পূর্ব্বোক্ত প্রকারে অতি দূরবর্ত্তী নক্ষত্রদিগের সংবাদ জানিতে না পারিয়া জোতিষিগণ হতাশ হন নাই। উপায়ান্তর অবলম্বন করিয়া আরো সূক্ষ্মতর হিসাবের সাহায্যে দূর নক্ষত্রের সংবাদ আনিবার চেষ্টা চলিতেছে। আমরা পূর্ব্বেই বলিয়াছি, প্রত্যেক নক্ষত্রই এক একটি মহাসূর্য্য, এবং তাহাদের প্রত্যেকেরই এক একটি স্বকীয় গতি আছে। যেগুলি অতি দূরে অবস্থিত, সূক্ষ্ম পর্য্যবেক্ষণে তাহাদের গতি দুই চারি শত বৎসরেও ধরা পড়ে না; কেবল নিকটবর্ত্তী নক্ষত্রেরাই একটু দীর্ঘকালে একটুমাত্র বিচলন দেখাইয়া স্বকীয় গতির পরিচয় প্রদান করে। নক্ষত্রদিগের এই গতির পরিচয় পাইয়া হার্সেল্ সাহেবের মনে হইয়াছিল, আমাদের সূর্য্যটি যখন নক্ষত্রজাতীয় জ্যোতিষ্ক, তখন ইহারও একটা গতি থাকার সম্ভাবনা। হার্সেল্ দীর্ঘকাল ধরিয়া এই বিষয়টি লইয়া পর্য্যবেক্ষণ ও গণনা আরম্ভ করিয়াছিলেন। এবং শেষে দেখাইয়াছিলেন, বুধ, বৃহস্পতি, শনি, পৃথিবী প্রভৃতি গ্রহ-উপগ্রহে পরিবৃত হইয়া আমাদের সূর্য্যটি সতাই হারকিউলিস্ রাশির দিকে প্রচণ্ড বেগে ছুটিয়া চলিয়াছে। আধুনিক জ্যোতিষিগণ হার্সেল সাহেবের প্রদর্শিত পন্থায় নানা প্রকার উন্নত যন্ত্রাদি-সাহায্যে সৌরজগতের গতির পর্য্যবেক্ষণে নিযুক্ত আছেন এবং এই গতির পরিমাণ বৎসরে অন্ততঃ চল্লিশ কোটি মাইল বলিয়া স্থির করিয়াছেন। কাজেই পৃথিবীর ষাণ্মাসিক সাড়ে আঠারো কোটি মাইল পরিভ্রমণেও যে-সকল নক্ষত্র বিচলন দেখাইয়া আত্মপরিচয় দেয় নাই, সৌরজগতে বার্ষিক চল্লিশ কোটি মাইল ভ্রমণে তাহাদেরই পরিচয়-গ্রহণের সম্ভাবনা দেখা যাইতেছে। দূর নক্ষত্রদিগের পরিচয় সংগ্রহের জন্য জ্যোতিষিগণের এই যে অক্লান্ত শ্রম ইহার কি সার্থকতা নাই? অনন্ত ব্রহ্মাণ্ডের রহস্য বুঝিয়া মানবজাতি কি ইহাতে জ্ঞানলাভ করিতে পারিবে না?
যাঁহারা আধুনিক জ্যোতিষিক আবিষ্কারের সংবাদ রাখেন