পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, প্রথমাংশ).djvu/৩৫৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○oミ - মহাবলীর স্থায় শাস্তভাবে অবস্থিত। শাদা শাদ রণতরী, মাস্তলের জটিল অরণ্য, কত জাতির রাষ্ট্রীয় পতাকা, ডকের ঘেরা-জল, ডকের সুদীর্ঘ বাধা ঘাট, বন্দরের অসীম উদ্যমতৎপরতা এই সমস্ত আমাদের বিদ্বেষপূর্ণ প্রশংসা-বিমুখ কর্ণকুহরেও বিজয়ী ইংরাজের বিজয়সঙ্গীত উচ্চকণ্ঠে গান করিতেছে । বন্দরের কোণে একটি ক্ষুদ্র ফলক—যাহা কাহারও বড় একটা মনোযোগ আকর্ষন করে না—সেই ফলকে এই কথা গুলি লেখা আছে —“একজন পার্স বিশ্বকৰ্ম্মার স্বতঃপ্রবৃত্ত চেষ্টায় ও র্তাহীর মতলব অনুসারে, ১৮২১ খৃষ্টাব্দে এই বন্দরটি নিখাত হয়।” র্যাহার বোম্বাই নগরের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা তাহদের স্বাক্ষর রহিয়াছে। জাহাজ হইতে সহসা নামিয়া ভারতভ্রমণকারীর চক্ষু ঝলসিয়া যায়, তাই এই ক্ষুদ্র ফলকটির প্রতি লক্ষ্য না করা তাহার সম্বন্ধে মার্জনীয়। বোম্বাই একটি আধুনিক নগর, বর্তমান ভারতের লক্ষণগুলি ইহাতে পূর্ণমাত্রায় বিদ্যমান। যেখানে এখন এই বন্দর, এই নগর, এই সব ডক, ব্যাঙ্ক, কালেজ, বাজার অবস্থিত এবং যাহা দেখিয়া নব আগন্তুক বিস্ময়ে বিমুগ্ধ হয়— তিন শতান্ধি পুৰ্ব্বে সেইখানে, অস্বাস্থ্যকর সমুদ্রতীরের উপর, কেবল কতকগুলি ধীবর-কুটীর পুঞ্জীকৃত ছিল। ভগবানের রৌদ্রবৃষ্টিতে লালিত এই ক্ষুদ্র গ্রামটি প্রথমে ওলন্দাজদিগের উপনিবেশ ছিল, পরে ইংয়াজের হাতে আসিয়া উহ। আজ জনাকীর্ণ নগর হইয়া উঠিয়াছে। উহ এখন ৮ লক্ষ লোকের বসতি ; শুধু হংকং শাংঘাই বলিয়া নহে—সমস্ত এশিয়ার মধ্যে উহাই সৰ্ব্বাপেক্ষ বৃহৎ বন্দর। যে সকল নগর, ব্রিটানিকী শাস্তির বিশাল ছায়াতলে থাকিয়া পরিবৰ্দ্ধিত হইয়াছে তাহার মধ্যে ইহা অন্যতম। এই নগরটি ক্রমাগত বৃদ্ধিলাভ করিয়াছে ; পক্ষাস্তরে মহারাজাদিগের পুরাতন নগরসকল লোপ পাইয়াছে কিংবা এক ভাবেই রহিয়া গিয়াছে। সেই সকল অমল-ধবল নগর যাহা পবিত্র নদীর ধারে কিংবা সুগুমেল তালীবনের মধ্যে অবস্থিত,-সেই দিল্লি, যাহা শুভ্ৰ-স্বচ্ছ প্রস্তর-বসনে আচ্ছাদিত ; সেই আগ্রা যাহা গম্বুজকিরীটে বিভূষিত ; সেই হাইদরাবাদ যাহা মলমল বস্ত্রে মণ্ডিত বলিলেও হয় ; সেই বারানসী, যাহার সরু সরু মিনার প্রবাসী । [ ৭ম ভাগ । স্তম্ভ, সোনার মন্দির, দীর্ঘ প্রসারিত প্রাসাদ ও ঘাট গঙ্গার উপর প্রতিবিম্বিত, ঐ সকল নগরে রাজকীয় মহোৎসবের প্রয়ােজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর সংগ্রহ যদি না থাকিত তাহ হইলে উহাদিগকে শুধু রাজাদের বাসস্থান, গড়বদ্ধ ছাউনী কিংবা তীর্থ যাত্রীদের কেন্দ্রস্থল বলিয়াই মনে হইত। যে সময় হইতে রাজদরবার উঠিয়াগিয়াছে, সেই সময় হইতেই, ঐ সকল নগরের অধিকাংশই অবনতিপ্রাপ্ত হইয়াছে, তবে যে সকল নগর ইংরাজের আশ্রিত তাহারাই ইংরাজ লস্কর-ছাউনীর খরচে কোন প্রকারে ঠাট বজায় রাখিয়াছে। এক সময়ে যে সকল নগর ইন্দ্রপুরী তুল্য ছিল এখন তাহা মরুভূমিতে পরিণত ; উহাদের জমকাল ধ্বংসাবশেষ এক্ষণে উদাম বনজঙ্গলে সমাচ্ছন্ন, ও বিস্মৃতির অতল গর্ভে বিলীন। ফতেপুর-সিক্রী, আকবরের মহিমান্বিত রাজধানী ; যে ফকীর সেখানে অলৌকিক কাণ্ড করিয়াছিল, তাহার নাতীর সেখানে এখন আশ্রয় লইয়াছে ; কেউটে গোখরো, বাঘ, হিন্দু—সকলে মিলিয়া একত্র বাস করিতেছে। ইংরাজ রাজপুরুষেরা সুলতানদিগের কক্ষ, বাদশাহের গুপ্তগ্ৰহ আপনাদের ইচ্ছামত ব্যবহার করিতেছে। ইংরাজের অধিকারে এই সকল নগরের কোন সুবিধা হয় নাই। কেবল যে সকল নগর, রেলপথের চৌমাথায় অবস্থিভ এবং এই কারণে বণিকদিগের সুবিধাজনক বিপণিরূপে পরিণত—তাহারাই এখন বঁাচিয়া রহিয়াছে।. বিলাতের আমদানী-মাল ঐ খানে জমা হয় এবং ঐ খান হইতে অন্তান্ত স্থানে বিতরিত হইয়া থাকে। কিন্তু সাধারণতঃ ঐ সকল নগরের তেমন অভিবৃদ্ধি হয় নাই। নাগরিক জনসংখ্যার অতিরেক-অংশ,—জনাকীর্ণ গ্রাম পল্লির অভিমুখেই পুনঃপ্রবাহিত হইয়া থাকে। কোন নগরে, কারখানার ধূমধ্বজ, তুলার কল, পাটের কল দেখিয়া মনে করিও না ঐ নগরটি দ্বিতীয় মাঞ্চেষ্টায় কিংবা শিকাগো । ইংরাজ তুলা-ওয়ালা যাহারা ভারতের ছোট ছোট ব্যবসায়ের বিলোপসাধনে কৃতকাৰ্য্য হইয়াছিল, তাহারা ভারতের বৃহৎ শিল্পব্যবসায়ের প্রতিও বিন্দুমাত্র স্নেহমমতা প্রদর্শন করে নাই। ভয়ানক প্রতিদ্বী এই ইংরাজৈরা"ভারতে থাকিয়াই ভারতের বৃহৎশিল্প-ব্যবসায়ের বিরুদ্ধে পক্ষপাতী-গুল্ক বসাইয়াছে। সেই সব বিনষ্ট ছোট ছোট ব্যবসায়ের স্থান কলকারখানা