পাতা:প্রাচীন ভারতে নারী - ক্ষিতিমোহন সেন (১৯৫০).pdf/১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আদর্শ ও অধিকার

যোক্ত্রের দ্বারা পত্নীকে। পুরুষের সঙ্গেই তাঁহার অধিকার, পৃথক নয়। একই কাজে যেমন যজমানসাধ্য কৃত্য আছে তেমনি পত্নীসাধ্য কৃত্যও আছে।

 হারীতও যে নারীদের ব্রহ্মচর্য ও উপনয়নের অধিকার সমর্থন করিয়াছেন তাহা বুঝা যায় তাঁহার ‘প্রাগ্ রজসঃ সমাবর্তনম্’ কথাতে। বৃহদ্দেবতাতে দ্বিতীয় অধ্যায়ে ৭২-৮১ শ্লোকগুলিতে ব্রহ্মবাদিনী ‘বাক্’এর কথাই বর্ণিত। ৮২, ৮৩ ও ৮৪ শ্লোকে বেদের কয়েকটি নারী-ঋষির কথা বলা হইয়াছে। তাঁহাদের নাম ঘোষা, গোধা, বিশ্ববারা, অপালা, উপনিষৎ, নিষৎ, জুহূনাম্নী ব্রহ্মজায়া, অগস্ত্যের ভগ্নী অদিতি, ইন্দ্রাণী, ইন্দ্রমাতা সরমা, রোমশা, উর্বশী, লোপামুদ্রা, নদীসকল, যমী, নারী শশ্বতী, শ্রী, লাক্ষা, সার্পরাজ্ঞী, বাক্, শ্রদ্ধা, মেধা, দক্ষিণা, সূর্যা ও সাবিত্রী। ইঁহারা সকলেই ব্রহ্মবাদিনী বলিয়া বিঘোষিত—

ঘোষা গোধা বিশ্ববারা অপালোপনিষন্‌নিষৎ।
ব্রহ্মজায়া জুহূর্ণাম অগস্তস্য স্বসাদিতিঃ। ২.৮২
ইন্দ্রাণী চেন্দ্রমাতা চ সরমা রোমশোর্বশী।
লোপমুদ্রাচ নদ্যশ্চ যমী নারী চ শশ্বতী। ২. ৮৩
শ্রীর্লাক্ষা সার্পরাজ্ঞী বাক্ শ্রদ্ধা মেধা চ দক্ষিণা।
রাত্রী সূর্যা চ সাবিত্রী ব্রহ্মবাদিন্য ঈরিতাঃ। ২. ৮৪

 বৃহদ্দেবতা ইঁহাদিগকে ‘ব্রহ্মবাদিনী’ বলিয়াই ঘোষিত করিলেন, সমাজেও তাঁহারা ব্রহ্মবাদিনী নামেই প্রখ্যাত ছিলেন। কাজেই নারীদের ব্রহ্মবাদিনী হওয়ার অধিকার তখনও ছিল।

 গোভিল-গৃহ্যসূত্রে (২.১. ১৯) একটি মন্ত্রে আছে— প্রাবৃতাং যজ্ঞোপবীতিনীম্। সেখানে ভাষ্যকার দেখাইয়াছেন, নারীদের যজ্ঞসূত্রধারণ প্রচলিত ছিল। হারীতও যে ইহা বৈধ বলিয়াছেন তাহা বুঝা যায় তাঁহার ‘প্রাগ্‌রজসঃ সমাবর্তনম্’ এই কথায়

 আপস্তম্ব নারীদের শিক্ষা সমর্থন করিয়াছেন।[১]

 দুহিতাকে পণ্ডিতা করিবার ইচ্ছা থাকিলে (য ইচ্ছেদ্ দুহিতা যে পণ্ডিতা জায়েত) কি করিতে হইবে তাহারও বৃহদারণ্যক উপনিষদ (৬.৪.১৭) ব্যবস্থা দিয়াছেন। এখানে মূলের উদারতাটুকু শাঙ্কর ভাষ্যে দেখা যায় না। বৌধায়নেও (গৃহ্যসূত্র ৩.৪) এইরূপ উদারতার অভাব দেখা যায়। মীমাংসকদের মধ্যে


  1. যজ্ঞপরিভাষা, দ্বিতীয় সূত্র, ভাষ