পাতা:প্রাকৃতিকী.pdf/১৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
প্রাণিদেহের উত্তাপ
১২৯

শরীরের তাপ-বিকিরণশক্তি কমিয়া আসে বলিয়া, উষ্ণতার মাত্রা বৃদ্ধি পাইয়া যায়।

 ম্যালেরিয়া প্রভৃতি জ্বরে দৈহিক উষ্ণতার যে আকস্মিক বৃদ্ধি দেখা যায়, তাহার কারণটা কিছু স্বতন্ত্র। বাহির হইতে কোনপ্রকার আঘাত-উত্তেজনা পাইলেই জীবদেহের আহত অংশ সহজে উত্তেজিত হইয়া পড়ে; কিন্তু মৃত বা নির্জীব পদার্থে আঘাত দিলে, তাহা ঐ প্রকারে সাড়া দেয় না। সজীব পদার্থের এই সাড়া দেওয়া ব্যাপারে একটা গভীর তত্ত্ব নিহিত আছে। বৈজ্ঞানিকগণ দেখিয়াছেন, আঘাতে উত্তেজিত হইয়া পড়া জীবনীশক্তিরই প্রধান লক্ষণ এবং উত্তেজিত হইয়া সাড়া দেয় বলিয়াই আহত অংশ আঘাতের অপকারিতা হইতে মুক্তি লাভ করে। সুতরাং সবল রোগীর দেহে ম্যালেরিয়ার সেই কোটি কোটি জীবাণু আশ্রয় গ্রহণ করিয়া যখন দেহ-কোষগুলিতে আঘাত দিতে থাকে, তখন সেই আহত কোষগুলি নিশ্চেষ্ট হইয়া থাকিতে পারে না; অস্তিত্ব অক্ষুণ্ণ রাখিবার জন্য তাহারা আপনা হইতেই চঞ্চল ও উত্তেজিত হইয়া প্রতিক্রিয়ার আরম্ভ করিয়া দেয়। কাজেই ইহাতে দেহে তাপের মাত্রা বাড়িয়া চলে। সুতরাং দেখা যাইতেছে, সাধারণ জ্বরে দেহের যে উষ্ণতা বৃদ্ধি হয়, তাহা ব্যাধি নয়, বরং ব্যাধি প্রশমনেরই একটা উপায়। কিছুদিন পূর্ব্বেও চিকিৎসকগণ নানা ঔষধ প্রয়োগে জোর করিয়া জ্বরের তাপ কমাইবার চেষ্টা করিতেন। আজকাল এই চিকিৎসা পদ্ধতির বড় প্রচলন দেখা যায় না। যে সকল ঔষধ জীবাণু নাশ করিয়া উত্তেজনার মূল কারণটিকে উন্মূলিত করে, সাধারণ জ্বরের চিকিৎসায় এখন তাহাদেরি আদর বাড়িতেছে। কুইনিন্ জ্বরের তাপকে কমায় না, যে সকল জীবাণু দেহে আশ্রয় গ্রহণ করিয়া তাপের উৎপত্তি করে তাহাদিগকে নষ্ট করে বলিয়াই উহার এত আদর।

 জ্বরে যে তাপের বৃদ্ধি দেখা যায়, তাহা দেহরক্ষার জন্যই হয় সত্য,