দুইটি পৃথক ধাতুকে জুড়িয়া, তাহাদের সংযোগস্থানে তাপ দিতে থাকিলে, আপনা হইতেই এই সংযুক্ত ধাতুতে বিদ্যুতের প্রবাহ উৎপন্ন হয়। বিজ্ঞানের ভাষায় এই বিদ্যুৎকে Thermo- Electricity অর্থাৎ তাপজ বিদ্যুৎ বলা হইয়া থাকে। বিদ্যুতের নাম যাহাই হউক, কি প্রকারে কেবল তাপ দ্বারা বিদ্যুতের উৎপত্তি হয়, এ পর্য্যন্ত তাহার সন্তোষজনক ব্যাখ্যান আমাদের জানা ছিল না। আধুনিক ইলেক্ট্রন সিদ্ধান্ত দ্বারা এই ব্যাপারটারও কারণ নির্দ্দেশ করা যাইতেছে। বৈজ্ঞানিকগণ বলিতেছেন, ধাতুর চিত্রে যে-সকল ইলেক্ট্রন থাকে, সকল ধাতুতে তাহাদের সংখ্যা সমান দেখা যায় না। সীসক (Lead) এবং বিস্মথ্ উভয়ই ধাতু পদার্থ, কিন্তু তাহাদের ভিতরকার ইলেক্ট্রনের সংখ্যা হিসাব করিতে গেলে দেখা যায়, বিস্মথের কোন নির্দ্দিষ্ট অংশে যে পরিমাণ ইলেক্ট্রন আছে, সীসাতে ঠিক তাহার দ্বিগুণ পরিমাণ বর্ত্তমান থাকে। বৈজ্ঞানিকগণ ধাতুমধ্যস্থ ইলেক্ট্রনের সংখ্যার এই অসমতাকেই তাপজ বিদ্যুতের কারণ বলিয়া নির্ণয় করিয়াছেন।
মনে করা যাউক, যেন একটি বিস্মথের দণ্ড এবং আর একটি সীসকের দণ্ড জোড়া দিয়া তাহাদের সন্ধিস্থলে তাপ দেওয়া যাইতেছে। এই ব্যবস্থায় বিস্মথ হইতে সীসকের দিকে এক সুস্পষ্ট বিদ্যুৎ প্রবাহ চলিতে দেখা যাইবে। বৈজ্ঞানিকগণ ইহার ব্যাখ্যানে বলিতেছেন, সীসাতে ইলেক্ট্রনের সংখ্যা বিস্মথের তুলনায় অনেক অধিক থাকে, কাজেই তাপসংযোগে সেগুলি অত্যন্ত বেগবান হইয়া এবং উত্তপ্ত সন্ধিস্থল অতিক্রম করিয়া বিস্মথের দিকে ধাবমান হয়। ইহাতে সীসক হইতে বিস্মথের দিকে ঋণাত্মক তাড়িতপূর্ণ ইলেক্ট্রনের প্রবাহ চলিতে আরম্ভ করে; আমরা বাহির হইতে এই ঋণাত্মক প্রবাহকেই বিস্মথ্ হইতে সীসার দিকে চালিত বিপরীতমুখী ধনাত্মক তড়িতের প্রবাহরূপে দেখিতে পাই।