিত। কিন্তু তিনি ভীত বা নিরুৎসাহ হইবার লোক ছিলেন না। তিনি বিদ্যালয়ের বর্তমান অধ্যক্ষ মহাশয়কে “ইংলণ্ডে পাঠাইয় তাহাকে সুশিক্ষিত করির আনিলেন। এ দিকে অর্থ সংগ্রহের জন্ত বিপুল অধ্যবসায় সহকারে পরিশ্রম করিতে লাগিলেন। মিউনিসিপালিটির সাহায্যে এবং গবর্ণমেণ্টের সহানুভূতি লাভে কৃতকাৰ্য হইয়া বিদ্যালয়ের একটী বাড়ীর জন্ত উদ্যেগী হইলেন। দেশের সম্রাস্ত এবং মধ্যবিত্ত লোকেরাও র্তাহার সহায়তা করিতে লাগিলেন ; এবং একটা সুন্দর সুগ্রশস্ত বিদ্যামন্দির তাহার অকাতর জাম্বদানের পুরস্কার স্বরূপ উখিত হইল । প্তাহার স্ত্রনাথবন্ধ সমিতি এবং গিরিশ দাতব্যভাণ্ডার উমেশচন্দ্র দত্ত ।
- నవ)
হইতে কি কম দীন দরিদ্র অনাথ ও অসহায় বিধবা'জন সাহায্য লাভ করিয়াছে ? তাহার এই সমস্ত কার্য্যে পরলোকগত বাবু শ্ৰীনাথ সিংহ মহাশয় তাহার দক্ষিণ হস্ত, সম্ভবতঃ মুকবধির বিদ্যালয়ের স্বত্রপাত স্বরূপ ছিলেন। হইতে উমেশচন্দ্র আপনার এই অনুরূপ আড়ম্বরপূন্ত কৰ্ম্মী গুরুষের সহায়তা লাত করিয়াছিলেন ; মৃত্যু পৰ্য্যন্ত ইহার এই মধুর যোগসুত্র অবিচ্ছিন্ন ছিল। মাঘোৎসব উপলক্ষে দরিদ্রদিগের মধ্যে যে অর্থ বিতরিত হইত, উমেশচন্দ্র তাহার একজন প্রধান উদ্যোগী ছিলেন। অল্প দিন হইল জয়নগর মজিলপুর প্রভৃতি স্থানে ঘোরতর অন্নকষ্ট উপস্থিত হয়। উমেশচন্দ্র উদ্যোগী হইয় একটী কমিটি স্থাপন করেন, এবং অর্থসাহায্যদানে অনেক লোকের জীবন রক্ষা করিয়াছিলেন। এতদ্ব্যতীত তাহার নীরব গুপ্তদানের কথা কে বলিয়া উঠিতে পারে? তিনি ধনী ছিলেন না, কিন্তু পর্যুঃখ নিবারণে র্তাহার হস্ত নিয়ত মুক্ত ছিল। আমাদের দেশে উচ্চ নাচ, জ্ঞানী অজ্ঞানী অধিকাংশ লোকেই অল্পবিস্তর মাদক সেবন করিতে করিতে বীভৎসরূপে মনুষ্যত্ব বিসর্জন দিয়া থাকেন। যাহতে এক বিন্দু মনুষ্যত্ব লাভ হয়, তাহতে এক তিল যত্ন নাই, কিন্তু পশুভাবাপন্ন হইয়া মরিবার জন্ত মানবসন্তান লালায়িত, সত্য সত্যই এ দৃশু ভয়ঙ্কর ৷ স্বদ্ধ অজ্ঞান ও অশিক্ষিত লোকেরা মোহের বশীভূত হইয়া মাদকসেবী হইয়া পড়িতেছে তাহ নয় কিন্তু জ্ঞানগৌরবে যাহাঁদের মস্তক উন্নত তাহারাও যখন হিতাহিতজ্ঞানশূন্ত হইয়া তুচ্ছ আমোদপিপাসায় মাদকসেবনে মোক্ষপ্রয়াসী হইয়া পড়েন তখন দেশের কল্যাণাকাজী চিন্তাশীল পুরুষগণ আর নিশ্চিন্ত থাকিতে পারেন না। এই রূপ কতকগুলি পুরুষের যত্নে মাদকতা নিবারিণী সভার প্রতিষ্ঠা হয়। উমেশচন্দ্র তাহার সভ্য হন; · এবং যত দিন সভ্য ছিলেন, কখনও উদাসীন মৃত্যু হইয়া থাকেন নাই। শুনিয়াছি তিনি পবিত্রতারক্ষিণী সভারও সভ্য ছিলেন । লেখা পড়া সহস্ৰ সহস্ৰ লোকে শিখিয়াছে ও শিখিতেছে ; কিন্তু প্রকৃত শিক্ষিত লোক কয়জন ? জ্ঞানোপাৰ্জ্জন করিয়া কৃতিত্বলাভের দৃষ্টান্ত বিরল নয় ; কিন্তু প্রকৃত কৃতী লোক সত্য সত্যই বিরল। অনেকেরই জীবনে কোন উচ্চ আদর্শ