পাতা:প্রাচীন বাঙ্গলা সাহিত্যে মুসলমানের অবদান.djvu/৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

( R প্রাচীন বাঙ্গলা সাহিত্যে মুসলমানের অবদান আশ্চর্য্যের বিষয় এই যে, আরাকানের মগরাজা এবং তাহাদের মুসলিম অমাত্যগণ সকলেই এই বাঙ্গলা ভাষাকে ‘দেশী ভাষা’ বলিয়। উল্লেখ করিয়াছেন । ইহাতে কি এই অনুমান হয় না যে, আরাকানের প্রচলিত প্রাদেশিক ভাষা যাহাই থাকুক না কেন, সে দেশের লিখিত ভাষা ছিল বাঙ্গল । বৌদ্ধ মগ ও মুসলমান উভয়ই বাঙ্গলা ভাষাকে তাহাদের মাতৃভাষ! বলিয়া গ্রহণ করিধাছিলেন । সে অঞ্চলে বৌদ্ধ ও মুসলমানগণের মধ্যে কোন বিরোধ ছিল না , বৌদ্ধ-রাজারা অনেক সময়েই গুণী মুসলমান পাইলে তাহাকে প্রধান সচিব-স্বরূপ নিযুক্ত করিতেন এবং বাঙ্গলা ভাষাকে মাতৃ ভাষা জ্ঞান করিয়া উভয় সম্প্রদায়ের লোকই সমান আদরে তাহার চর্চা করিতেন। আবদুল হাকিমের নুরনাম কাব্যে প্রমাণিত হয় যে, যদি কোন মুসলমান উদ কে প্রাধান্ত দিয়া বাঙ্গল ভাষাকে উপেক্ষ করিত, অথবা ইহার বিশুদ্ধত নষ্ট করিতে চেষ্টত হইত, তবে কবির উত্তেজিতভাবে সেই মাতৃভাষী-বিদ্বেষীকে রূঢ় ভাষায় তিরস্কার করিতে ছাড়িতেন না । রাজাদের মধ্যে যুদ্ধ-বিগ্ৰহ হইলে আরাকালু মগের পত্তগীজ হার্যাদদের সঙ্গে আসিয়া পূৰ্ব্ববঙ্গ লুঠ করিত। সুন্দরী ব্রাহ্মণ কন্যাদের প্রতি তাহাদের লোলপ-দৃষ্টি বেশী পড়িত এবং হতভাগিনীদিগকে সহস্ৰ সহস্র সংখ্যায় লণ্ঠন করিয়া নিজ দেশে লইয়া যাইত। ভদ্র এবং ইতর শ্রেণীর শত শত মহিলার আর্তনাদে পূৰ্ব্ববঙ্গ এক সময়ে মুখরিত ছিল । তাহাদের বিলাপ ও স্বামীর উদ্দেশ্যে করুণ-নিবেদন-জ্ঞাপক বাঙ্গলা ছড়া আমরা অনেকগুলি পাইয়াছি। বিক্রমপুর প্রভৃতি অঞ্চলে ‘মগী ব্রাহ্মণ' বলিয়৷ এক শ্রেণীর ব্রাহ্মণ আছে। মগদের সংশ্রবে এবং তাহাদের মহিলাদের বিড়ম্বনায় সেই সকল ব্রাহ্মণ একরূপ জাতিচু্যত হইয়া আছে। শুধু ব্রাহ্মণ নহে, অপরাপর শ্রেণীর মধ্যেও মগদোষ-দুষ্ট পরিবারের অভাব নাই। এই মহিলারা আরাকানে নীত হইলে তাহাদের সংশ্রবে মগদের বাঙ্গল ভাষার জ্ঞান ও অনুরাগ বৃদ্ধি পাইয়াছিল, সন্দেহ নাই।