পাতা:প্রাকৃতিকী.pdf/২৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পৃথিবীর শৈশব
২২৯

পৃথিবীর দেহাভ্যন্তরে ছিল, তখন পৃথিবীর আকাশের প্রবল চাপ ঐ বাষ্পকণিকাকে বাহির হইতে দেয় নাই; কিন্তু যখনই উহা পৃথিবী ত্যাগ করিয়া চাপমুক্ত হইয়া পড়িয়াছিল, তখন হইতেই বাহির হইবার জন্য যেন উহাতে নূতন বলের সঞ্চার হইয়াছিল। জমাট চন্দ্রদেহের আবরণ ভেদ করিয়া ঐ আবদ্ধ বাষ্পরাশি বাহির হইবার সময়ে যে সকল বৃহৎ গহ্বর রচনা করিয়াছিল, তাহাদিগকেই আমরা এখন দূর হইতে আগ্নেয়গিরির আকারে দেখিতেছি। কোন সংকীর্ণ স্থানে আবদ্ধ বারুদে আগুন দিলে যে বাষ্প উৎপন্ন হয়, তাহা পাত্রটিকে খণ্ড খণ্ড করিয়া বহির্গত হয়, এবং সঙ্গে সঙ্গে পাত্রের দুই চারিখানি ভগ্ন অংশও বহিয়া লইয়া দূরে ফেলিয়া দেয়। পণ্ডিতগণ বলেন, চন্দ্রদেহের আবদ্ধ বাষ্প যখন সবেগে বাহির হইতে আরম্ভ করিয়াছিল, তখন সঙ্গে সঙ্গে চন্দ্রের দেহের টুক্‌রা উর্দ্ধে উৎক্ষিপ্ত করিয়াছিল। এই টুক্‌রাগুলিই ক্ষুদ্র জ্যোতিষ্কের আকারে বহুদিন আকাশে ঘুরিয়া পৃথিবীর আকর্ষণের সীমায় আসিলে এখন উল্কাপিণ্ডের আকারে ভূ-পৃষ্ঠে পতিত হয়। অনেক উল্কাপিণ্ডই আমাদের আকাশের বায়ুর ভিতর দিয়া আসিবার সময়ে, বায়ুর ঘর্ষণজ তাপে জ্বলিয়া পুড়িয়া ভস্ম হইয়া যায়, এবং যেগুলি খুব বড় সেগুলিরই দগ্ধাবশেষ ভূপৃষ্ঠে পতিত হয়। এই সকল উল্কার গঠনোপাদান পরীক্ষা করিলে আমাদের পৃথিবীর শিলামৃত্তিকার সকল উপাদানগুলিই তাহাতে একে একে ধরা পড়িয়া যায়। উল্কাপিণ্ডগুলি এখন স্বাধীন জ্যোতিষ্কের আকারে বিচরণ করিলেও দূর অতীত কালে উহা যে, পৃথিবীর আত্মজ চন্দ্রেরই কুক্ষিগত ছিল, পূর্ব্বোক্ত প্রমাণগুলির কথা স্মরণ করিয়া অনেকেই ইহা স্বীকার করিতেছেন।

 যাহা হউক চন্দ্রের জন্ম সময়ে পৃথিবীর যে এক সঙ্কটকাল উপস্থিত হইয়াছিল, ইহা নিশ্চিত। চন্দ্র জন্মগ্রহণ করিয়াই দূরে গমন করে