পাতা:প্রাকৃতিকী.pdf/৩৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শুক্র-ভ্রমণ
২৯৭

আর শুনিতে পাই নাই। প্রায় এক মিনিট এই প্রকারে নামিয়া আমরা সমুদ্রজলে পতিত হইলাম—পর্ব্বততলে বরফ বা শিলাদি কোন কঠিন পদার্থ ছিল না, নচেৎ আমরা সেই ভয়ানক বেগে পতিত হইয়া যে এককালে ধূলিসাৎ হইতাম তাহাতে আর সন্দেহ ছিল না। আমরা উভয়েই বিলক্ষণ সন্তরণ-পটু ছিলাম, পতনের পর অল্পায়াসেই অদূরবর্ত্তী এক বৃহৎ বরফখণ্ডে আশ্রয় গ্রহণ করিলাম।

 এই অভাবনীয় উপায়ে আমাদের জীবনরক্ষা হওয়ায়, আমরা একান্ত মনে জগদীশ্বরকে ধন্যবাদ প্রদান করিতে লাগিলাম; পা ধরিয়া টানিয়া বন্ধুকে এই মহা বিপদের সঙ্গী করায় আমি তাঁহার নিকট বড়ই লজ্জিত হইয়াছিলাম। ঘটোৎকচ যে প্রকার পর্ব্বতারোহণ-পারদর্শী তাহাতে শীঘ্র তাহার বিপদের কোনও সম্ভাবনা নাই জানিয়াও এখন সে কি প্রকার অবস্থায় আছে, আমরা তাহাই ভাবিতে লাগিলাম। এই সময়ে আমাদের নিকটেই উচ্চ কণ্ঠস্বর শ্রুত হইল। এই প্রাণিহীন তুষারপ্রদেশে কোথা হইতে শব্দ উৎপন্ন হইল দেখিবার জন্য চতুর্দ্দিকে দৃষ্টিনিক্ষেপ করায় আমাদের পশ্চাতে, একখানি নৌকারোহণ করিয়া কয়েকটি লোক তীরবেগে আমাদিগকে লক্ষ্য করিয়া আাসিতেছে দেখিতে পাইলাম। মুহূর্ত্ত মধ্যে নৌকাখানি আমাদের সম্মুখে আসিয়া উপস্থিত হইল; আরোহিগণ আমাদিগকে দেখিয়া বড়ই বিস্মিত হইয়া তাহাদের জাতীয় ভাষায় আমাদিগকে নানা কথা জিজ্ঞাসা করিতে লাগিল; আমরা তাহাদের ভাষা কিছুই জানিতাম না, কাজেই কোন কথারই উত্তর দিতে পারিলাম না। অধিক বিলম্ব না করিয়া তাহারা আমাদিগকে নৌকায় উঠাইয়া, পর্ব্বতপ্রমাণ ভাসমান বরফের মধ্যস্থ সঙ্কীর্ণপথ দিয়া চলিতে লাগিল এবং অতি অল্প সময় মধ্যে অনতিদূরবর্ত্তী এক বৃহৎ জাহাজে উঠাইল। জাহাজস্থ ব্যক্তিমাত্রেই আমাদিগকে দেখিয়া মহা বিস্মিত হইল, জাহাজের চালক