পাতা:প্রাকৃতিকী.pdf/১২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১০২
প্রাকৃতিকী

গেলে, রক্তসঞ্চলন-পদ্ধতি ও শ্বাসযন্ত্রের ক্রমিক পরিবর্ত্তন অনুসন্ধিৎসুর দৃষ্টি আকর্ষণ করে। সাধারণ স্থলচরদিগের মধ্যে যাহাদের হৃৎপিণ্ডের প্রকোষ্ঠের সংখ্যা বাড়িয়া গিয়াছিল, এবং সঙ্গে সঙ্গে ফুস্‌ফুসের আয়তনও প্রসারিত হইয়াছিল, তাহারা আর পূর্ব্বের প্রকৃতি রক্ষা করিয়া থাকিতে পারে নাই। বৃহৎ ফুস্‌ফুসের সাহায্যে পরিষ্কৃত হইয়া বিশুদ্ধ রক্ত সর্ব্বদাই তাহাদের ধমনীতে চলিত। তাছাড়া দেহাভ্যন্তরে বিশুদ্ধ অক্সিজেনের যোগে প্রবলভাবে রাসায়নিক কার্য্য শুরু হওয়ায়, পূর্ব্বপুরুষদিগের তুলনায় তাহাদের শরীরের তাপও যথেষ্ট বৃদ্ধি পাইয়া গিয়াছিল। এই প্রকারে নবশক্তিযুক্ত হইয়া নুতন জীবগণ অলস হইয়া বসিয়া থাকিতে পারে নাই। সেই সময়ে সমগ্র ভূভাগ জলচর জীব হইতে উৎপন্ন মহাকায় সরীসৃপ (Reptiles) দ্বারা আকীর্ণ ছিল। ইহাদেরি সহোদরগণ যখন নূতন শক্তি এবং উন্নত প্রকৃতি লইয়া জন্মগ্রহণ করিল, তখন নূতন পুরাতনে ঘোর সংগ্রাম উপস্থিত হইয়াছিল। নূতন জীব প্রচুর অক্সিজেন দেহস্থ করিয়া যে শক্তির সঞ্চয় করিত, তাহাই উহাদিগকে মহাকায় সরীসৃপদিগের গ্রাস হইতে রক্ষা করিত। ক্ষিপ্রতা ও অক্লান্ত পরিশ্রমের প্রতিযোগিতায় পুরাতন নূতনকে পরাভব করিতে পারিত না। ইহা ছাড়া এই সময়ে নূতন জাতিতে আর যে একটি শুভ লক্ষণ প্রকাশ পাইয়াছিল, তাহা পুরাতনকে আরো পশ্চাতে রাখিয়াছিল। পুরাতন জীবগণ বংশবিস্তারের জন্য অণ্ড প্রসব করিত, তাহাদেরি সন্তানদিগের শরীরে যখন উষ্ণ শোণিতধারা বহিতে লাগিল, তখন এই সৌভাগ্যবান্ বংশধরগণ অণ্ড প্রসব অভ্যাস ত্যাগ করিয়া জীবন্ত শাবক প্রসব করিতে আরম্ভ করিল। এই ব্যাপারটি নূতন জীবগুলিকে মনুষ্যত্বের দিকে এত অধিক অগ্রসর করিয়াছিল যে, মূল জীবের মনুষ্যত্বলাভের আশায় এখানেই জলাঞ্জলি পড়িয়াছিল।