পাতা:প্রাকৃতিকী.pdf/১৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১২২
প্রাকৃতিকী

সর্প, সরীসৃপ, ভেক, পতঙ্গ প্রভৃতি প্রাণী এই শ্রেণীভুক্ত। স্তন্যপায়ী প্রাণী বা পক্ষিজাতি খুব ঠাণ্ডা বা গরমে পড়িলেও দেহের উষ্ণতাকে এক একটি নির্দ্দিষ্ট সীমার উপরে বা নীচে যাইতে দেয় না। এই জন্য ইহারা উষ্ণশোণিত প্রাণী বলিয়া পরিচিত। কেবল দেহের উষ্ণতা দেখিয়া প্রাণিজাতির এই শ্রেণীবিভাগ প্রচলিত থাকিলেও, জীবতত্ত্ববিদ্‌গণ আজকাল এ বিভাগকে বিজ্ঞানসম্মত বলিতে চাহেন না। মধুমক্ষিকা পতঙ্গশ্রেণীভুক্ত। উত্তাপ পরীক্ষা করিলে ইহাদিগকে শীতলশোণিত প্রাণীর দলে ফেলিতে হয়। কিন্তু ঘোর শীতের সময়েও মৌ-চাকের ভিতরকার উষ্ণতাকে বাহিরের উষ্ণতা অপেক্ষা প্রায় সত্তর ডিগ্রি অধিক দেখা যায়। ভেক বা মৎস্যকে ঈষদুষ্ণ জলে ছাড়িয়া দিলে তাহাদের দেহের উষ্ণতা অতি অল্প সময়ের মধ্যে জলের অনুরূপ হইয়া দাঁড়ায়। ভেক, সর্প প্রভৃতি যেমন শীতকালে মৃতবৎ হইয়া নিদ্রা যায়, শীতপ্রধান দেশের অনেক স্তন্যপায়ী সেই প্রকার দীর্ঘ শিশিরসুপ্তি (Hibernation) উপভোগ করে। উষ্ণশোণিত প্রাণী হইলেও, এই সময়ে ইহাদের দেহের উষ্ণতা স্পষ্ট কমিয়া বাহিরের বায়ুর উষ্ণতার সমান হইয়া দাঁড়ায়। তা’ ছাড়া মানবশিশু পক্ষিশাবক প্রভৃতিও যে শীতলশোণিত প্রাণীর ন্যায় দেহ-তাপকে নিয়মিত করিতে পারে তাহারও অনেক দৃষ্টান্ত পাওয়া গিয়াছে। কাজেই সুস্পষ্ট রেখাপাত করিয়া শীতলশোণিত ও উষ্ণশোণিত এই দুই ভাগে প্রাণীকে ভাগ করা চলে না; করিতে গেলেই সঙ্কটে পড়িতে হয়।

 যাহা হউক কি প্রকারে প্রাণিদেহে তাপের উৎপত্তি হয় এখন আলোচনা করা যাউক; এই বিষয়ের মীমাংসা করিতে গিয়া বৈজ্ঞানিকগণ দেহকে একটা যন্ত্রের সহিত তুলনা করিয়াছেন। কাঠ বা কয়লার যে শক্তি সুপ্তাবস্থায় (Latent) থাকে, বাষ্পযন্ত্রের চুল্লীতে