পাতা:প্রাচীন ভারতে নারী - ক্ষিতিমোহন সেন (১৯৫০).pdf/১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
প্রাচীন ভারতে নারী

প্রভাকর যে দ্বিজনারীর বেদপাঠ সমর্থন করিয়াছেন তাহা মহামহোপাধ্যায় গঙ্গানাথ ঝা দেখাইয়াছেন।[১]

 মহাভারত (অনু ৪০. ১২) নারীদের কোথাও কোথাও ‘অশাস্ত্রা’ বলিলেও বহুস্থলে নারীদের শিক্ষাদীক্ষার কথা বলিয়াছেন। স্মৃতির যুগে, মনুর সময়ে নারীদের শিক্ষার অধিকার অনেকটা সংকুচিত দেখা যায়। মনু (৯.১৮) বলিয়াছেন, নারীদের আবার বেদমন্ত্র দিয়া কী হইবে—

নাস্তি স্ত্রীণাং ক্রিয়া মন্ত্রৈঃ

 বৈবাহিক বিধিই তাঁহাদের বৈদিক সংস্কার (২.৬৭)। যজ্ঞে নারীরা চালক হইতে পারেন না (৪. ২০৫.৬)। নারীরা যজ্ঞে আহুতি দিলে বা নারীদের দ্বারা যজ্ঞে আহুতি দেওয়াইলে নরকে পতিত হইতে হয় (১১.৩৭)। কিন্তু এখানে মনে রাখা উচিত, মনু (২. ২১৩-১৫) বহুস্থলে নারীদের চরিত্রকেও বিষম আক্রমণ করিয়াছেন। স্ত্রীদিগকে শারীর দণ্ড দিবার ব্যবস্থাও মনু দিয়াছেন (৮. ২৯৯-৩০০)। অথচ নারীদের প্রতি ভালো ব্যবহার ও নারীদের মহত্ত্বের কথাও মনুতে বহু স্থানে আছে।

 বেদের মন্ত্রে কেহ কেহ নারীদের অধিকার অস্বীকার করিলেও মনে রাখিতে হইবে বহু বেদমন্ত্র নারীদেরই রচিত। বৃহদ্দেবতায় উক্ত তালিকা পূর্বেই দেওয়া হইয়াছে, ঋগ্বেদেও দেখা যায় বহু নারী মন্ত্ররচনা করিয়াছেন।রোমশা (১. ১২৬), লোপামুদ্রা (১. ১৭৯), বিশ্ববারা (৫. ২৮), অপালা (৮. ৯১.৭), যমী (১০.১০), বসুত্রুজায়া (১০. ২৭-২৮), ঘোষা (১০. ৩৯), সূর্যা (১০.৮৫), উর্বশী (১০. ১৫), সরমা (১০. ১০৮), বাক্ (১০. ১২৫), ইন্দ্রাণী (১০. ১৪৫), ইন্দ্রজননী (১০. ১৫৩), বিবস্বৎকন্যা যমী (১০.১৫৪) শচী (১০. ১৫৯), সার্পরাজ্ঞী (১০. ১৮৯) ছাড়া আরও বহু নাম ঋগ্বেদ-সংহিতায় ও অন্যান্য বেদে পাওয়া যায়।

 উপনিষদেও মৈত্রেয়ী, গার্গী-বাচক্লবী প্রভৃতি ব্রহ্মবাদিনীর নাম পাওয়া যায়। পতঞ্‌চল কাপ্যের কন্যা গন্ধর্বগৃহীতা (বৃহদারণ্যক ৩.৩.১) ও উমা হৈমবতীর (কেন ২৫) কথা বলিয়া লাভ নাই। কারণ তাঁহারা সাধারণ বিধির বাহিরে। ব্রহ্মবাদিনী নারীরা বড় বড় সংসদে ও বিদ্বজ্জনের সভাতে যে যোগ দিতেন সে কথা নানা উপনিষদেই আছে।


  1. Prabhakar School and Popular Mimamsa