পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, প্রথমাংশ).djvu/৮৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

영8 যদি তাহার যথোচিত ব্যবহার হইতে বিরত থাকেন, তাহা হইলে বহির্জগতে তিনি আপাতপ্রতীয়মান সেই শক্তিবিশিষ্ট বলিয়া পরিগণিত হইলেও অন্তর্জগৎ হইতে তাহার সে পদমর্যাদা হইতে বিচুত হওয়া নিতান্ত বিচিত্র বা অসম্ভব নহে। তাই যলি পিতা পুত্র, পতি পত্নী, প্ৰভু ভৃত্য, রাজা প্রজ, ধনী নিধন, পদস্থ দিনজীবী, সকলেরই স্মরণ রাখা উচিত, শুধু পিতার অধিকার গ্রহণের দাবি করিলেই চলিবে না, জনকোচিত আন্তরিক বৎসলস্বভাব ও সস্তানহিতাভিলাষ থাকা চাই, কেবল রাজশক্তিবিশিষ্ট হইলেই যে সব সময়ে সকল প্রজার মাথার মণি হওয়া যায়, ইতিহাস এ কথার সমর্থন করে না । শুদ্ধ পণ্ডিত হইলেই জগতের পূজালাভে সমর্থ হওয়া যায় না। সুতরাং শাস্ত শাসকে, সেব্য সেবকে, প্রতিপাল্য প্রতিপালকে সহৃদয়তামূলক সদ্ভাবই এ জাতীয়সম্বন্ধের পবিত্রত রক্ষার মূল উপাদান বলিয়৷ স্বীকার করা যতীত গত্যন্তর নাই ; তাই যেখানেই ভাহার বৈলক্ষণ্য পরিলক্ষিত হয় সেই খানেই দেখা যায় বাহসম্বন্ধ নিতান্ত ঘনিষ্ঠ কষ্টয়াও মনের উপর পূর্ণ অধিকার বিস্তারে পরাজুথ । অতএব নিৰ্ম্মল ক্ষত্রিয়কুলোৎপন্ন_ কনোজরাজ জয়চন্দ্র স্বদেশদ্রোহী এবং পাটলীপুত্রের নন্দবংশীয় আর্য্যনরপতিগণ অত্যাচারী বিবেচনায় ঘৃণিত ও তিরস্কৃত । পক্ষান্তরে বিদ্বেষলেশপরিশূন্ত সহৃদয় ব্যবহারে মহারাজাতিরাজ কনিষ্ক ভারতবক্ষস্থিত স্থাবর সম্পত্তির ন্তায় ভারতবাসীর হৃদয়রাজ্যেও এতাদৃশ অধিকার বিস্তারে সমর্থ হইয়াছিলেন যে র্তাহারা সেই অনার্য্যরাজের প্রতি আন্তরিক রাজভক্তি প্রদর্শনে অনুমাত্র কুষ্ঠিত বা লজ্জিত না হইয়া বরং তাতাতে বিশেষ গৌরব ও আনন্দ অনুভব করিতেন । ললিতমোহন মুখোপাধ্যায়। শিম্পসমিতির প্রবন্ধাবলী । আমরা পূৰ্ব্ব প্রবন্ধে বলিয়াছি যে বস্ত্রবয়নোপযোগী আঁশের মধ্যে রেশম অন্যতম এবং সৰ্ব্বাপেক্ষা কষ্টসাধ্য-উৎপাদন ও নানা কারণে মূল্যবান। রেশম সৌন্দর্য্যে ও স্থায়িত্বে সকল জীশ অপেক্ষ শ্রেষ্ঠ । বস্ত্ৰ-বয়নোপযোগী প্রবাসী । [ ৭ম ভাগ । এই শ্রেষ্ঠ উপাদান সম্বন্ধে সংপ্ৰতি পরলোকগত নিত্যগোপাল মুখোপাধ্যায় মহাশয়ের জ্ঞানগর্ড সুন্দর প্রবন্ধটির সারসঙ্কলন নিয়ে উদ্ধত হইল – রেশমচাষের সংক্ষিপ্ত বিবরণ । অধুনা রেশমচাষের প্রতি গভর্ণমেণ্ট, ভারতীয় রাজন্তবর্গ ও বহু ভদ্রলোক মনোযোগী হইয়৷ ইহার উন্নতিকামী হইয়াছেন। বাংলায় প্রধানতঃ মালদহ, বীরভূমি, মুর্শিদাবাদ এবং মেদিনীপুরে (যদিও এখানকার ব্যবসায় মৃতপ্রায় ) রেশমের চাষ হয়। রেশমচাষীরাও এক্ষণে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষের পক্ষপাতী হইয়াছে। অনেক চাষী হস্থ সুন্দর বীজ নির্বাচনের জন্য অণুবীক্ষণযন্ত্র ব্যবহার আরম্ভ করিয়াছে। একরূপ মক্ষিকার উৎপাতে এক কারখানায় কোষকীটের দুপুরুষেয় অধিক ক্রমান্বয়ে জীবিত রাখা দুগ্ধর । এজস্য ভিন্ন ভিন্ন দেশের চাষীর পরস্পরের মধ্যে বীজের আদান প্রদান আরস্ত করিয়াছে । ইহা অভিজ্ঞতার শুভ লক্ষণ । সংপ্ৰতি ৰৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে রেশমের চাষ কাশ্মীর, মহীশূর, বড়োদ প্রভৃতি রাজ্যে আরম্ভ হইয়াছে। কিন্তু কুত্রপি বিশুদ্ধ পদ্ধতি অমুস্থত হইতেছে না। বিশুদ্ধ পদ্ধতি যথাসম্ভয নিম্নে লিখিত হইতেছে । রেশমের শ্রেণীবিভাগ । এক প্রকার কোষকীটের চাষ গৃহাভ্যন্তরে হয় এবং অপর প্রকারের খোল জায়গায় গাছের উপরে হয় । ইহাদের কোষ দ্বিবিধ। যাহার সুতা গুটাইয়া লওয়া যায় এবং যাহা হইতে শুধু তুলার মত আঁশ বাহির হয়, পরে তাহা পিজিয়া বাছিয়া তৃত তৈয়ারি করিতে হয়। তুত ভোজী কীটের কোষ ও তসর কীটের কোষ পূৰ্ব্বোক্ত প্রকারের এবং এণ্ডি কীটের কোষ শেষোক্ত প্রকারের। একরূপ খুব বড় কোষ আছে, তাহার কাঁট অতি স্বন্দর, কিন্তু রেশম ভাল হয় না। তুত-ভোজী রেশমকীট । এতদ্বিধ কীটের চাষ সৰ্ব্বাপেক্ষ অধিক লাভজনক । ইহারা বস্থশ্রেণীতে বিভক্ত—(১) যুরোপ, চীন, জাপান, কাশ্মীর প্রভৃতি স্থানের বাৎসরিক কোষ উৎপাদক এবং (২) বড় পলু বা বাংলার যৎসরিক কোষ উৎপাদক । ইহার কোষ আঁশ-ওঠা, নরম এবং প্রথমোক্তের মত উৎপন্ন হইতে অধিক শৈত্যের অপেক্ষ রাখে না। (৩) বড়পাট বৰ্ম্ম৷ ও আসামে জন্মে : প্রায় বড়পলর মত। (৪) মহীশূরেয় কীট। ইহাদের কোষ বৎসরে সাত আট যার হয় । কোষ দেখিতে হরিতাভ শ্বেত, এবং বড়পলুর মতই ভাল। (৫) মাদ্রাজী বা নিস্তারী। বাংলায় জন্মে । বৎসরে আট বীর কোষ উৎপাদন করে । কোষ হরিদ্রাস্বর্ণ ; রেশম স্বগ ও নরম। (৬) দেশী বা ছোটপলু। উজ্জ্বল হরিদ্রাবর্ণ কোষ, প্রচুর শক্ত রেশম পাওয়া যায়। (৭) চীনা কোষ । সৰ্ব্বাপেক্ষ ক্ষুদ্র । মেদিনীপুরে চাষ হয়। ইহার কোষ দেখিতে হরিদ্রাবর্ণ। শ্বেতবর্ণের কোষও হয়, তাহাকে মেদিনীপুরে বুল বলে । (৮) হিমালয়ের তুতগাছে প্রাপ্তব্য বস্ত কোষ । তসর-কীট । তসরের গুটিও বহুশ্রেণীতে বিভক্ত। তন্মধ্যে জাপানের আস্থেরিয়া য়িমামাই সৰ্ব্বোৎকৃষ্ট । ইহার রেশম হরিতাভ শ্বেত, মোটা ও কর্কশ । চীনা তসর দ্বিতীয় । আসামের মুগা এই দ্বিতীয় শ্রেণীর। বাংলার তসর সৰ্ব্বাপেক্ষ নিকৃষ্ট। চীন জাপানের কীট ওক গাছে পালিত হয়। মুগ৷ কীট স্বম, সৌলু, মেজাঙ্করী ও চম্পক গাছে ; এবং বাংলা তসর-কাট আসন বা সাজ (?), শাল, অর্জুন, সিধ, ধাউ, বৈর, বাদাম এবং অষ্ঠা গাছে পালিত হয় ।