পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, প্রথমাংশ).djvu/৮১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

o বিস্তার করিয়া, বিজয়মানসে তিব্বতের উত্তরস্থিত চীনীয় অধিকার আক্রমণ করিয়া পরাজিত হওয়ায় চীনসম্রাটুকে কর দিতে বাধ্য হন। অবশেষে নানা ঘটনাপুর্ণ রাজত্বের পর (১২০-২৫ খৃঃ অঃ মধ্যে) তাহার মৃত্যু হয়। কোন কোন ঐতিহাসিক ইহার মরণকাল তাহার অনেক পূৰ্ব্বে (৫৭ খৃঃ অঃ) ও কেহ কেহ তাহার অনেক পরে (২৭৮ খৃঃ অঃ) নিরূপণ করিয়া থাকেন। কিন্তু তাহাকর্তৃক রোমসম্রাটু অগষ্টস্ সমীপে যে দূত প্রেরিত হয়, তাহাতে র্তাহার অব্যবহিত পরবর্তী কনিষ্ক রোমসম্রাটু হেড়িয়ন বা মার্কাস অরেলিয়সের সমকালবৰ্ত্তী বলিয়াই প্রতিপন্ন হন। সুতরাং খৃষ্টীয় দ্বিতীয় শতাব্দীর পূর্বপাদের অংশবিশেষকেষ্ট মহারাজ কনিষ্কের রাজ্যপ্রাপ্তির কালরূপে নির্দেশ করা নিতান্ত ভিত্তিহীন নহে। কনিষ্কের রাজ্যবিস্তার । কনিক্ষের বহুবিধ প্রচলিত মুদ্রা পর্য্যালোচনায়, তাহার রাজত্বকালের দৈর্ঘ্য ও ধৰ্ম্মবিশ্বাসের ক্রমবিকাশের কতকটা অভিজ্ঞতালাভে সমর্থ হওয়া যায়। তদীয় রাজ্য দক্ষিণে বিন্ধ্যপৰ্ব্বত, পশ্চিমে সিন্ধুদেশ, উত্তরে হিমালয় ও পূৰ্ব্বে গাজীপুর ও বারাণসী এই চতুঃসীমান্তরালে পরিব্যাপ্ত ছিল। ভাওয়ালপুরের নিকটস্থ মুইবিহারের শিলালিপি পাঠে অবগত হওয়া যায়, উত্তরসিন্ধুর শকরাজাগণও মহারাজ অতিরাঞ্জ দেবপুত্র কনিষ্ক’ কর্তৃক পরাজিত হইয়া বিতাড়িত হন। সুতরাং সিন্ধুনদের মুহানা পৰ্য্যন্ত যে তাহার বিজয় পতাকা উডতীয়মান হইয়াছিল, তাহাতে সন্দেহ নাই। রাজতরঙ্গিণী নামক কাশ্মীরের প্রাচীন বিবরণে লিখিত আছে, কনিষ্ক কাশ্মীর রাজ্য অধিকার করিয়া, কনিষ্কপুর নামক নগর সংস্থাপন করেন। শ্রীনগরের নিকটবৰ্ত্তী আধুনিক কনিসপুর নামক গ্রাম অস্থাপি লুপ্তনগরের প্রত্নতত্ব ও মহারাজ কনিক্ষের বিজয়গৌরবের সাক্ষ্য প্রদান করিতেছে। বৌদ্ধ-ইতিবৃত্তকার তারনাথ বলেন, মহারাজ কনিষ্ক তাৎকালিক মগধরাজধানী পাটলীপুত্রনগর জয় করিয়া বুদ্ধ-চরিত নামক প্রাচীন সংস্কৃত কাব্যের রচয়িতা অশ্বঘোষকে সঙ্গে লইয়া স্বরাজ্যে প্রতিগমন করেন। সংক্ষেপত আধুনিক কাবুল, উত্তর-পশ্চিম সীমান্তপ্রদেশ, সিন্ধু, পঞ্জাব, কাশ্মীর, যুক্তরাজ্য ও বিহারের কিয়দংশ ক্রমশঃ প্রবাসী । [ ৭ম ভাগ । ۰-۰۶-۰-...»-م...» -مه--۰۰* কনিক্ষের করায়ত্ত হয়। র্তাহার রাজধানী পুরুষপুর বা আধুনিক পেশাওয়ার নগর ছিল। কথিত আছে পার্থীর নামক বিদেশীয় অনাৰ্য্যেরা ভারত আক্রমণ করায়, উপযুক্ত শিক্ষা দিবার অভিপ্রায়ে তাহাদিগের পশ্চাদ্ধাবিত হইয়া কনিষ্ক ভারতবর্ষের সীমার বহির্ভাগে অবস্থিত তাহাদিগের রাজ্যে প্রবেশ করিয়া, তাহাতে অধিকার সংস্থাপন করেন । অনন্তর ভারতের প্রাচীন গৌরব উদ্ধারসাধনসংকল্পে উদ্দীপিত হইয়া পূৰ্ব্বজের মার্গানুসরণপুরঃসর চীনসাম্রাজ্যের অন্তর্গত বৰ্ত্তমান কাশগর, ইয়ারকন ও খোটান অবরোধ পূৰ্ব্বক (১৭৮-৩০ খৃঃ অঃ মধ্যে) চীনসম্রাটুকে এরূপ ভাবে পরাজিত করেন যে, অবশেষে তিনি সম্পূর্ণরূপে পরাভব স্বীকার করিয়া জামিনরূপে রাজকুমারকে কনিক্ষের নিকট প্রেরণ করিতে বাধ্য হন । বিভিন্ন স্থলে তিনটি দেবস্থলী পৃথকৃ পৃথক্ ঋতুতে বন্দী রাজপুত্রের বাসার্থ নির্ণীত হয় । কাবুলের উত্তরস্থিত কপিশপ্রদেশে গ্রীষ্মাবাস নির্দিষ্ট থাকায় সম্রাটুকুমারের বৌদ্ধধৰ্ম্মের আসক্তির ক্রমিক স্ফূরণবশতঃ তত্ৰত নবনিৰ্ম্মিত বিহারের উন্নতিকামনায় তিনি প্রচুর অর্থাদি দান করেন। তাহাতে র্তাহাধ স্বদেশগমনের পরও বিহারস্থ জনসমুহ কৃতজ্ঞচিত্তে চীনীয় পরিচ্ছদপরিহিত যে চিত্রাবলী তাহার স্মৃতিচিহ্ররূপে অঙ্কিত করিয়া রাখিয়াছিলেন, তাহা (খৃষ্টীয় সপ্তম শতাব্দীতে) চীন পরিব্রাজক হিউয়েন সাংয়ের ভারত পরিভ্রমণকালেও বিকৃত বা হীনপ্রভ হয় নাই * । তাহার বিশেষ বিবরণ হিউয়েন-সাংয়ের চরিতাখ্যায়ক হুই-লির গ্রন্থে অবগত হওয়া যায়। এই দেবালয়ে চীনরাজকুমার কত্ত্বক যে ধনরাশি প্রোথিত হয়, হিউয়েনসাংয়ের উক্ত বিহারে অবস্থান কালেই পাচহস্ত গভীর ভূমি খনন করিয়া তাম্রপাত্রে নিহিত রাশীকৃত, স্বর্ণ ও মুক্ত উত্তোলিত হয়। শীতঋতুর অবস্থান জন্ত পঞ্জাবের পূৰ্ব্বভাগে অবস্থিত চীনাপটি নামক স্বনামপরিচিত স্থান নির্দিষ্ট ছিল। مه-سیح - ۰ ----۰۰-مح---- অষ্টাদশশত বৎসরের পুৰ্ব্বেও ভারতীয় চারুশিল্পের এতাদৃশ উন্নতি ছিল। আজ সেই ভারতবাসীকে জৰ্ম্মানী ও চীনের নিকট হইতে রং লইয়৷ ইটালীকে গুরু কড়িয়া চিত্রবিদ্যা শিক্ষার উদ্যোগ করিতে হয়। চারুশিল্প কেন, আমাদিগের আর "আমাদের বলিতে কি অবশিষ্ট আছে ? কবি মৰ্ম্মবেদনায় যথার্থই গাইয়াছেন,—‘প্রদীপটি জালিতে, খেতে শুতে যেতে, কিছুতেই মোর নই স্বাধীন’ । ভারতের উপস্থিত দুরবস্থা মুহূমুহূ দৰ্শন ও স্মরণ করিয়া প্রত্যেক সহৃদয় ব্যক্তিকেই ক্ষুন্ধচিত্তে বলিতে হয়, হায়, কি হ’ল দুদিন ।