পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, প্রথমাংশ).djvu/৮২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২য় সংখ্যা। ] তত্ৰত্য বৌদ্ধের হীনায়ন বা নিম্নতর শাখাবলম্বী ছিলেন । সেই শ্রেণী:কর্তৃকই চীনকুমার বৌদ্ধধৰ্ম্মে দীক্ষিত হন। অবশেষে ইনিই স্বদেশপ্রত্যাগমনের পর চীনে বৌদ্ধধৰ্ম্মের প্রথম প্রচার করেন। কেহ কেহ বলেন, খৃষ্টের পূৰ্ব্বে তৃতীয় শতাব্দীতেই চীনে বৌদ্ধধৰ্ম্ম প্রচারিত হয়। এই মতটি সম্পূর্ণ ভ্রান্ত বলিয়াই প্রতিপাদিত হয়, কারণ অশোকের সময়ে দক্ষিণ বা পশ্চিম ব্যতীত আর কোথাও বৌদ্ধযাজক বা প্রচারক প্রেরণের স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায় না, এবং কনিষ্কের পূর্ববৰ্ত্তী শকরাজের সহিত সামান্ত সংঘর্ষের পূৰ্ব্বে চীনের সহিত ভারতের রাজনীতিক বা অপর কোন সংশ্ৰব ছিল বলিয়া, কোন নিদর্শন নাই । সুতরাং ঐতিহাসিক গবেষণায় ইহাই স্থিরীকৃত হইয়াছে, যে চীনসম্রাটের পরাজয়ের পর ভারতসম্রাটের আনুগত্য স্বীকারের সঙ্গে সঙ্গেই চীন ভারতীয় বৌদ্ধধৰ্ম্মের নিকটও মস্তক নমিত করে। স্বদেশপ্রত্যাবৃত্ত সমাটতনয়ের উৎসাহে ও উত্তেজনায় বৌদ্ধধৰ্ম্ম চীনে অপরিমিতবেগে বিস্তৃতিলাভ করিতে থাকে ; এমন কি খৃষ্টীয় চতুর্থ শতাব্দীতেই চীন সমগ্র বৌদ্ধাধিকারের শীর্ষস্থান অধিকার করে । অনার্য্যরাজ কনিষ্কের প্রতাপেই মহাপরাক্রমশালী চীনসাম্রাজ্য ভারতের রাজনীতিক ও ধৰ্ম্মসম্বন্ধীয় অধীনতা স্বীকার করিতে বাধ্য হয়। চীন ও জাপানের ধৰ্ম্মানুরাগ আজও মহারাজ কনিষ্কের মহিয়সী কীৰ্ত্তি ঘোষণা করিতেছে। কথিত আছে এই চৈনিক সংঘর্ষ হইতেই নাশপাতি ও পিচু (আড়,ফল ) ভারতে সৰ্ব্বপ্রথম আনীত হয় । বৌদ্ধধৰ্ম্মে আনুরক্তি । শুনা ধায়, কনিষ্কের প্রথম বয়সে নীতিধৰ্ম্মের কোন একটা নির্দিষ্ট বন্ধন ছিল না—দ্যায্যান্তায্যের বিচার তাহার হৃদয়ে বড় একটা স্থান পাইত না । সে সময়ে বৌদ্ধসম্প্রদায়কে তিনি নিতান্ত ঘৃণার চক্ষে দেখিতেন । ভিন্ন ভিন্ন সময়ে তাহাকর্তৃক প্রবৰ্ত্তিত মুদ্রাগুলির পর্য্যালোচনায়, তাহার ধৰ্ম্মবিশ্বাস পরিবর্তনের কতকটা স্পষ্ট আভাষ প্রাপ্ত হওয়া যায়। প্রথম জীবনের সিক্কাগুলি গ্রীকভাষীয় ও অক্ষরেই লিখিত এবং তদুপরি চন্দ্রস্বর্ঘ্যের মূৰ্ত্তি খোদিত থাকিত। তৎপরবর্তীগুলি গ্রীক বর্ণমালায় কিন্তু প্রাচীন পরিতভাষাবিশেষে লিখিত এবং তদুপরি মুদ্রিত মূৰ্ত্তিগুলিও প্রাচীন ভারতের অনার্য্য নরপতি কনিষ্ক । -৭১ গ্রীক, পারশিক ও ভারতীয় দেবতাবৃন্দের এক অপূৰ্ব্ব সমন্বয় মাত্র। আবার শেষ সময়কার সিকাগুলিতে বুদ্ধদেব শাক্যসিংহের মূৰ্ত্তি অঙ্কিত ও গ্রীক অক্ষরে তাহার নাম থোদিত দেখিতে পাওয়া যায়। অশোকের সময় ভগবান বুদ্ধকে দেবতারূপে গ্রহণের ভাব কাহারও মনোমধ্যে উদিত হইতে পায় নাই, কিন্তু ক্রমশঃ নীনাদেশীয়দিগের সহিত ংশ্ৰবনিবন্ধন শিবাদির দ্যায় বুদ্ধও ভারতীয়দিগের জাতীয়দেবতারূপে পরিগৃহীত হইতে থাকেন। পরিশেষে হৰ্ষবদ্ধনের রাজত্বকালে সমান পূজাগ্রহণেও অধিকারপ্রাপ্ত হন। ইহাতে হিন্দু বৌদ্ধের ধৰ্ম্মবিরোধ অনেকটা প্রশমিত হইয়া, সকলেই এক রাজার শাসনাধীন স্বদেশবৎসল প্রজ ক্রমে ক্রমে এই ধারণাটি পোষণ করিবার উপযোগিনী সমপ্রাণতার যে বিকাশ হয়, মহারাজ কনিস্কের পক্ষপাতপরিশুন্ত শান্তিপূর্ণ শাসনই তাহার অন্যতম প্রধান কারণ। যাহারা বৌদ্ধধৰ্ম্মের অভিহিতপূৰ্ব্ব সমন্বয়প্রাপ্ত মতের অনুবৰ্ত্তক, র্তাহাদিগের সম্প্রদায় মহায়ন শাখা নামে প্রখ্যাত। প্রাচীন মত সংকীর্ণ ও নিকৃষ্ট বোধে হীনায়ন নামেই পরিচিত রহিল । গান্ধারের ভাস্কৰ্য্য শিল্পকৌশল পর্য্যালোচনা করিলে, বৌদ্ধদেবতাবৃন্দের গঠনপ্রণালী ও তাৎকালিক গৃহনিৰ্ম্মাণচাতুর্য্যপ্রভৃতির যথেষ্ট প্ররিচয় পাওয়া যায়। কোন কোন পাশ্চাত্য পণ্ডিত স্তম্ভের শিরোভাগ প্রভৃতির অমুশীলন দ্বারা, সেগুলি গ্রীক-রোমক পদ্ধতির বিমিশ্রভাস্কর্য্যের আদর্শেই নিৰ্ম্মিত এইরূপ বলিয়া থাকেন। সম্ভবতঃ গ্ৰীকদিগের সহিত ঘনিষ্ঠসংশ্ৰবনিবন্ধন তাহাদিগের রীতি আংশিকভাবে ভারতীয় বিধির অনুপ্রবিষ্ট হইয়া থাকিবে। কনিষ্কের বৌদ্ধধৰ্ম্মের প্রতি প্রগাঢ় অমুরক্তি উদ্রিক্ত হওয়ার পর তাহার ধৰ্ম্মাসক্তির নিদর্শনস্বরূপ ত্রয়োদশ তলবিশিষ্ট ও অনুনি ৬৬ হস্ত পরিমিত উচ্চ যে কারুকাৰ্য্যময় কাষ্ঠমণ্ডিত উচ্চ সৌধ ( গুমুজ বা Tower) নিৰ্ম্মিত হয়, তাহা তাৎকালিক শিল্পজগতের মানবনৈপুণ্যের অসাধারণ ও মহদাশ্চৰ্য্যজনক কাৰ্য্য বলিয়া বিবেচিত হইত। সং-যুন (খৃঃ সপ্তম শতাব্দীর প্রারম্ভে) ভারতপ্রদক্ষিণকালে সে স্থানে উপনীত হন, তাহার বর্ণনা পাঠে অবগত হওয়া যায়, পুনঃ পুনঃ ভস্মসাৎ হওয়ায় ক্রমে তিন বার তাহ। পুননিৰ্ম্মিত হয়। সুপ্রসিদ্ধ চৈনিক পরিব্রাজক ফাছিয়ান ও