సెbr প্রাচীন বাঙ্গল সাহিত্যে মুসলমানের অবদান ভাষায় প্রবেশ করিয়াছে, তাহাই ইহারা ব্যবহার করিয়াছে। বর্তমানকালে গোড়া হিন্দুরা দিবারাত্র যে-সকল উর্দু কি ফারসী শব্দ জিহ্বাগ্রে ব্যবহার করিয়া থাকেন, লেখনী-মুখে তাহা বদলাইয়া তৎস্থলে সংস্কৃত শব্দ প্রয়োগ করেন, এইরূপে – ‘হজম’ স্থলে ‘পরিপাক’ বা ‘জীর্ণ’, ‘খাজনা স্তলে “রাজস্ব"," "ইজ্জৎ’ স্থলে সন্মান’, ‘কবর’ স্থলে ‘সমাধি’ ‘কবুল” স্থলে ‘স্বীকার’, ‘আমদানি স্থলে 'আনয়ন’ বা ‘সংগ্ৰহ করিয়া আনা’, ‘খেসারৎ’ স্থলে ‘ক্ষতি পূরণ, ‘জমিন স্থলে ভূমি’, ‘খানদান’ স্থলে পদ-প্রতিষ্ঠা', ইত্যাদি কথার প্রয়োগ করেন। একটু কাগজ লইয়। টুকিয়া দেখিবেন, বাঙ্গল ভাষায় এইরূপ বিদেশী শব্দ কত প্রচলিত হইয়। গিয়াছে । ইহাতে আমাদের ভাষার জাতি যায় নাই। পরের জিনিস আত্মসাৎ করিবার শক্তি সতেজ জীবনের লক্ষণ। শব্দগুলি বাদ-সাদ দিয়া ভাষা শুদ্ধ করিয়৷ ইহাকে তুলসীতলা করিয়া রাখিলে হিন্দু-মুসলমানের উভয়ের মাতৃভাষাকে আমরা খণ্ডিত ও দুৰ্ব্বল করিয়া ফেলিব। মানুষ পরদেশ ভাষা হইতে শব্দ চয়ন করে কখন ? যখন স্বীয় ভাষার কথাগুলি অপেক্ষা বিদেশী ভাষার শব্দ বেশ জোরের ও ভাব-প্রকাশের বেশী উপযোগী হয় ; জনসাধারণ যখন দেখে তাহাদের ভাষায় সেইরূপ বলীয়ান ও ভাবজ্ঞাপক-শব্দের অভাব, তখন তাহাদের স্বতঃসিদ্ধ নির্বাচনী-শক্তি ও অশিক্ষিত পটুত্ব গুণে সেই সকল শব্দের আমদানী করিয়া নিজের ভাষাকে সমৃদ্ধ করে। এখানে পণ্ডিতের র্কাচি চালাইবার অবকাশ নাই। এই সকল শব্দ ভাষার পুষ্টি-সহায়ক, ইহাদিগকে বাদ দিয়া গণ্ডীটা সঙ্কীর্ণ করা বুদ্ধিমানের কাজ নহে । পূৰ্ব্ববঙ্গ-গীতিকার ভাষা রাঢ়-দেশীয় লোকের কানে একটু বাধিবে, তাহারা ইঙ্গর রসাস্বাদ ততটা করিতে পারিবেন না, যতটা আমরা পারিব। ইহা প্রাদেশিকতার জন্ত । কিন্তু ইহাতে যে স্বল্প সংখ্যক বিদেশী শব্দ আছে, তাহা স্বাভাবিক ক্রমে আমাদের ভাষার সঙ্গে মিশিয়া গিয়াছে, তজ্জন্ত এই গীতিকাগুলি কখনই পরিহার্য্য বা বিরক্তিকর হয় নাই ।
পাতা:প্রাচীন বাঙ্গলা সাহিত্যে মুসলমানের অবদান.djvu/১০৭
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।