পাতা:প্রাকৃতিকী.pdf/৩১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিজ্ঞানে সূক্ষ্মগণনা
২৬৯

পথ সুগম করিতে হয়। সুতরাং নক্ষত্র-পর্য্যবেক্ষণের জন্য জ্যোতিষিগণ যে শ্রম করেন এবং যে সূক্ষ্ম হিসাবপত্র খাড়া করেন, তাহারও মধ্যে একটুও বাহুল্য নাই বলিয়াই মানিতে হয়।

 আঠারো কোটি ষাইট লক্ষ মাইল ব্যাসবিশিষ্ট এক মহাবৃত্তাকার পথে পৃথিবী সূর্য্যকে এক বৎসরকালে প্রদক্ষিণ করিয়া আসে। অর্থাৎ বলিতে হয়, পৃথিবী আজ আকাশের যে অংশে আছে, ছয় মাস পরে তাহা আঠারো কোটি ষাইট্ লক্ষ মাইল দূরে গিয়া দাঁড়াইবে। আমরা যখন গাড়িতে বা ঘোড়ায় চড়িয়া চলিতে থাকি তখন পথের পার্শ্বের বৃক্ষগুলিকেও স্থানচ্যুত হইতে দেখি। যে গাছটি একটু পূর্ব্বে আমাদের সম্মুখে ছিল, গাড়ি অগ্রসর হইলে তাহা পিছাইয়া পড়ে। সুতরাং এই পাহাড়পর্ব্বত, নদী-সমুদ্র বুকে লইয়া আমাদের এই পৃথিবী যখন ছয়মাসে আঠারো কোটি ষাইট্ লক্ষ মাইল পথ অতিক্রম করে, তখন পথিপার্শ্বস্থ বৃক্ষের ন্যায় আকাশের নক্ষত্রগুলিকেও একটু আগাইতে বা পিছাইতে দেখারই সম্ভাবনা। নক্ষত্রগুলি পৃথিবীর গতিতে প্রকৃতই এই প্রকার নড়াচড়া করে কি না, জ্যোতিষিগণ বহু দিন হইতে ইহার অনুসন্ধান করিতেছেন এবং কতকগুলি স্থির নক্ষত্রের এই প্রকার স্থানচ্যুতিও লক্ষ্য করিয়াছেন। এখন এই শ্রেণীর নিকট নক্ষত্রের সংখ্যা বহু জ্যোতির্ব্বিদের চেষ্টায় প্রায় চারি শত হইয়া দাঁড়াইয়াছে। কাজেই বলিতে হয়, আকাশের অসংখ্য নক্ষত্রের মধ্যে কেবল চারি শতটিই সৌরজগতের নিকটবর্ত্তী এবং তাহাদেরই কেবল দূরত্ব পরিমাপের উপায় আছে, তদ্ব্যতীত সকল নক্ষত্র এত দূরে অবস্থিত যে, আমরা সাড়ে আঠারো কোটি মাইল পরিভ্রমণ করিয়াও তাহাদের একটুও বিচলন লক্ষ্য করিতে পারি না। সূক্ষ্ম পর্য্যবেক্ষণের ফলে জ্যোতিষিগণ অনন্ত ব্রহ্মাণ্ডের এই যে একটু আভাস প্রদান করিতে সক্ষম হইয়াছেন, তাহা জনসাধারণকে কম লাভবান করে নাই।