পাতা:প্রবাসী (সপ্তম ভাগ, প্রথমাংশ).djvu/৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ર ভূশায়িত ডাল যখন ধনুকাকারে বাকিয়া মাথা উচু করে, তখন এই বক্রতার দুইটি কারণ আমাদের মনে আসিয়া পড়ে। (১)—হয় ত ডালের ভূসংলগ্ন অংশটা উপরের অংশ অপেক্ষ অধিক বাড়িতেছে, অথবা (২) নিম্নাদ্ধের বৃদ্ধি অক্ষুণ্ণ থাকিয়া, কেবল উপরাদ্ধের বৃদ্ধিই হ্রাস হইয়া আসিতেছে। আচাৰ্য্য জগদীশচন্দ্র বসু মহাশয় এই দুইটির মধ্যে কোনটি প্রকৃত কারণ, তাহ স্থির করিবার জন্য অনেক পরীক্ষা করিয়াছিলেন, এবং শেষে দ্বিতীয় কারণটিকেই যথার্থ বলিয়া প্রচার করিয়াছেন । গাছের গুড়ি ও শিকড়ের পরস্পর বিপরীত দিকে বাড়িবার কারণ জিজ্ঞাসা করিলে, আধুনিক উদ্ভিদূতত্ত্ববিদগণ বলিয়া থাকেন,—ভূমধ্যাকর্ষণের উত্তেজনা পাইলেই শিকড় ও গুড়ি নিজেদের বিশেষ বিশেষ ধৰ্ম্মের অনুবর্তী ঐ প্রকার বিপরীত কাৰ্য্য দেখায়। অর্থাৎ পৃথিবীর টান পাইলে নীচের দিকে বদ্ধিত হওয়া এক শিকড়েরই একটা বিশেষ ধৰ্ম্ম, এবং সেই প্রকার উপর দিকে বাড়া গুড়ির ও একটি ধৰ্ম্ম । আচাৰ্য্য বসু মহাশয় পাশ্চাত্য পণ্ডিতগণের এই ব্যাখান গ্রহণ করেন নাই । তাহার মনে হইয়াছিল, আমরা সুপরিচিত প্রাকৃতিক কাৰ্য্যগুলিতে জড় ও শক্তির যেমন বিচিত্র লীলা দেখিতে পাই, এই ব্যাপারটি নিশ্চয়ই তাহারি একটি। গাছের ডালে ও শিকড়ে এক একটা অদ্ভুত রকমের বিশেয ধৰ্ম্ম আরোপ করিয়া কারণ দেখাইতে যাওয়া, পণ্ডশ্রম মাত্র । সুপথ পাইলে গন্তব্যস্থানে পৌছানো সহজ হইয় পড়ে । উদ্ভিদতত্ত্বসম্বন্ধীয় পূৰ্ব্বোক্ত জটিল সমস্তাগুলির সমাধান কোথায়, বসু মহাশয় দিব্যচক্ষে তাহ মুম্পষ্ট দেখিতে পাইয়াছিলেন, এবং কিছুকালের গবেষণায় সকলগুলিরই ভিতরকার গুঢ় রহস্ত আবিষ্কার করিয়া ফেলিয়াছিলেন । আচাৰ্য্য বস্তু মহাশয়ের ঐ সকল সিদ্ধান্তগুলি বুঝিতে হইলে, প্রথমেই তাহারি আবিষ্কৃত দুই একটি নুতন তথ্যের সহিত পরিচিত হওয়া আবশুক। আমরা সকলেই দেখিয়াছি, লজ্জাবতী লতার ডালে কোন প্রকার উত্তেজনা প্রয়োগ করিলে, তাহার পাতা কিছুক্ষণের জন্ত নামিয়া গিয়া, ক্রমে পূৰ্ব্ববৎ খাড়া হইয়া দাড়ায়। আঘাত দিলে আহত স্থান হইতে যে আণবিক বিকারের প্রবাহ চলিতে আরম্ভ করে, আচাৰ্য্য বসু প্রবাসী । [ ৭ম ভাগ। মহাশয় তাহাকেই পাতার পড়ার কারণ বলিয়া প্রতিপন্ন করিয়াছেন। তা ছাড়া তিনি আরো দেখাইয়াছেন যে, গাছের কোনও অঙ্গকে অতিরিক্ত শীতল করিলে যখন তাহার অণু সকল অসাড় হইয় পড়ে, তখন সহস্র আঘাতেও সেস্থানের আণবিক বিকৃতি হয় না। লজ্জাবতী লতার পত্রবৃন্তে খুব ঠাণ্ডা দিয়া, তাহাতে আঘাত উত্তেজনা প্রয়োগ কর, পাতা কোন ক্রমেই নামিবে না । সুতরাং দেখা যাইতেছে, উদ্ভিদের যে অঙ্গ দিয়া উত্তেজনার সাড়া প্রবাহিত হয়, সেখানে ঠাণ্ড দিলে, উত্তেজনার কার্য্য রোধ হইয়া যায়। ভূশায়িত ডালের কোন অংশে সাড়ার প্রবাহ চলিতেছে, তাহা জানিবার জন্ত আচাৰ্য্য বসু মহাশয় শাখার উপরে ও নীচে ক্রমে শীতল জল সেচন করিয়াছিলেন । ইহাতে দেখা গিয়াছিল, ডালের, তলার অংশে শীতল জল দ্বারা কোন পরিবর্তনই হয় নাই, কিন্তু উপরে জল সেচন মাত্রেই তাহার DoiBfGRE Eði (Apogeotric movements ) cztą হইয়া পড়িয়াছিল। সুতরাং ভুশায়িত ডালের উপরাদ্ধই যে ভূমধ্যাকর্ষণে উত্তেজিত হইয়া ধনুকাকারে বাকিয়া যায়, তাহাতে অণু মাত্র সন্দেহ করিবার কারণ নাই । আমরা পূর্বেই বুলিয়াছ, গাছের শিকড় কেন নীচের দিকে বাকিয়া যায়, এবং তাছারি গুড়ি ও শাখাপ্রশাখা কেন উপরে উঠতে থাকে, এই প্রশ্ন দুইটি প্রাচীন ও আধুনিক উদ্ভিদতত্ত্ববিদগণের নিকট প্রকাও সমস্ত হইয়া দাড়াইয়াছে। পণ্ডিতগণ গাছের উপর ও নীচের অংশে দু’টা পৃথক ধৰ্ম্ম আরোপ করিয়া যে ব্যাখ্যা দিয়া থাকেন, তাহার আমরা কোন অর্থই খুজিয়া পাই না। প্রত্যক্ষ পরীক্ষায় তাহার ঐ বিশেয বিশেষ ধৰ্ম্মগুলির মূল যত দিন পর্য্যস্ত আবিষ্কার করিতে না পারিতেছেন, ততদিন কেহই তাঁহাদের ঐ ব্যাখ্যানে বিশ্বাস স্থাপন করিবে না। ডারুইন্‌ সাহেব তাপ দ্বারা শিকড়ের অগ্রভাগের একটা পাশ ( Unilateral) উত্তেজিত করিয়া দেখিয়াছিলেন, শিকড়ের ডগা বাকিয়া সেই উত্তেজনা হইতে দূরে যাইবার চেষ্টা করে ; কিন্তু সেই প্রকার উত্তেজনাই গাছের বদ্ধনশীল অপর কোন অংশে প্রয়োগ করিলে তাহার ঠিক বিপরীত কাৰ্য্য দেখা যায়। অর্থাৎ এ স্থলে মূলের অগ্রভাগ বাকিয়া উত্তেজনার কেন্দ্রেরদিকেই চলিতে আরম্ভ করে। বলা বাহুল্য একই উত্তেজনার