পাতা:প্রাকৃতিকী.pdf/১৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৪৪
প্রাকৃতিকী

 শাস্ত্রে বলে, “যজ্ঞার্থে পশবঃ সৃষ্টা স্বয়মেব স্বয়ম্ভুবা”। কিন্তু প্রকৃতির কার্য্য পরীক্ষা করিলে শাস্ত্রের উক্তির সহিত ঘোর অসামঞ্জস্য দেখা যায়। এ কথা কখনই স্বীকার করা যায় না যে, উচ্চবুদ্ধিসম্পন্ন প্রাণীদের যজ্ঞের আহুতির জন্যই দুর্ব্বল ও অল্পবুদ্ধিসম্পন্ন জীবের সৃষ্টি হইয়াছে। বাঘ ভালুকের তীক্ষ্ণ নখদন্ত, সজারুর গায়ের কাঁটা, কচ্ছপ ও শম্বুকজাতীয় প্রাণীর কঠিন দেহাবরণ, গো, মেষ ছাগাদির শৃঙ্গ, বোল্‌তা ও মধুমক্ষিকার হুল, এবং সাপের বিষদন্ত সকলই আত্মত্রাণের মহা অস্ত্র। কীট-পতঙ্গ অতি ক্ষুদ্র প্রাণী, ইহাদের ধারালো হুল নাই, কিন্তু কেহ কেহ দেহ হইতে এমন দুর্গন্ধযুক্ত রস নিঃসৃত করে যে, তাহাতে শত্রু উহাদের নিকটবর্ত্তী হইতে ভয় পায়। গ্রীষ্ম ও বর্ষার রাত্রিতে আলো জ্বালিয়া বসিলে, এই প্রকার দুর্গন্ধযুক্ত বহু কীটপতঙ্গ দেখা গিয়া থাকে। বেঙ্ অতি নিরীহ প্রাণী, ইহাদের শিং নাই, ধারালো দাঁত বা হুল নাই, কিন্তু ইহারা লম্বা লম্বা লাফ দিতে পারে, তাহাই আত্মরক্ষার পক্ষে যথেষ্ট হয়। গেছো এবং সেপো বেঙের লাফও খুব বড় এবং সঙ্গে আবার ইহাদের দেহ হইতে এক প্রকার বিষও বাহির হয়, এই বিষের একটু পরিচয় পাইলেই কোন শত্রু ইহাদের নিকটবর্ত্তী হয় না। কয়েক জাতীয় গিরগিটিও এই প্রকারে দেহ হইতে বিষ নির্গত করিয়া আত্মরক্ষা করে। সুতরাং দেখা যাইতেছে প্রকৃতিদেবী তাঁর এই অল্পবুদ্ধি ও দুর্ব্বল সন্তানগুলিকে এই সকল অস্ত্রে সজ্জিত করিয়া ভূতলে ছাড়িয়া দিয়াছেন, অপর বলবান প্রাণীদের সহিত সংগ্রাম করিয়া নিজেদের অস্তিত্ব অক্ষুণ্ণ রাখুক্ ইহাই তাঁহার অভিপ্রায়। উদ্ভিদ্‌গণ ইতর প্রাণী অপেক্ষা আরো দুর্ব্বল ও নিঃসহায়, বেঙ্ বা হরিণের মত লম্বা লম্বা লাফ দিয়া যে শত্রুর আক্রমণ ব্যর্থ করিবে, তাহার সাধ্য ইহাদের নাই। কাজেই একস্থানে দাঁড়াইয়া যাহাতে আত্মরক্ষা করিতে পারে তাহার ব্যবস্থা ইহাদের দেহে রাখিতে