পাতা:প্রাচীন ভারতে নারী - ক্ষিতিমোহন সেন (১৯৫০).pdf/১৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১২৬
প্রাচীন ভারতে নারী

 স্ত্রীণামপি বীর্যবত্বদর্শনাৎ। তশ্মাৎ স্ত্রিয়ো ‘নিরিন্দ্রিয়া’ ইতি বক্তূং ন শক্যত ইতি ইন্দ্রিয়শব্দঃ সোমপর এব যুক্তঃ। পৃ ৪৫৯

 কাজেই নির্বীর্য বলিয়াই স্ত্রীগণের দায়াধিকার নাই ইহা বলা অসংগত। বীর্য না থাকিলে তখনকার দিনে ভূসম্পত্তি রক্ষা করা সম্ভব হইত না, ইহা ঠিক। কিন্তু এই মত যদি এখনো চালানো যায় তবে আমাদের দেশে এখন পুরুষদেরও অধিকার নিষিদ্ধ হয়। কারণ এখন আর এ দেশে পুরুষদেরই বা বীর্য কই?

 তবে আসল কথা, নিরিন্দ্রিয় অর্থে নির্বীর্য নহে। বরদরাজ ‘ইন্দ্রিয়ে’র অর্থ উদ্ধৃত করিয়া দেখাইতেছেন যে তাহাতে ‘সোমপীথঃ’ বা সোমপান বুঝায়—

‘ইন্দ্রিয়ং বৈ সোমপীথঃ’ ইতি ইন্দ্রিয়শব্দস্য সোমে দর্শনাৎ। পৃ ৪৫৯

 সোমপানের অধিকারও যজ্ঞবিশেষেই নারীর নাই, ইহাই বুঝিতে হইবে। তবে পূর্বে দেখানো গিয়াছে এককালে নারীরা সোমপানেরও অধিকারী ছিলেন।

 রামায়ণে দেখা যায়, কৌশল্যা ছিলেন দশরথের যজ্ঞাংশভাগিনী। কুন্তী বলেন, আমি বিধি অনুসারে সোমপান করিয়াছি—

পীতঃ সোমো যথাবিধি। মহাভারত, আশ্রমিক ১৭, ১৭

 যাহা হউক, যজ্ঞবিশেষে সোমপানাধিকার না থাকিলেই যে স্বামীর ধনে অধিকার থাকিবে না ইহা কোনো যুক্তিযুক্ত কথা নহে।

 ইন্দ্রিয় অর্থে বরদরাজ কেন যে সোম ধরিয়াছেন তাহার প্রমাণও তিনি দিয়াছেন। সোমার্থে ইন্দ্রিয়ের ব্যবহার আমরাও বহুস্থলে পাই। ঋগ্বেদে প্রথমমণ্ডলে ৮৪ সূক্তের প্রথম ঋকে ‘ইন্দ্রিয়ম’ অর্থে সায়ণ ‘সোমপানোৎপন্নম্ প্রভূতম্ সামর্থ্যম্’ ধরিয়াছেন। সায়ণ-মতে, ঋগ্বেদে ১. ১১১ দ্বিতীয়মন্ত্রে এবং ১. ১০৭. ২; ৫. ৩১.৩; ৬. ২৫. ৮ ঋকে ‘ইন্দ্রিয়’ অর্থ ধন ঐশ্বর্য। ঋগ্বেদে ৮. ৯৩. ২৭ ঋকে ইন্দ্রিয় অর্থ সায়ণ করেন ‘বীর্যবন্তং সোমম্’— অর্থ ধন ঐশ্বর্য। ঋগ্বেদে ৯. ২৩. ৫. ঋকে ‘ইন্দ্রিয়’ অর্থ ইন্দ্রিয়বর্দ্ধক রস (ইন্দ্রিয়বর্দ্ধকং রসম্) অর্থাৎ সোমরস। ১০. ৩৬. অষ্টম ঋকে, মূলেই আছে, ‘সুরশ্মিং সোমম্ ইন্দ্রিয়ং বীর্যং যমীমহি’। ১০. ১১৩ প্রথম ঋকে, মূলেই আছে ‘ইন্দ্রিয়ং পীত্বী সোমস্য’। ৮. ৩. ২০ ঋকে ‘সোম ইন্দ্রিয়ো রসঃ’—সায়ণ অর্থ করেন ‘ইন্দ্রিয়’, ‘ইন্দ্রেণ সেব্যো রসঃ’। ৯. ৮৬. ১০ ঋকে ‘ইন্দ্রিয়ো রসঃ’ অর্থে সায়ণ করেন, ‘ইন্দ্রেণ জুষ্ট ইন্দ্রস্য বর্ধকো বা রসঃ’। ৮. ১৩.২৭ ঋকে ইন্দ্রিয় অর্থে সায়ণ বলেন ‘বীর্যবন্তং সোমম্’। ১০. ৬৫, ১০ ঋকে ‘ইন্দ্রিয়ং সোমম্’ মূলেই আছে।