পাতা:প্রাচীন ভারতে নারী - ক্ষিতিমোহন সেন (১৯৫০).pdf/১৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
নারীদের উত্তরাধিকার বিষয়ে ব্যবহার নির্ণয়
১২৭

সায়ণ অর্থ করেন, ইন্দ্রিয়ং ‘ইন্দ্রজুষ্টম্ সোমম্’। ঋগ্বেদে ৯. ১০৭. ২৫; ৯. ১১৩. ১ ঋকেও তাই। অথর্ববেদে ১৯. ২৭.১ ঋকে ইন্দ্রিয় অর্থ সায়ণ করেন ইন্দ্রসৃষ্ট বা ‘ইন্দ্রজুষ্ট’। St. Petersburg অভিধানও ইন্দ্রিয় অর্থে প্রথমেই রস ও সোম ধরিয়াছেন। তাহার পরে আসিতেছে অন্য সব অর্থ।

 ‘ইন্দ্রিয়’শব্দের আসল এবং আদি অর্থ ই হইল যাহা ‘ইন্দ্রযোগ্য’, ‘ইন্দ্রজুষ্ট’ ‘ইন্দ্রবিষয়ক’। সোমরসই ইন্দ্রের প্রিয়। শক্তি ও বীর্যও ইন্দ্রের প্রিয়। আমাদের তথাকথিত ইন্দ্রিয়গুলিই সেই শক্তি ও বীর্যপ্রকাশের উপায়। সেই হিসাবে বরদরাজ ‘ইন্দ্রিয়’ শব্দের অর্থ করিতে কষ্টকল্পনামাত্র করেন নাই। তাঁহার গৃহীত অর্থ ই আদিম অর্থ এবং তাহা সর্বভাবেই শ্রুতিসংগত। তাহা না হইলে তাঁহার মত লোক এইরূপ অর্থ স্বীকার করিতেন না।

 তবু যে বিশেষ বিশেষ শাস্ত্রে বিশেষ বিশেষ স্থলে দায়াধিকারে নারীদের অধিকার নাই, এই কথা বলা হইয়াছে, সেখানেও বিশেষ বিশেষ কারণবশত সেই সেই স্থলে অধিকার নিষিদ্ধ হইয়াছে— ইহাই বুঝিতে হইবে (পৃ ৪৫৯)। তাই বরদরাজের চরম সিদ্ধান্ত হইল, সুশীলা পত্নীর সর্বধনগ্রহণ যুক্তিযুক্ত—

সাধুবৃত্তযুক্তায়াঃ পত্ন্যাঃ সকলগ্রহণং যুক্তমেব। পৃ ৪৬১

এই কথাটি আরও স্পষ্টভাবে দেখানো হইয়াছে ঐ গ্রন্থের শেষে স্বতন্ত্র আরএকটি অনুবন্ধে (পৃ ৫৩৭)। সেখানে বরদারাজ-উক্ত শাস্ত্রসিদ্ধ রীতিতে রিক্‌থগ্রাহীদের অর্থাৎ দায়াধিকারীদের প্রাধান্য অনুসারে পর-পর ক্রম দেখানো হইয়াছে: ১ ঔরসাদিপুত্র, ২ পত্নী, ৩ দুহিতা, ৪ অনূঢ়া কন্যা, ৫ দৌহিত্র, ৬ মাতা, ৭ পিতা, ৮ সহোদর, ৯ তৎপুত্র, ১০ ভিন্নোদর ভ্রাতা, ১১ তৎপুত্র, ১২ সমানোদক জ্ঞাতি, ১৩ সগোত্র, ১৪ আত্মবান্ধব, ১৫ পিতৃবান্ধব, ১৬ মাতৃবান্ধব, ১৭ শিষ্য, ১৮ সব্রহ্মচারী, ১৯ শ্রোত্রিয়।

 ব্যবহার নির্ণয়ে (পৃ ৪৫০) যাজ্ঞবল্ক্য রিক্‌থগ্রাহীদের আর-একটি ক্রম দিয়াছেন। সেখানেও দেখা যায়—‘পত্নী দুহিতরশ্চৈব পিতরো ভ্রাতরস্তথা’ ইত্যাদি।

 সর্ব ভাবেই দেখা গেল, ঔরসপুত্র না থাকিলে প্রথম দাবিই হইল পত্নীর। আর পত্নী স্বামীরই অংশ বলিয়া তাঁহার দাবিকে ‘উত্তরা’ধিকার না বলিয়া স্বামীর অধিকারেরই অনুবৃত্তি (বা continuity) বলা যায়। পতির বিত্তে পত্নীর ‘উত্তর’-অধিকারের প্রশ্নই ওঠে না।