পাতা:প্রাকৃতিকী.pdf/২১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৮৬
প্রাকৃতিকী

 আমরা পূর্ব্বে বলিয়াছি সজীব নির্জীব নানা পদার্থের সূক্ষ্ম কণা পরীক্ষা করিয়া ডুবারন্ সাহেব যে সজীবতার লক্ষণ দেখিয়াছিলেন, তাপ দিয়া আঘাত দিয়া চূর্ণ বিচূর্ণ করিয়া তিনি সেগুলির জীবধর্ম্মের লোপ করিতে পারেন নাই, এবং সেগুলিকে কোন ক্রমে মাধ্যাকর্ষণের নিয়মেই বাধ্য করা যায় নাই। এখন প্রশ্ন হইতে পারে, সৃষ্ট পদার্থমাত্রই যখন ঐ “সজীবকণা” দ্বারা গঠিত তখন একত্র হইলেই তাহারা কেন প্রাকৃতিক নিয়ম মানিয়। চলে? আবিষ্কারক এই প্রশ্নটির পরিষ্কার উত্তর দিতে পারেন নাই। তবে “সজীবকণা” পুঞ্জীভূত হইয়া পড়িলেই যে, তাহাদের সজীবতা লোপ পাইয়া যায়, এবং বিযুক্ত হইলেই যে আবার তাহার পুনর্বিকাশ হয়, পরীক্ষায় তিনি তাহা প্রত্যক্ষ দেখিয়াছেন।

 এই সকল দেখিয়া ডুবারন্ সাহেব বলিতেছেন, সৃষ্ট পদার্থ মাত্রেই যে-সকল উপাদানে গঠিত তাহা মূলে সজীব। “সঞ্জীবকণা” সকল পুঞ্জীভূত হইয়া যখন তাহাদের মুল-গত জীবধর্ম্মকে অপ্রকাশ রাখিয়া দেয়, তখনি সেই সকল “জীবকণার” সমষ্টি আমাদের নিকট নির্জীব পদার্থ হইয়া দাঁড়ায়, এবং পুঞ্জীভূত হওয়ার পরও সেগুলি যখন তাহাদের স্বাভাবিক সজীবতাকে নানা প্রকারে প্রকাশ করিতে থাকে, তখন সেই কণাসমষ্টি আমাদের নিকট সজীব হইয়া পড়ে। তবেই দেখা যাইতেছে, আমরা যে সজীব ও নির্জীবের ভেদ স্বীকার করিয়া আসিতেছি, তাহা ডুবারন্ সাহেবের মতে মূলগত ভেদ নয়। জীবনের প্রারম্ভ ও শেষ নাই। সমস্ত পদার্থই ভগবানের ইচ্ছায় সজীব হইয়া সৃষ্ট হইয়াছে। কাজেই আদিম জীবের উৎপত্তিতত্ত্ব লইয়া প্রাচীন ও আধুনিক পণ্ডিতগণ যে চেষ্টা করিয়া আসিয়াছেন, তাহা পণ্ডশ্রম হইয়াছে। জীরতত্ত্ববিদ্‌গণ যাহাকে স্বতঃজনন বলিয়াছেন, তাহা প্রতিদিন এবং প্রতি মুহূর্ত্তে ভগবানের ইচ্ছায়, নিয়তই আমাদের সম্মুখে চলিতেছে।