পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, প্রথমাংশ).djvu/৪০৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

७8७ সঞ্চরণ কৱিত। ভারতবর্ষের মহাস্থ্যে হিন্দুর চোখে যিনি ম্লেচ্ছ, এবং মুসলমানের চোখে যিনি কাফের, তাহারা উভয়েই পরস্পরকে ক্ষমা করিয়া নিৰ্ব্বিরোধে বাস করিতে শিথিয়াছেন। উভয় পক্ষেই ইহাতে কঠোর সংযমের পরিচয় দিয়াছেন, এবং এই সংযম হইতেই পরম্পরকে শ্রদ্ধা করিতে শিখিয়াছেন । মুসলমান যখন আরবের মরুভূমি হইতে অসিহস্তে ইসলাম প্রচারে বাহির হইয়াছিলেন, তখন ধরাতলে বিধৰ্ম্মীর অস্তিত্ব অবশিষ্ট রাখা তাহদের অভিপ্রেত ছিল না । তাহাদের দুৰ্দ্দম প্রতাপে যে সকল রাজ্য ও সাম্রাজ্য র্তাহাদের করতলগত হইয়াছিল, তাহার কুত্ৰাপি তাহারা অন্ত ধৰ্ম্মের অবশেষ মাত্র রাখেন নাই। প্রবল প্রতাপ পারস্তসাম্রাজ্য সমস্ত এবং রোমসাম্রাজ্যের অধিকাংশই অচিরে তাহদের করায়ত্ত হইয়াছিল এবং আজি পৰ্য্যন্ত সেই বিশাল মহাদেশের মধ্যে ইসলামের সর্বতোমুখ প্রাধান্য অব্যাহত আছে । কিন্তু ভারতবর্ষে প্রবেশ করিয়া তাহাদের রাষ্ট্রনীতি ও * সমাজনীতি বদলাইয়া লইতে হইয়াছিল। ভারতবর্ষেও র্তাহারা ইসলাম প্রচারের জন্ত চেষ্টার ক্রট করেন নাই। কিন্তু ভারতবর্ষের কিয়দংশমাত্র অধিবাসী ইসলাম গ্রহণ করিলেন, সমুদয় ভারতবর্ষ ইসলামের অধিকৃত হইল না। ভারতবর্ষের বার আনার অধিকও হিন্দু থাকিয় গেল । মুসলমান হিন্দুর পার্শ্বে বাস করিয়া ভারতবাসী হইলেন এবং ধৰ্ম্ম ও আচার বিষয়ে উৎকট বিদ্বেষের কারণ বর্তমান থাকিলেও হিন্দুকে ক্ষমা করিতে ও শ্রদ্ধা করিতে শিথিলেন। ইহ ঐতিহাসিক সত্য যে, মুসল্লমান হিন্দুকে কেবল ক্ষমা করেন নাই, কেবল সহি লন নাই, তিনি হিন্দুকে শ্রদ্ধা করিতে শিখিয়াছিলেন । ভারতবর্ষে মুসলমান রাজত্বের ইতিহাস বিশেষতঃ মোগলসাম্রাজ্যের ইতিহাস ইহার সাক্ষী । ”এই ক্ষম ও শ্রদ্ধার বীজ তাহার ধৰ্ম্মের মূলমধ্যে বর্তমান ছিল, নতুবা, বাগদাদের খলিফাগণের রাজসভায় আমরা গ্রীক ও হিমুর দর্শন ও বিজ্ঞান শাস্ত্র আলোচিত হইতে দেখিতাম না । এইখানে খ্ৰীষ্টানে ও মুসলমানে আকাশ পাতাল ভেদ । খ্ৰীষ্টান রাষ্ট্রীয় প্রভুত্ব হাতে পাইবামাত্র গ্রীক জাতির অতুল্য প্রতিভার্জিত বিস্তাসম্পত্তিকে ধ্বংসমুখে প্রেরণের চেষ্টা করিয়াছিল ; ক্ষুদ্র গ্রীস ও বৃহৎ গ্রীসের প্রবাসী । , যেখানে যেখানে গ্ৰীক বিদ্যার জালোচনা হইত, সেই সমুদয় বিস্তামদির ধ্বংস করিয়া ইউরোপ হইতে জ্ঞানের আলোক একবারে নিবাইয়া দিয়াছিল। আর মুসলমান তাহার ধৰ্ম্মপ্রচারকের তিরোভাবের পর শত বৎসর যাইতে না যাইতে খ্ৰীষ্টানের নিৰ্ম্মিত সমাধির অভ্যন্তর হইতে সেই প্রাচীন গ্রীসের গৌরবের অস্থিকঙ্কাল উদ্ধার করি তাহাতে ইসলামের সোণার কাঠি ঠেকাইয়া তাহাকে পুনরুজ্জৰিত করিয়াছিলেন। মুসলমান গ্ৰীক বিস্তাকে বাচাইয়াছিলেন, তাই আজিকার খ্ৰীষ্টানের গ্রীক সভ্যতার ভিত্তির উপর আপন সভ্যতা গঠনের অবকাশ পাইয়া ধন্ত হইয়াছেন । ধৰ্ম্মগত ও আচারগত উৎকট পার্থক্য ও পুরস্পর বিদ্বেষের হেতু বর্তমান সত্ত্বেও হিন্দু মুসলমান পরস্পরকে ক্ষমা ও শ্রদ্ধা করিতে জানেন, এবং সেই জন্ত ভারতবর্ষে উভয়ের প্রতিরক্ষা সম্ভব হইয়াছে । ইংরেজ কথায় কথায় বড়াই করিয়া থাকেন, আমরা চলিয়া গেলেই ভারতবর্ষের হিন্দু মুসলমান পরম্পরের গলায় ছুরি চালাইবে । তাহাদের এ বড়াই আমাদিগকে ভুলাইতে পারিবে না। 變 দক্ষিণদেশে হায়দ্রাবাদে নিজাম মুখ্যতঃ হিন্দুসমাজের উপর আধিপত্য করিতেছেন আর উত্তরদেশে কাশ্মীরে জম্বুপতি মুখ্যতঃ মুসলমান সমাজের উপর আধিপত্য করিতেছেন ; কিন্তু কোথাওত হিন্দু মুসলমানে ছুরি চালাচালি শুনিতে পাই না । ইংরেজের প্রভুশক্তি গ্রহণের পূৰ্ব্বে শত বৎসরের মধ্যে পঞ্জাব ব্যতীত অন্ত কোথাও হিন্দু মুসলমানের পরস্পর ছুরি চালাচালির কথা শুনি না ; পঞ্জাবেও যাহা ঘটিয়াছিল, তাহা বিশেষ কারণে । . ফলে ভারতবর্ষের হিন্দু মুসলমান উভয়েই পরকে যেমন আপন করিতে জানে, তেমন পৃথিবীর আর কোন ? জাতি জানে না ; অন্ততঃ কোন খ্ৰীষ্টান জাতি জানে না । হিন্দু মুসলমান ত এতকাল ধরিয়া একগ্রামে, এমন কি, এক ঘরের মধ্যে, এক ছাদের নীচে, বাস করির আসিতেছেন ; কিন্তু খ্ৰীষ্টান কোথায় মুসলমানের,সান্নিধ্য সহিয়াছেন, তাহা ইতিহাসে লেখে না। ছিম্পানি দেশে মুসলমান , ৰিস্কার এবং জ্ঞানের আলোক জালিয়া খ্ৰীষ্টান ইউরোপের বৰ্ব্বরতার অন্ধকার ঘুচাইবার চেষ্টা করিয়াছিলেন ; জায় খ্ৰীষ্টান সেই ছিম্পানি দেশে লব্ধপ্রবেশ হইয়া কি আধায়িক