পাতা:প্রাকৃতিকী.pdf/২৫৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পৃথিবীর শৈশব
২২৫

কিন্তু ইহার পৃষ্ঠভাগ তখনও অত্যুঞ্চ তরল ও বায়বীয় আবরণে আচ্ছন্ন ছিল। এই আবরণই কালক্রমে জমাট বাঁধিয়া এখনকার নদীসমুদ্র পাহাড়পর্ব্বতের সৃষ্টি করিয়াছে।

 আমাদের এখনকার আকাশে নাইট্রোজেন্ ও অক্সিজেন্ বায়ুর আকার গ্রহণ করিয়া অবস্থান করিতেছে। তা ছাড়া কিছু অঙ্গারক বাষ্প ও জলীয় বাষ্পও আছে। মাথার উপরে কোন জিনিষ চাপিয়া থাকিলে, তাহা বাহকের মস্তকে বিলক্ষণ চাপ দেয়। আমাদের ধরিত্রী সর্ব্বংসহা হইলেও, তাহাকে ঘেরিয়া যে, নাইট্রোজেন্ অক্সিজেন্ প্রভৃতি বায়বীয় পদার্থ রহিয়াছে, তাহা ভূপৃষ্ঠে চাপ দিতে ছাড়ে না। হিসাব করিলে দেখা যায়, আকাশের বায়বীয় পদার্থ এখন প্রতি বর্গইঞ্চিপরিমিত স্থানে প্রায় ৭০০ সের চাপ দিয়া থাকে। নদনদী সাগরমহাসাগরাদির জলরাশি এবং আমাদের ভূপৃষ্ঠের অধিকাংশ উপাদানই যখন বায়বীয় আকারে সদ্যোজাত পৃথিবীকে ঘেরিয়া ছিল, তখন পৃথিবীর উপরে আকাশের চাপের পরিমাণ যে, অত্যন্ত অধিক ছিল তাহা সহজেই অনুমান করা যায়। আধুনিক বৈজ্ঞানিকগণ শিশু পৃথিবীর উপরকার চাপের পরিমাণ হিসাব করিয়া, প্রতি বর্গ ইঞ্চিতে অন্ততঃ ৬২ মণ হইতে দেখিয়াছেন। এখন প্রতি বর্গ ইঞ্চিতে আকাশের বায়ুরাশি যে সাড়ে সাত সের চাপ দেয়, তাহার পরিচয় আমরা হঠাৎ পাই না, কিন্তু আমাদের অলক্ষ্যে উহা অনেক কাজ করে, উদ্ভিদ ও প্রাণীর দেহযন্ত্রগুলির কথা স্মরণ করিলে বায়ুর চাপ দ্বারাই ইহাদের অনেকগুলিকে নিয়ন্ত্রিত হইতে দেখা যায়। সেই অত্যুষ্ণ দ্রব পদার্থময় ধরাপৃষ্ঠে তখন জীবের বাস ছিল না, কাজেই জীবের উপরে সেই বিশাল ৬২ মণ চাপের কোনই কার্য্য দেখা যাইত না, কিন্তু ইহা দ্বারা সেই সময়ে ভূপৃষ্ঠের যে কোন পরিবর্ত্তন হয় নাই একথা বলা যায় না।

 আমরা পূর্ব্বেই বলিয়াছি, কোন নীহারিকা-রাশি হইতে বিচ্ছিন্ন