পাতা:প্রাকৃতিকী.pdf/৯১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৭০
প্রাকৃতিকী

এক-একবার উপর্য্যুপরি আসিতেছে তাহা নির্ণয় করিয়া নক্ষত্রদের পরিভ্রমণ-কালও নির্ণয় করা যায়। এই পদ্ধতিতে আমাদের উত্তরাকাশের উজ্জ্বল নক্ষত্র ব্রহ্মহৃদয়কে (Capella) যুগ্ম বলিয়া জানা গিয়াছে এবং ইহার প্রত্যেক নক্ষত্র অপরটিকে ১০৪ বৎসরে প্রদক্ষিণ করে বলিয়া স্থির হইয়াছে। আজকাল যুগ্ম নক্ষত্রের তালিকা এত দীর্ঘ হইয়া পড়িয়াছে যে, জ্যোতিষিগণ বলিতেছেন, আকাশের অধিকাংশ নক্ষত্রই যুগ্ম ও আমাদের সূর্য্যের ন্যায় একক নক্ষত্র অতি অল্পই দেখা যায়।

 বিজ্ঞানজ্ঞ পাঠক অবশ্যই অবগত আছেন, আধুনিক জ্যোতিষিগণ সূর্য্যের বাষ্পাবরণটিতে স্থূলতঃ তিনটি স্তর দেখিতে পাইয়াছেন। সূর্য্যের মূল দেহটি কঠিন, কি তরল, কি বাষ্পাকারে আছে জানা যায় নাই। যদি বাষ্পাকারে থাকে, তাহা হইলে উহা যে অত্যন্ত চাপযুক্ত অবস্থায় আছে, আমরা বর্ণচ্ছত্র পরীক্ষায় তাহা বেশ বুঝিতে পারি। কঠিন, তরল বা চাপযুক্ত বাষ্পের বর্ণচ্ছত্র যেমন অখণ্ড হইয়া প্রকাশ পায়, সূর্য্যের মূলদেহের বর্ণচ্ছত্র ঠিক সেই প্রকার অখণ্ড আকারে দেখা দেয়। যাহা হউক সূর্য্যের যে তিনটি বাষ্পাবরণের কথা বলিতেছিলাম, তাহার প্রথমটিকে জ্যোতিষিগণ আলোকমণ্ডল (Photosphere) বলেন। সূর্য্যের এই যে দীপ্তি, তাহা আলোকমণ্ডল হইতে উৎপন্ন। মুলে এই মণ্ডল প্রজ্বলিত বাষ্প ব্যতীত আর কিছুই নয়। ইহারই পর সূর্য্যের বাষ্পাবরণের আর যে একটি স্তর আছে তাহাকে বর্ণমণ্ডল (Chromosphere) বলা হইয়া থাকে। পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণকালে যখন সৌরবিম্ব কৃষ্ণ চন্দ্র দ্বারা আচ্ছন্ন হইয়া পড়ে, তখন এই বর্ণমণ্ডল প্রত্যক্ষ দেখা যায়। রক্ত, গোলাপী প্রভৃতি নানা বর্ণে রঞ্জিত বাষ্পরাশি শিখাকারে উপরে উঠিয়া যে অত্যাশ্চর্য দৃশ্য দেখায়, তাহা প্রকৃতই দর্শনীয় ব্যাপার। ইহার পরই সূর্য্যের আকাশের যে তৃতীয় স্তরটি আছে, তাহ। জ্যোতিষিগণের নিকট ছটামুকুট (Corona) নামে প্রসিদ্ধ।