পাতা:প্রাকৃতিকী.pdf/৩৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৮৬
প্রাকৃতিকী

 আমরা কিঞ্চিৎ বিশ্রামান্তে গুহার বাহিরে আসিলাম। অত্যুজ্জ্বল নক্ষত্রভূষিত আকাশের নীচে শান্ত প্রকৃতি বড়ই মনোরম বলিয়া বোধ হইল। অনতিকৃষ্ণ প্রান্তরের সহিত অনন্ত আকাশের আলিঙ্গন আরো মধুর; ক্ষীণ নক্ষত্রালোকে শুক্রগ্রহটিকে একটি অনন্ত বিষাদে পূর্ণ করিয়া রাথিয়াছে, এটা যেন সৃষ্টিকর্ত্তার ছেলেখেলার উদাহরণ, অনন্ত শক্তির আধার বিশাল নক্ষত্র ও নানা ঋতুসম্পন্ন গ্রহাদি নির্ম্মাণ করিতে করিতে বালসুলভ চাপল্য বশতঃ তিনি যেন কি গড়িতে কি গড়িয়া ফেলিয়াছেন, কিন্তু আশ্চর্য্যের বিষয় এই যে, ভাগ্যবান্ ভ্রাতাদের সহিত চিরদগ্ধ ও বিষাদাবগুণ্ঠিত শুক্রগ্রহটিও জগৎ-নিয়ন্তার কীর্ত্তিগাথার অনন্ত তানে, একটি ক্ষীণ-স্বর যোজনায় ভুলে নাই—দিগদিগন্তের নক্ষত্র, যেন মুগ্ধদৃষ্টিতে তাহাদের এক হতভাগ্য দুর্ব্বল ভ্রাতার ঐকান্তিকতা চাহিয়া দেখিবে। তখনও আমাদের পৃথিবী ক্ষুদ্র চন্দ্রের সহিত দিগন্তে প্রকাশিত ছিল, আমরা কিঞ্চিৎ অপেক্ষা করিয়া পৃথিবীর অস্তগমন দৃশ্য দেখিতে লাগিলাম। অসীম স্তব্ধ আকাশের এক প্রান্তে পৃথিবী মিট্ মিট্ জ্বলিতে ছিল—অনন্ত বিশ্বের তুলনায় পৃথিবী কি এতই ক্ষুদ্র? তবে পৃথিবীর ক্ষুদ্র জীব মানুষই বা কত ক্ষুদ্র এবং তাহাদের আকাঙ্ক্ষা, দুঃখ ও বাসনাই বা কত ক্ষুদ্র! বড়ই ক্ষোভের কথা, এই সুমহান্ দৃশ্যের মধ্যে বিশ্ব-মহিমার সার তত্ত্বটুকু প্রত্যক্ষ করিয়াও আধ্যাত্মিকতার চরমোৎকর্ষ হিন্দু-সন্তানটির মনে, একটুও বৈরাগ্যের ভাব উদিত হয় নাই,—গগন-প্রান্তের ক্ষুদ্র আলোকবিন্দুটি, আমার সেই মধুর গৃহ মনে করিয়া দিয়াছিল—বহুদূর স্থিত ছায়ারাজ্যের এক ক্ষুদ্র অংশ অধিকার করিয়া যে ক্ষুদ্র বাগানটি আছে, তাহাতে বান্ধব-সমাগম ও সান্ধ্য-আলাপন যে কত মধুর তাহাই কেবল মনে জাগিতেছিল; এই সুদীর্ঘ মরুব্যবধান উত্তীর্ণ হইয়া কখন সেই অতুল সৌন্দর্য্যময় জীবজগতের প্রাত্যহিক জীবনোৎসবে যোগ দিতে পারিব, কেবল তাহাই ভাবিতেছিলাম। বন্ধু ত আত্মহারা—