পাতা:প্রাকৃতিকী.pdf/১১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯০
প্রাকৃতিকী

 লর্ড কেল্‌ভিনের জীবনে বৈজ্ঞানিকদিগের এই আধুনিক আদর্শটি সম্পূর্ণ ফুটিয়া উঠিয়াছিল। জড়তত্ত্বের অতি গূঢ়রহস্যের সুমীমাংসার জন্য তাঁহাকে ধ্যানমগ্ন মুনির ন্যায়ই গবেষণানিরত দেখা যাইত, এবং স্বাবিষ্কৃত তত্ত্বগুলিকে সাংসারিক কাজে লাগাইবার সময় তিনি সাধারণ শ্রমজীবীরই মত অক্লান্তভাবে পরিশ্রম করিতেন। বাঁৎলো, ল্যাংলে ও টিন্‌ডাল্ প্রভৃতি অনেক স্বনামখ্যাত বৈজ্ঞানিক তাঁহাদের আবিষ্কৃত তত্ত্বগুলিকে স্বহস্তে নানা কার্য্যে লাগাইয়া মানুষের সুখস্বাচ্ছন্দ্য বৃদ্ধি করিয়াছেন সত্য, কিন্তু এ বিষয়ে বোধ হয় কেহই লর্ড কেল্‌ভিনের সমকক্ষ হইতে পারেন নাই। নব নব যন্ত্র উদ্ভাবন করিয়া ইনি জগতের যে উপকার সাধন করিয়াছেন, তাহা প্রকৃতই অতুলনীয়।

 আত্মশক্তির উপর সন্দেহ ও বিশ্বাসের শিথিলতা মনুষ্যত্ব বিকাশের প্রধান অন্তরায়। ইহারা ঘাড়ে চাপিলে মানুষ কোনক্রমে মাথা তুলিতে পারে না। লর্ড কেল্‌ভিনের জীবন আলোচনা করিলে দেখা যায় তিনি এই দুই শত্রুকে সম্পূর্ণ জয় করিয়াছিলেন, এবং জয় করিয়াছিলেন বলিয়াই তিনি জগতে অমরত্ব লাভ করিতে পারিয়াছেন। ছাত্রগণকে বিজ্ঞান শিক্ষা দিবার সময় লর্ড কেল্‌ভিন্ শাস্ত্রে অটল বিশ্বাস স্থাপনের জন্য প্রায়ই উপদেশ দিতেন। কোন ছাত্র তাঁহার কোন উক্তিতে অবিশ্বাস করিলে তিনি বোর্ডের দিকে অঙ্গুলি হেলাইয়া বলিতেন, “এই উক্তি আমার নয়, যে শাস্ত্রকে মানুষ প্রথম জ্ঞানোন্মেষের দিন হইতে অভ্রান্ত বলিয়া জানিয়া আসিয়াছে, সেই গণিতশাস্ত্রই তোমাদিগকে বিশ্বাস করিতে বলিতেছে।”

 আজ কয়েক বৎসর হইল, কোন বৈদ্যুতিক গবেষণা করিতে গিয়া লর্ড কেল্‌ভিন্ দেখিয়াছিলেন যে, যে তড়িৎপ্রবাহের স্পর্শে প্রাণীর জীবন সংশয় হয়, অবস্থাবিশেষে দেহের ভিতর দিয়া তাহা অপেক্ষা প্রবলতর প্রবাহ চালাইলে প্রাণীর কোনই অনিষ্ট হয় না।