পাতা:প্রাকৃতিকী.pdf/২২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

দধি

থেজুর-রস, মধু, দুগ্ধ প্রভৃতি কতকগুলি জিনিষকে অনাবৃত অবস্থায় রাখিয়া দিলে, এগুলি কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বিকৃত হুইয়া পড়ে। একটু পরীক্ষা করিলেই দেখা যায়, একপ্রকার বাষ্প উঠিয়া জিনিষগুলিকে ফেনাযুক্ত করিয়া ফেলিতেছে। খেজুর রস এই প্রকারে বিকৃত হইলে এত ফেনিল হইয়া পড়ে যে, তখন ভাণ্ডে তাহার স্থান সংকুলান হয় না। বলা বাহুল্য, এই পরিবর্ত্তনে জিনিষের স্বাদ বর্ণ গন্ধ সকলই পৃথক্ হইয়া দাঁড়ায়। বিজ্ঞানের ভাষায় বলা যাইতে পারে এই প্রকারে উহাদের একটা রাসায়নিক পরিবর্ত্তন উপস্থিত হয়। চলিত কথায় আমরা এই পরিবর্ত্তনকে “গাঁজিয়ে যাওয়া” বলি। ইংরাজিতে উহাকে Fermentation বলে। খাঁটি সংস্কৃতে, ব্যাপারটাকে কিণ্বন বলা যাইতে পারে। যে বাষ্প উঠিয়া জিনিষগুলাকে ফেনাইয়া তোলে, তাহার পরিচয় গ্রহণ করা হইয়াছে। বাষ্পটা অঙ্গারক বাষ্প (Carbonic Acid Gas) ব্যতীত আর কিছুই নয়।

 টাট‍্কা খেজুরের রস, খাঁটি দুধ প্রভৃতি কিছুক্ষণ অনাবৃত রাখিবার পরই তাহাদের এই প্রকার বিকার দেখিলে বাহিরের কোন জিনিষের যোগেই এই পরিবর্ত্তন হইতেছে বলিয়া মনে হয়। প্রকৃত ব্যাপারটাও তাই বটে। বায়ুশূন্য পরিষ্কার পাত্রে রাখিলে উহাদের কোন বিকারই দেখা যাইবে না। জর্ম্মানির গো-শালাগুলির ঘন দুধ, ইংলণ্ডের মাছ, এবং আমেরিকার বড় বড় বাগানগুলির ফলমূল এই পদ্ধতিতেই টিনে আবদ্ধ হইয়া আমাদের বাজারে উপস্থিত হইতেছে এবং এইরূপ বায়ুশূন্য কৌটায় ফলরক্ষণ আমদের দেশেও আরম্ভ হইয়াছে।