পাতা:প্রাকৃতিকী.pdf/১৮৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৬০
প্রাকৃতিকী

ও কলের ঝন্‌ঝনানি। রহস্যকুহেলিকাবৃত সৃষ্টির যে-সকল লীলা দেখিয়া সাধারণ মানুষ পুলকিত হইয়া পড়ে, এবং বিশ্বেশ্বরের উদ্দেশ্যে আপনা হইতেই মাথা নত করে, সেই লীলা দেখিলেই বৈজ্ঞানিকের গাত্রজ্বালা উপস্থিত হয়। তিনি দেখিতে চাহেন, কোন প্রাকৃতিক যন্ত্রে কোন্ নিয়মে ঐ লীলার বিকাশ হইতেছে। কাজেই যখন অমৃত ও বিষের উপাদান অবিকল একই দেখা গেল, তখন বৈজ্ঞানিক মহলে পরীক্ষার ধুম পড়িয়া গিয়াছিল, এবং শেষে স্থির হইয়াছিল, উহাদের উপাদান একই বটে কিন্তু প্রত্যেকটিতে যে প্রকারে পরমাণু সজ্জিত আছে, তাহা এক নয়। এইজন্যই অমৃত ও গরলের গুণে এতটা পার্থক্য।

 এখন জীবদেহে গরল ও অমৃতের কার্য্য কিপ্রকার আলোচনা করা যাউক। ইহার জন্য একটু ভূমিকার প্রয়োজন হইবে। কারণ বিষয়টির সহিত রসায়নশাস্ত্রের অনেক তত্ত্ব জড়ানো আছে। মূলপদার্থ মাত্রেরই পরমাণুর একটা প্রধান ধর্ম্ম এই যে, তাহারা একা পৃথক্ পৃথক্‌ অবস্থায় থাকিতে চায় না। কেহ দুই হাত বাড়াইয়া, কেহ তিন, বা চার, পাঁচ ও ছয় হাত বিস্তৃত করিয়া অপর পরমাণুর সহিত মিলিতে চেষ্টা করে। হাতে হাতে জোড় বাঁধিয়া মিলিয়া গেলে, পরমাণু সাম্যাবস্থায় আসিয়া দাঁড়ায়, তখন তাহাদের মধ্যে আর চঞ্চলতা দেখা যায় না। বৈজ্ঞানিকগণ বলেন, যখন পরমাণুগণ এই সাম্যাবস্থায় (Saturated Condition) আসে, তখন তাহাদের রাসায়নিক কার্য্য লোপ পাইয়া যায়। আমরা যাহাকে জীবন বলি, তাহা রাসায়নিক কার্য্য লইয়াই। জীবশরীর যে-সকল পরমাণু দ্বারা গঠিত, সেগুলি সর্ব্বদাই চঞ্চল এবং অপর পরমাণুর সহিত মিলিত হইবার জন্য সর্ব্বদাই সচেষ্ট। এই মিলন যখন কোন প্রকারে হইয়া যায়, তখনই জীবের মৃত্যু ঘটে। মৃত্তিকা, শিলা, ধাতু প্রভৃতি জড় পদার্থের পরমাণুতে এই মিলন হইয়াই আছে, এজন্যই ইহারা নির্জীব।