পাতা:প্রাকৃতিকী.pdf/১৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
প্রাণিদেহের উত্তাপ
১২১

বায়ুর অক্সিজেনের সহিত মিলিয়া তাপের উৎপত্তি করে, ভুক্তদ্রব্যের অঙ্গার ও হাইড্রোজেন ঠিক্ সেই প্রকারে অক্সিজেনের সহিত মিলিয়া দেহ-তাপের সৃষ্টি করে। ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথমে অক্সিজেনের আবিষ্কার হইলে দেহজ তাপের এই সিদ্ধান্তটিই প্রতিষ্ঠা লাভ করিয়াছিল, আধুনিক বৈজ্ঞানিকগণও মূলে ইহাকে স্বীকার করিতেছেন। ল্যাভোসিয়ার সাহেব বলিতেন, প্রাণীর শ্বাসযন্ত্রই তাপের উৎপত্তিস্থান; শোণিতের সহিত সেই তাপ সর্ব্বাঙ্গে চালিত হইলে দেহ উত্তপ্ত হয়। বলা বাহুল্য, তাপোৎপত্তির স্থান-সম্বন্ধে এই সিদ্ধান্তটিকে এখন আর কেহ স্বীকার করেন না। মাংসপেশী (Muscles) এখন শারীরিক তাপের কেন্দ্র বলিয়া স্বীকৃত হইতেছে; এবং তন্মধ্যে হৃৎপিণ্ড যকৃৎ প্রভৃতির পেশীতে যে তাপ উৎপন্ন হয়, তাহাই পরিমাণে অধিক বলিয়া স্থিরীকৃত হইয়াছে।

 শরীর হইতে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পরও যে, রক্তহীন মাংসপেশী তাপের উৎপত্তি করে, জর্ম্মান্ পণ্ডিত হেলম্‌হোজ্ একাধিক পরীক্ষায় তাহা সুস্পষ্ট দেখাইয়াছেন। ভেকের দেহ হইতে নিঃশেষে সমস্ত রক্ত বহির্গত করিয়া, শিরায় উপশিরায় লবণের জল চালাইতে থাকিলে, দেহের উষ্ণতা কমে না; সুস্থ অবস্থায় শ্বাস প্রশ্বাসের সহিত যেমন অঙ্গারক বাষ্প বাহির হয়, এখানেও তাহা সেই প্রকারেই বাহির হইতে থাকে। রক্তের সহিত যে দেহের উষ্ণতার বিশেষ সম্বন্ধ নাই, তাহা এই পরীক্ষায় বেশ বুঝা যায়।

 দেহের উষ্ণতা লইয়া প্রাণিজাতিকে উষ্ণশোণিত (Homeiothermic) এবং শীতলশোণিত (Poikilothermic) নামক যে দুই শ্রেণীতে বিভাগ করা হয় তাহার বিশেষ পরিচয় প্রদান নিষ্প্রয়োজন। যে-সকল প্রাণী চারিপার্শ্বের উষ্ণতা অনুসারে দেহের উষ্ণতাকে পরিবর্ত্তিত করিতে পারে, সেগুলি শীতলশোণিত প্রাণী নামে পরিচিত।